১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:২২/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৭:২২ অপরাহ্ণ

ইসহাক মিয়ার জীবন বৃত্তান্ত

     

আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া, পিতা-মরহুম জনাব আলী, মাতা-মরহুমা তামিজা খাতুন, জন্ম-০১ মে ১৯৩২ খ্রি., মৃত্যু-২৪ জুলাই ২০১৭ খ্রি. সোমবার, বেলা ১১.৪০টা, স্থায়ী ঠিকানা-১৪৭২,হাজী পাড়া, উত্তর আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। ধর্ম-ইসলাম, বর্ণ-সুন্নী, তাঁর ছেলে-৩ জন, মেয়ে-৭ জন,স্ত্রী-মুসলিমা বেগম।

সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচিতি  ১৯৫৪ খ্রি. পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগে যোগদান, ১৯৫৬ খ্রি. আগ্রাবাদে কাউন্সিলর নির্বাচিত, ১৯৬২ খ্রি. আগ্রাবদ ওয়ার্ডে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার নির্বাচিত হন, ১৯৬৪ খ্রি. চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অধীনে দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ১৯৬৬ খ্রি. জননেতা এম এ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীর সাথে ৬ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন, ১৯৭০ খ্রি. পুর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকায় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এমপি নির্বাচিত হন, ১৯৭১ খ্রি. মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, ১৯৭২ খ্রি. মহান জাতীয় সংসদে ১৯৭০ খ্রি. নির্বাচিত এমপি হিসেবে যোগদান করেন এবং চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিযুক্ত হন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন সুইপিং ও নিমজ্জিত জাহাজ উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করন এবং বন্দর চালু করার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন, এসময় তিনি চটগ্রাম সমাজ কল্যান ও শিশু কল্যান পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন, চট্টগ্রাম শহর রেশনশপ বরাদ্ধ কমিটিরও চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রদান মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৫ খ্রি. ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার পর হত্যার প্রতিবাদে জনমত সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত ছিলেন, ১৯৭৮ খ্রি. অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, ১৯৮৬ সনে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে বাংলদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তৎকালিন ডেপুটি স্পিকার ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ব্যারিষ্টার সুলতান আহমদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন , ১৯৯১ খ্রি. অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকায় বাংলদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। জনাব মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া রাজনৈতিক কারনে ১৯৬৫ খ্রি. থেকে গ্রেফতার,মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত সহ বিভিন্নভাবে নিগৃহিত হন এবং ১৯৮৭ খ্রি. ৬ মাস কারাভোগ করেন। তিনি চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগকে জেলার মর্যাদা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে প্রভাবিত করেন। চট্টগ্রাম শহর আওয়ামীলীগ এর সুচনালগ্ন থেকে তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের নির্বাহী কমিটিতে সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন পদে অধিষ্টিত ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পদে আসিন ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে ১৯৭১খ্রি. পাক হানাদার ও দখলদার বাহিনী তার পৈত্রিক ভিটায় অত্যাচার চালায় এবং নিকট আত্মীয় স্বজনের উপর নির্যাতন করে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৫২ খ্রি. মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলেন, ১৯৫৪ খ্রি. অনুষ্ঠিত যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ভুমিকা রাখেন এবং ১৯৫৮ খ্রি. আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ খ্রি. শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন, ১৯৬৬ খ্রি. বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলনে কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এছাড়াও লাগাতারভাবে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, ১৯৬৮-৬৯ খ্রি. চলমান গণআন্দোলন এবং গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয় ছিলেন, ১৯৭০ খ্রি. এর নির্বাচনে প্রার্থী এবং ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক, ১৯৭৫ খ্রি. বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ, ১৯৭৯ সনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ১৯৮৩ খ্রি. সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন, ১৯৮৬ খ্রি. নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন, ১৯৯০ এর গন আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন, ১৯৯৬ খ্রি. নির্বাচনে সক্রিয় ভুমিকা পালন, ১৯৯৬ ও ২০০১ এর নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন, ২০০৭ এর ১/১১ এর সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে জনমত সৃষ্টি, বন্দী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন, ২০০৮ ও ২০১৪ খ্রি. অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা সহ প্রার্থীকে জয়ী করার যাবতীয় কলা কৌশল অবলম্বন করেন। ২০১৩ খ্রি. থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পদে বহাল ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠতা জনাব মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্টজন ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শিক্ষাগুরু ছিলেন চট্টগ্রাম শহরের কিংবদন্তী নেতা মরহুম এম এ আজিজ ও মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী। ১৯৫৩ খ্রি. জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে মরহুম এম এ আজিজ, এন জি মোহাম্মদ কামাল ও তারেক আহাম্মদ এর মাধ্যমে প্রথম সাক্ষাত করেন। পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম আসলে বঙ্গবন্ধুর সাথে এম এ আজিজ, এন জি মোহাম্মদ কামাল, তারেক আহাম্মদ চৌধুরী, শেখ মোশারফ হোসেন, আবুল কালাম, এম এ গনি, ফজলুল হক সহ মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার গাড়ীতে (গাড়ী নং- ঊইউ ১৬-৮৪)করে মাইজভান্ডার শরীফে জেয়ারতে যান। ১৯৭০ খ্রি. নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বন্টনের সময় তৎকালীন চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে বহু নেতা প্রার্থী ছিলেন কিন্ত বঙ্গবন্ধু নিজ দায়িত্বে এবং নিজ কন্ঠে পার্লামেন্ট বোর্ডে ৮ আসনে প্রার্থী হিসেবে জনাব মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার নাম ঘোষনা করেন এবং তিনি বিপুলভোটে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় চারনেতা তাজ উদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কারুজ্জামান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার বাড়ীতে আসেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সাথে মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার যতবারই সাক্ষাত হতো তিনি তাঁকে ঠাট্টা করে বলতেন ‘ইসহাক তোর ভিয়েতনামের খবর কি?’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম ৮ আসন বন্দর,পতেঙ্গাকে ভিয়েতনাম বলে ডাকতেন, কারন তখন ভিয়েতনামের মতই এ আসন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল। তাই বঙ্গবন্ধু সব সময় এ সংসদীয় এলাকার খোঁজ জনগনের খবর নিতেন। মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার পুরো জীবনটাই ছিল রাজনীতিকে ঘিরে। জীবনে কখনো অন্যায়ের কাছে তিনি মাথানত করেননি। এবং অন্যায় পথে পা বাড়াননি। তিনি ছিলেন লোভ লালসার উর্দ্ধে। তিনি বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত অনুসরন করে গেছেন। মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া নিজেকে কখনই রাজনৈতিক নেতা মনে করেন নি বরং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেশ ও জনগনের সেবা করেছেন।
২৪ জুলাই ২০১৭ ইংরেজী, সোমবার দুপুর ১১.১০ মিনিটে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply