২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:৫৩/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৪:৫৩ অপরাহ্ণ

নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা কি সামনেই ?

     

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। সম্প্রতি ১৫টির দেশের ওপর চালানো সমীক্ষায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তবে ওই সমীক্ষা অনুযায়ী এই যুদ্ধ বাকি বিশ্বের সঙ্গে পশ্চিমাদের দূরত্ব বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে ভবিষ্যতের বিশ্বকে দুই মেরুতে দেখছেন অনেকেই। একটা নতুন বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (ইসিএফআর) নামের থিংকট্যাঙ্ক পরিচালিত সমীক্ষায় ফ্রান্স, জার্মানি এবং পোল্যান্ডসহ ৯টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র এবং ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ভারত ও তুরস্কে জনগণের মত জানতে চাওয়া হয়। সমীক্ষা প্রতিবেদনের লেখকরা বলছেন, গণতন্ত্র ও ক্ষমতার বৈশ্বিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভৌগোলিক পার্থক্য রয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসন হতে পারে নতুন ‘পশ্চিমা পরবর্তী’ এক নতুন বিশ^ব্যবস্থা উত্থানের ঐতিহাসিক মোড়। থিংকট্যাঙ্কটির পরিচালক এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক মার্ক লিওনার্ড বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রচলিত মতের বিরুদ্ধ মত হলো একই সঙ্গে পশ্চিমারা আগের চেয়ে অনেক বেশি একত্রিত এবং তারা বিশ্বে কম প্রভাবশালী।’
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইউরোপিয়ান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক টিমোথি গার্টন অ্যাশও এ গবেষণায় কাজ করেছেন। ফলাফলগুলোকে তিনি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, জরিপে দেখা গেছে, যুদ্ধটি আটলান্টিক ছাড়িয়ে পশ্চিমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং তারা দিশা খুঁজে পেয়েছে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হলো, পশ্চিমারা যুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে চীন, ভারত ও তুরস্কের মতো শক্তিকে পাশে আনতে পারেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে স্পষ্ট শিক্ষণীয় বিষয় হলো পশ্চিমাদের এমন একটা আখ্যান প্রয়োজন যা সত্যিকার অর্থে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোকে কাছে টানতে পারবে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, গত বছর রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমাদের মনোভাব কঠোর হয়েছে। ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ (৭৭ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্রে (৭১ শতাংশ) এবং ৯টি ইইউ রাষ্ট্রে (৬৫ শতাংশ) মানুষ রাশিয়াকে ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১৪, ৯টি ইইউ রাষ্ট্রে ১৫ এবং ব্রিটেনে ৮ শতাংশ মানুষ রাশিয়াকে ‘বন্ধু’ বিবেচনা করেন। মস্কোকে তারা ‘স্বার্থপর’ ভাবে না, মনে করেন প্রয়োজনীয় অংশীদার। পশ্চিমা উত্তরদাতারা রাশিয়াকে বর্ণনা করার সময় সমান নেতিবাচক ছিলেন।
‘ইউক্রেন যুদ্ধকে আপনারা কীভাবে দেখেন, এমন সম্ভাব্য ১০ উত্তরের মধ্য থেকে প্রতিজনকে দুটি বেছে নিতে বলা হয়। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ শতাংশ বেছে নিয়েছেন রাশিয়া ‘আক্রমণাত্মক’, ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচন করেছেন ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, মার্কিন গণতন্ত্রকে রক্ষার তাগিদ থেকে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা সমর্থন দিচ্ছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। তবে যুক্তরাজ্যে (৪৪ শতাংশ) ও ইইউর ৯টি দেশে (৪৫ শতাংশ) বলছেন ইউক্রেনকে সমর্থন করার অর্থ হচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তার প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা। ইউরোপের (ব্রিটেনে ৪৪ শতাংশ, ইইউর ৯ দেশে ৩৮ শতাংশ) মানুষ মনে করেন, যে করেই হোক ইউক্রেনকে রাশিয়ার দখলকৃত সব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা উচিত।
জরিপে প্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া আলাদা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, চীন (৭৬ শতাংশ), ভারত (৭৭ শতাংশ) এবং তুরস্কের (৭৩ শতাংশ) মানুষ মনে করেন রাশিয়া এখনও যুদ্ধে আগের মতোই শক্তিশালী।
মস্কোকে তাদের দেশের কৌশলগত ‘মিত্র’ এবং ‘প্রয়োজনীয় অংশীদার’ হিসেবে মনে করেন যথাক্রমে (৭৯, ৭৯, ৬৯ শতাংশ)। একইভাবে, চীনে ৪১ শতাংশ, তুরস্কে ৪৮ শতাংশ এবং ভারতে ৫৪ শতাংশ মানুষ চান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ শেষ হোক। প্রয়োজনে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকুক। তিনটি দেশে যথাক্রমে মাত্র ২৩ শতাংশ, ২৭ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ বলেছেন ইউক্রেনের উচিত দখলকৃত সব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা, প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের মাধ্যমে।
পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য নিয়েও দেশ তিনটির মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া চীন ও তুরস্কের এক-চতুর্থাংশেরও কম এবং রাশিয়ায় মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন পশ্চিমারা ইউক্রেনকে সমর্থন করছে নিজের নিরাপত্তা বা গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার জন্য।
রাশিয়ার উত্তরদাতাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪ শতাংশ) যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রতিপক্ষ’, ইইউকে ৫১ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যকে (৪৬ শতাংশ) ‘প্রতিপক্ষ’ মনে করেন। চীনের উত্তরদাতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ৪৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যকে ৪০ শতাংশ এবং ইইউকে ৩৪ শতাংশ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। পশ্চিমের বাইরের অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আগামী দশকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন উদারপন্থিদের বৈশ্বিক প্রভাব হ্রাস পাবে। একাধিকের মধ্যে পশ্চিমারা একটি বৈশ্বিক শক্তি থাকবে। রাশিয়ার মাত্র ৭ শতাংশ এবং চীনের ৬ শতাংশের পূর্বাভাস হলো এখন থেকে দশ বছর পর তাদের দেশ প্রভাব বিস্তার করবে।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই (ব্রিটেনে ২৯ শতাংশ, ইইউর ৯ দেশে ২৮ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ শতাংশ) যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নেতৃত্বে বিশ্বকে নতুন দুটি মেরুতে দেখার পূর্বাভাস দিয়েছেন। তবে উদীয়মান শক্তির দেশগুলোতে ভবিষ্যৎকে আরও বহুমাত্রিক মেরুকৃত বিশ্ব হিসেবে দেখার ইঙ্গিত রয়েছে। সুত্র দ্য গার্ডিয়ান ও সময়ের আলো

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply