২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৪:৩৭/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়া পৌর কমিশনার আরাফাত উল্লাহ জেল হাজতে

     

আদালত প্রতিবেদক
 বড় ভাইয়ের চাকুরী করে বেতন নিয়ে এবং ওই আপন বড় ভাইয়ের টাকা আত্মসাত করে নির্মিত ভবন দখলের অভিযোগ উঠছে সাতকানিয়া পৌর কমিশনার আরাফাত উল্লাহ বিরুদ্ধে। আজ ১৪ মার্চ এসব অভিযোগের দায়ে অবশেষে জেল হাজতে যেতে হয় ওই কমিশনারকে। ওই কমিশনারের আপন বড় ভাই মোহাম্মদ জহির উল্লাহ ৪১ লাখ ১১ হাজারেরও অধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে কমিশনার আরাফাত উল্লাহ’র অবশেষে ঠাঁই হলো চট্টগ্রাম কারাগরে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, সাতকানিয়ার ভোয়ালিয়া পাড়া গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুল গফুর চৌধুরীর ছেলে পৌর কমিশনার আরাফাতুল্লাহ (৪৪) । আরাফাত উল্লাহর আপন বড় ভাই হলেন প্রবাসী মোহাম্মদ জহির উল্লাহ (৫০)। গত ২০১৪ সালের শেষের দিকে মোহাম্মদ জহির উল্লাহ তার ক্রয়কৃত মালিকানাধীন জায়গা উপর ৫ (পাঁচ) তলা বিশিষ্ট দালান নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। মোহাম্মদ জহির উল্লাহ প্রবাসে থাকার কারণে তার আপন ছোট ভাই মোঃ আরাফাত উল্লাহ’র আর্থিক অসচ্ছলতার কথা চিন্তা করে ৫ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ দেখাশুনা ও কাজ পরিচালনা করার জন্য মাসিক ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা বেতন ধার্য করে চাকুরী দেন। গত ৮ নভেম্বর ’১৪ হতে ২৭ ফেব্রুয়ারী ’২২ পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৫ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর উন্নয়ন কাজের ব্যয় বাবদ সর্বমোট ২,০১,৬৫,৭৬৫/- (দুই কোটি একলক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার সাতশত পঁয়ষট্টি) টাকা মোহাম্মদ জহির উল্লাহ’র রক্ষিত হিসেবে খাতায় স্বাক্ষরপূর্বক কমিশনার মোঃ আরাফাত উল্লাহ গ্রহণ করে। সূত্র মতে, মোহাম্মদ জহির উল্লাহর সরল বিশ্বাসে সহোদর ভাই হিসেবে আরাফাত উল্লাহ চাহিদামত এই টাকা দফায় দফায় প্রদান করে। জহির উল্লাহ বিশ্বাস ও ধারনা ছিল যে, সমুদয় প্রদত্ত টাকা নির্মিত বিল্ডিং এর উন্নয়ন কাজে ব্যয় করবে ছোট ভাই আরাফাত উল্লাহ। মোহাম্মদ জহির উল্লাহ প্রবাস থেকে দেশে আসার পর মোঃ আরাফাত উল্লাহ’র নিকট হিসাব দাবী করলে আরাফাত উল্লাহ নির্মাণাধীন বিল্ডিং এর খরচ বাবদ সর্বমোট ১,৮০,৪৭,২৯১/- (এক কোটি আশি লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার দুইশত একানব্বই) টাকার একটি হিসাব দেন। কমিশনার মোঃ আরাফাত উল্লাহ তার বড় ভাই প্রবাসী জহির উল্লাহর সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে তার সরলতার সুযোগে প্রায় ২১,১৮,৪৭৪/- (একুশ লক্ষ আঠারো হাজার চারশত চুয়াত্তর) টাকা হিসাবে গড়মিল দেখিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেন।
জানা গেছে, মোহাম্মদ জহির উল্লাহ’র মালিকাধীন এম. জহির উল্লাহ ভবন এর ১৯ মাসের ভাড়া বাবদ সর্বমোট ৯,১২,০০০/- (নয় লক্ষ বার হাজার) টাকা এবং তার রামপুরাস্থ বিল্ডিং এর ভাড়া বাবদ সর্বমোট ২,৩৪,০০০/- (দুই লক্ষ চৌত্রিশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও কমিশনার মোঃ আরাফাত উল্লাহ ডেকোরেশন ব্যবসার নামে মোহাম্মদ জহির উল্লাহ নিকট হতে ২,৫০,০০০/- (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নগদ গ্রহণ করেন। ৫ তলা বিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবনের রাজমিস্ত্রি কন্ট্রাক্টর ১। মোঃ নাছির উদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির খরচ বাবদ বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৯৩,০০০/- (তিরানব্বই হাজার) টাকা ২। গ্রীল মিস্ত্রি কন্ট্রাক্টর মোঃ মোর্শেদ আলমকে গ্রীল সাপ্লাই বাবদ বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৪,৫০,০০০/- (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও ৩। ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কন্ট্রাক্টর মোঃ জাফর’কে ইলেকট্রিক ও প্লাম্বিং কাজ বাবদ বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৫৪,০০০/- (চুয়ান্ন হাজার) টাকা অতিরিক্ত হিসাবে ডাবল এন্টি করে সর্বমোট ৪১,১১,৬৭৪/- (একচল্লিশ লক্ষ এগার হাজার ছয়শত চুয়াত্তর) টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদ জহির উল্লাহ গত ১৫ আগস্ট ’২২ সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় কমিশনার মোঃ আরাফাত উল্লাহ বসত বাড়ীতে গিয়ে উপরোক্ত পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে কমিশনার মোঃ আরাফাত উল্লাহ প্রবাসী বড় ভাইয়ের উপর এর উপর চড়াও হন এবং হুমকি ধমকি প্রদান করে যাবতীয় লেনদেন অস্বীকার করলে জহির উল্লাহ বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বিজ্ঞ আদালত আজ ১৪ মার্চ ’২৩ কমিশনার আরাফাত উল্লাহকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply