২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:৪৫/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ

নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিত, শিক্ষকের ওপর হামলা

     

মাহমুদুল হক আনসারী
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি অগ্রগতি চিন্তা করা যায়না। শিক্ষার মাধ্যমে জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে সে জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছে যায়। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে পরিবার পর্যন্ত আলো ছড়ানো সম্ভব। আলোকিত সমাজ তৈরি করা যায়। আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করা সম্ভব। সমাজকে আলোকিত করার জন্য আলোকিত মানুষের প্রয়োজন। আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই। শিক্ষা মানব সমাজের অপরিহার্য একটি বিষয়। শিক্ষার সাথে শিক্ষক ছাত্র অভিভাবক সম্পৃক্ত। এই তিন শ্রেণীর মানুষকে নিয়েই শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হয়। দুনিয়ার প্রতিটি স্বাধীন দেশেই মানব সমাজে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এদেশে শিক্ষা বিস্তারেরজন্য স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দিন দিন এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও বছরে বছরে বাড়ছে। শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। মানুষকে শিক্ষিত করার জন্য নিজ নিজ রাষ্ট্র হাজার কোটি টাকা বাজেট করে খরচ করছে।
ছাত্র-শিক্ষক স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নানা প্রকারের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই সেটি হচ্ছে মানুষ এবং সমাজকে আলোকিত করা। শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আদর্শ মহল্লা পরিবার প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। এসব উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তর সহ নানা ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একমাত্র আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। পশুত্ব চরিত্র থেকে মানুষকে আদর্শ মানব তৈরির জন্য এ শিক্ষা প্রকল্প। শুধু মাত্র পোশাক আশাকেই একজন মানুষ নয়। মানুষের নৈতিকতা উন্নতি না হলে শুধুমাত্র পুথিগত শিক্ষা দিয়ে সমাজকে আলোকিত করা মোটেই সম্ভব নয়।
যতই শিক্ষা , শিক্ষক, ছাত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই নৈতিকতার বিপর্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অতিসম্প্রতি ২৫ জুন আশুলিয়ার চিত্র সাই হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে দিন দুপুরে হামলা চালিয়ে একজন শিক্ষককে পিঠিয়ে হত্যা করেছে। ঐ শিক্ষকের নাম উৎপল কুমার সরকার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সোমবার মারা যান। শুধু এটি নয় এমন ধরনের হামলার শিকার বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অহরহ আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষকের ওপর হামলা নৈতিক শিক্ষার অধঃপতনেরই প্রমাণ। একজন শিক্ষক আদর্শ সমাজ গঠনের কারিগর। একজন শিক্ষক তার সর্বশক্তি দিয়ে একটি ছাত্রকে আদর্শ মানুষ হিসেবে পুথিগত শিক্ষা ছাড়াও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি করে থাকে।
আজকের পৃথিবী মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে । মানুষ সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত একে অপরকে দেখে কথা বলতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে পৃথিবীর আরেক প্রান্ত পর্যন্ত পৌছতে পারে। বিজ্ঞানের উন্নতি মানুষের চিন্তা শক্তিকে বহু উপরে তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ তার চিন্তা শক্তি বাস্তবায়ন করতে পারছে। তথ্য প্রযুক্তি মানুষকে দিন দিন আরো আরো এগিয়ে নিচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির কারণে শিক্ষাই ব্যাপক পরিবর্তন এবং উন্নতি হয়েছে। এতকিছুর পরেও একটি বিষয় শিক্ষায় অনুপস্থিত। আর সেটি হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা । নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ছাড়া কখনো শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবেনা। আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবেনা। পুথিগত শিক্ষা অর্জন করবে , সার্টিফিকেট প্রাপ্তি হবে , উচ্চডিগ্রি পাবে । কিন্তু আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যে শিক্ষাটি প্রয়োজন সেটি যতক্ষণ না , সমাজে প্রতিষ্ঠা হবেনা সে পর্যন্ত শিক্ষাই শৃংখলা আনুগত্য পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রতিষ্ঠ হবেনা। যে কারণে আজকের পৃথিবীর নানা দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শিক্ষকের ওপর হামলা লাঞ্চনা সর্বোপরি হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হচ্ছে। শিক্ষাই নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে শিক্ষার অধঃপতনের কি কি কারণ। শিক্ষিত মানুষ বাড়ছে কিন্তু সমাজ আলোকিত হচ্ছেনা। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পাচ্ছে তবুও সমাজে শ্রদ্ধাবোধ আনুগত্য মিলছেনা। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হচ্ছেনা। মানুষকে ঠকানো কমছেনা। অশিক্ষিত মানুষ যেটুকু পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে চলছে তার চেয়ে অধিক পরিমাণ সমাজকে নানাভাবে নষ্ট করছে একশ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ। খাদ্যে ভেজাল থেকে শুরু করে সমাজের নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষিত মানুষরা। অশিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যে এ ধরনের প্রতারণার চিন্তা চেতনা খুবই কম। তারা অতীব সহজ এবং সরল। সমাজকে ধোকা দেয়া মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে কষ্ট দেয়া অশিক্ষিত মানুষরা বুঝে না। এক শ্রেণীর শিক্ষিত লোভী মানুষগুলো সমাজকে নানাভাবে নষ্ট করার পেছনে তৎপর।
এসবের মূল কারণ নৈতিক শিক্ষা। ভাবতে হবে নৈতিক শিক্ষা কি ? কেন নৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে? এসব বিষয়ে এখনি সিদ্ধান্তে না পৌছলে শিক্ষার মূল টার্গেট পূরণ হবেনা। শিক্ষার মূল টার্গেট ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা। পরিবারের মধ্যে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা। পরিবারের অভিভাবক থেকে শুরু করে সকলের মধ্যে নৈতিক গুণাবলি তৈরি করতে হবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply