২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৪৪/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, যানজট মুক্ত নগর জীবন চাই

     

মাহমুদুল হক আনসারী
চন্দ্রবছর ঘুরে এসেছে মাহে রমজানুল মোবারাক। শুভেচ্ছা স্বাগত মাহে রমজানুল মোবারাক। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫ ও ১৮৩)।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদ নিয়ে এল মাহে রমজান। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের নিয়তে রমজানে রোজা পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের আশায় রমজানে রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, প্রথম খন্ড , হাদিস: ৩৭, ৩৬ ও ৩৪)।
রজব ও শাবান দুই মাসব্যাপী আমরা দোয়া করে আসছি, ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান আমাদের নসিব করুন!’ এই প্রার্থনা কবুল হলো। তাই সবাই বলছি ‘আহলান সাহলান মাহে রমজান, স্বাগত রমজান মাস’।
‘সাওম’ অর্থ বিরত থাকা; এর বহুবচন হলো ‘সিয়াম’। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সাওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের উদ্দেশ্যে পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণরেখা হতে উষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।
প্রাপ্তবয়স্ক তথা সাবালক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সুস্থ সব নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক বা ফরজ ইবাদত। ঋতুমতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিরা এই রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি, যাঁদের আবার সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তাঁরা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন। জাকাত গ্রহণের উপযুক্তদেরই এই ফিদিয়া প্রদান করা যাবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, খন্ড: ৩, হাদিস: ১,৭৭৫)।
রমজান মাস ইবাদতের বিশেষ মৌসুম। রমজান মাসে একটি ফরজ, পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করা। রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি ওয়াজিব, যথা: সদকাতুল ফিতর প্রদান করা এবং ঈদের নামাজ আদায় করা। রমজানের বিশেষ সুন্নাতগুলো হলো রজব মাস ও শাবান মাস বরকতের জন্য এবং রমজানপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করতে থাকা; রজব ও শাবান মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা, রজব ও শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায় করা, শাবান মাসের চাঁদের তারিখের হিসাব রাখা; রমজানের চাঁদ দেখা; সাহ্রি খাওয়া, তাহাজ্জত নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করা, কোরআন কারিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা এবং ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।
তারাবিহ নামাজ রমজানের বিশেষ আমল। পুরুষদের তারাবিহর নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করা সুন্নাত। ওজরের কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভবপর না হলে এবং জামাত করা না গেলে তখন একা পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুরূপ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজও বিশেষ অবস্থায় একাকী আদায় করা যাবে। এতেও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে।
রমজানুল মোবারাক বান্দার গুনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে বিরাট এক নেয়ামত। এ মাসে হেলায় অবহেলায় সময় নষ্ট না করে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে নিমজ্জিত থাকা ঈমানদার বান্দার কাজ। যতবেশি সম্ভব নফল নামাজ , কোরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ ইত্যাদি পাঠের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা অতীব জরুরী। রহমতের মাস হিসেবে এ মাসে সৃষ্টির অপরাপর জীবের প্রতি ভালবাসা ¯েœহ আন্তরিকতা দেখানো উচিত। মানুষ যেন নির্বিঘেœ সৃষ্টিকর্তার হুকুম পালনে ইবাদত বন্দেগী করতে পারে সে পরিবেশ তৈরি করা দরকার। রমজানের রোজার সাথে সম্পৃক্ত যেসব উপকরণ রয়েছে, সেসব দ্রব্য মানুষ যেনো সহজলভ্যভাবে ভোগ করতে পারে তা ব্যবস্থা করা। অহেতুক অন্যায়ভাবে , মওজুদদারীর মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করা। বাজারমূল্যকে রোজাদার ও অন্যান্য সকল গোত্রের মানুষের জন্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা।
রমজান মাসের ইবাদত বন্দেগী নির্বিঘেœ পালন করার জন্য বিদ্যুতের লোডশেডিং বন্ধ করতে হবে। সেহেরী , ইফতার , তারাবী এসব সময়ে অবশ্যই বিদ্যুত , পানি , নিত্যপ্রয়োজনীয় জনগণের সাহায্যকারী সব ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা নির্বিঘœ ও নিশ্চিত করতে হবে। দেশের শহর গ্রামের সবগুলো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে রমজানুল মোবারাকের সম্মানার্থে সব সেবা প্রতিষ্ঠানকে সচল নির্বিঘœ রাখতে হবে। কোনো অবস্থায় লোড শেডিং , ইফতার সেহেরীর সময় বিদ্যুতের আসা যাওয়া বন্ধ করতে হবে। অফিস টাইমে রাস্তার যানজট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ঘোষণা এসেছে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষার্থী শিক্ষক-কর্মচারী যথাসময়ে গন্তব্য স্থানে যাওয়া আসার সুশৃংখল ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীকে রাস্তার যানজট নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। রাস্তার দুপাশে স্টফিস করে রাখা সব ধরনের পরিবহণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তার পাশে কোন অবস্থায় যানবাহনকে দাড় করিয়ে রাখা যাবেনা। স্টফিস ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রমজান মাসে সব ধরনের পেশার মানুষের জন্য বাজারমূল্য অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। সব পেশা শ্রেণীর মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। টিসিবিকে শহর নগর গ্রামে আরো জোরদার করতে হবে। রমজানের ফজিলত বরকত মাগফিরাত নাজাত প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সকলকে একযোগে কাজ করা দরকার।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply