২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৩:৪০/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ

লাগামহীন দ্রব্য মূল্যেরবাজারে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি

     

মাহমুদুল হক আনসারী
দ্রব্য মূল্যের বাজার অনিয়ন্ত্রীত। বাজারের কোনো পন্যের মূল্য স্থীতিশীল নেই। সব ধরনের পণ্য মূল্য নাগালের বাইরে। জনগণ খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকা অনেকটা কষ্টকর হচ্ছে। আয় ও ব্যয় কোনো ভাবেই হিসেব মিলাতে পারছে না জনগণ। শিল্পপতি ব্যবসায়ী আর সরকারি চাকরিজীবিরা ভালো আছে বলে মনে হয়। মধ্যভিত্ত পরিবার নিম্নভিত্ত মধ্যম আয়ের মানুষগুলো মোটেও ভালো নেই। নি¤œভিত্ত মানুষ, দিনমজুর রোজগারকারি জনগণ বাজারে গেলে পরিস্থিতি দেখে হিমশিম এর মধ্যে পড়ে যায়। চাউল কিনলে ডাল কিনতে পারে না । তেল কিনলে মাংস কিনতে পারে না। সাধারণ মানুষের কষ্টের জীবন বাজারে গেলে বুঝা যায়।
বাজার পরিস্থিতি মোটেও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বাজার তদারকির কথা বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও যথাযথ ভাবে তা করা হয় না। এক কথায় অনিয়ন্ত্রিত বাজার । বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেটি সারকুলার দেয় সেটা বাজারে বাস্তবায়ন হয় না। পণ্য মূল্যে নির্ধারণ করলে ও তা পাইকারি ও খুচরা দোকানে সেটা বাস্তবায়ন দেখা যায় না। কে কার কথা শুনে । মন্ত্রণালয় সারকুলার দেয় ব্যাবসায়ীরা তাদের খুশি মতো ব্যবসা করে। জনগণ হরহামিশায় ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মানহীন পণ্য উচ্চ মূল্যে কিনতে হয়।
বাজারের অবস্থা দেখলে মনে হয়। যেন কেউ দেখার নেই। জনগণকে খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকার জন্য বাজার করতে হয়। কিন্তু জনগণ স্বাধীন ভাবে দেখে শুনে দাম দর করে বাজার করতে পারে না। বাজারে ক্রেতার কোনো স্বাধীনতা নেই । যেমন খুশি তেমন ভাবেই চলছে বাজার । শুধু একটি কথা দোকানদারদের মূখে শুনা যায় , দাম বেড়ে গেছে । আমরা কী করব , এই কর সেই কর সব কিছু দিতে দিতে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে । ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করতে করতে আমরা ব্যবসায়ীরা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিল , গ্যাস বিল ওয়াসার বিল সারা বছর বেড়েই চলছে । এই সবকিছু হিসেব করে ব্যবসায়ীরা বলে বাজার এখনো জনগণের নাগালের মধ্যে আছে। আমরা না পারছি রাখতে না পারছি ছেড়ে দিতে । আমরা ও মানুষ আমাদের ও সংসার পরিবার পরিজন আছে । আমাদের কথা কে ভাবছে ।
এর মধ্যে ঔষুধের মূল্য বৃদ্ধি বাজারে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে । ১০ টাকার ঔষুধের মূল্য পনের টাকা । ৫৫ টাকা ১০টি ট্যাবলেটের মূল্য ৭৫ টাকা । এভাবে সবধরনের রোগের ঔষুধের মূল্য পারমেসি গুলো বাড়িয়ে নিচ্ছে । রোগের জন্য ওষুধ খেতেই তো হয় । জটিল কঠিন রোগের মানুষের জন্য ডাক্তারের চিকিৎসা মতো ওষুধ খাওয়ার বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু ইতিমধ্যেই কোনো কোনো ওষুধ কেত্র বিশেষে দ্বিগুণ পর্যন্ত করা হয়েছে । যা মারাত্বক অন্যায় । প্রতিবেদনে প্রকাশ স্বাস্থ্যসেবায়বহুল ভাবে ব্যবহার যোগ্য ৫৩টি ব্যান্ডেড ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে । প্যারাসিটেমল জাতীয় ওষুধের দাম শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। এভাবে প্রায় সবধরনের ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ।
একথা সত্য যে ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। রপ্তানি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে । আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের একশ একান্ন টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হয় বলে জানা যায় । এটা দেশের জন্য মঙ্গল জনক দিক । এবং ইতিবাচক একটি সংবাদ । দুঃখের সংবাদ হচ্ছে ঢাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চলের ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করার সংবাদ ও আছে যার রোগীর জীবন ঝুঁকিকে মৃত্যুর মূখে টেলে দেয় । এবারের পূর্বেও ২৩ প্রকারের ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এবার বাড়ানো হয়েছে ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম । এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বাজার তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণের যেন কেউ নেই। ফলে রোগাক্রান্ত মানুষ গুলো জটিল কঠিন রোগ ব্যাধির ওষুধ খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবে । এটা কোনো অবস্থাতেই ভালো সংবাদ নয় । যেখানেই বাংলাদেশের ওষুধ বিদেশের বাজারে রপ্তানি করে বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, সেখানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ওষুধ কিনে খাওয়ার সমস্যায় ভোগবে সেটা কোনো ভাবেই গ্রহণ যোগ্য কথা নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ওষুধ প্রশাসনকে অবশ্যই সাধারণ জনগণের কথা মাথায় রেখে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে হবে । তা না হলে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি জনগণ নামতে পারেনা।
সাধারণ মানুষের আয় ইনকামের চিন্তা করে অপরাপর প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের মতো ওষুধের বাজার মূল্য অবশ্যই জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে । সরকারকে অনুরোধ করব আম জনগণের চিকিংসা এবং নায্য মূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও প্রাপ্তিতে যেন জনগণের কথা চিন্তা করা হয়। সাথে বেজাল ও মানহীন মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য সূখের মূল। সুন্দর জাতি সুস্থ জাতি দেশের সম্পদ এ প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জনমতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিহত করতে হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply