২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:৫৭/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে জনতার বিজয়

     

মাহমুদুল হক আনসারী

ন্যায়-নীতি আর দুর্নীতি একসাথে চলতে পারেনা। দুর্নীতি জঘন্য অপরাধ। জনপ্রতিনিধির নামে চেয়ারে বসে যারা জনগণের নাগরিক অধিকার খর্ব করেছে তাদের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করে থাকে। আর সেটা হচ্ছে জাতীয়, স্থানীয় এবং পৌর নির্বাচন। জনগণ অপেক্ষায় থাকে ভোটের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ অপরাধী জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। যেটা বাংলার নির্বাচন ইতিহাসে বারবার জনগণ দেখতে পায়। দেশে এখন স্থানীয় ইউপি এবং পৌর নির্বাচন চলমান। এসব নির্বাচনে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতায় বিপুল ভোটে জনগণ দুর্নীতিবাজ প্রতিনিধিদের প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বেশিরভাগ এলাকায় জনগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতার চেয়ার ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে অন্যায় ব্যাভিচার জুলুম নির্যাতনের নানাবিধ প্রতিবেদন বিভিন্নভাবে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় জনগণের সরকারী বেসরকারী সাহায্য সহযোগিতা নিজেদের পকেটে ভর্তি করেছে। এসব অর্থে তারা আলিশান বাড়িঘর তৈরি করেছে। জমিজমা ক্রয় করেছে। সরকারী বেসরকারী অসংখ্য মালিকানাধীন এবং খাসজমি তাদের দখলে নিয়েছে। সাধারণ নিরীহ জনগণকে অন্যায়ভাবে জুলুম ও নিপীড়নের মধ্যে রেখেছে। ক্ষমতাকে যত্রতত্র ইচ্ছেমতো প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছিলো। দেখা যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচনে ওই ধরনের জালিম , দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিরা জনভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের অশিক্ষিত আজগর হোসেন পৌরসভার মেম্বার নির্বাচিত হয়ে বিগত ৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে মাটির ঘরে জীবনযাপন করলেও বিগত ৫ বছরে তার পাকা ঘর বাউন্ডারি দেওয়ালসহ প্রায় কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি ভিটা তৈরি করেছে। স্থানীয়ভাবে তার আশপাশে থাকা নিরীহ মানুষের অনেক বাড়ি ভিটে জমি নিজের আয়ত্তে নিয়েছে। সরকারী খাসজমি টিলা পাহাড় সিন্ডিকেট করে দখল করে নিয়েছে। নামে বেনামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে বহু জমিজমা ক্রয় করেছে। বিচারের নামে নিরীহ জনগণ থেকে কোটি কোটি টাকা ৫ বছরে আত্মসাৎ করেছে। তার একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট তার পক্ষে এলাকায় বিদ্যমান আছে। ঐ সিন্ডিকেটের বাইরে কোন জনগণ কোনো রকমের সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক বেচা বিক্রি পর্যন্ত করতে পারে নাই। যেকোনো ধরনের লেনদেন হলে সেখান থেকে সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিতে হতো। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাকে এলাকা ছাড়তে হতো। মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেককে হয়রানী করেছে ওই কাউন্সিলর। তার অত্যাচারে এলাকায় শান্তিকামী মানুষ ঘুমোতে পারেনি। জাল এবং মিথ্যা কাগজ তৈরি করে তার পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে অশিক্ষিত ওই কাউন্সিলর প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিচরণ করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। তার আরেক ভাই আকতার হোসেন ওলামা লীগের স্থানীয় নেতা দাবি করে সরকারী সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছে। ত্রান ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় , সরকারী বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার সাহায্য জনগণকে না দিয়ে তারা নিজেরা লুটপাট করে আত্মসাৎ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অসংখ্য অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। ক্ষমতায় থাকার কারণে স্থানীয় প্রশাসন আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। জনগণের বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি এবং মতামত প্রতিফলিত হয়েছে ১৬ জানুয়ারীর পৌর নির্বাচনে। সে নির্বাচনে আকতার হোসেন আজগর হোসেন দুই ভাই অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু জনগণের গণরায়ের মাধ্যমে তারা চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর নিকট চরমভাবে পরাজিত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষায় জবাব দিয়েছে। স্থানীয় জনগণ তাদের পরাজয়ের জন্য জনগণের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ আনন্দ মিছিল করেছে। ইতিমধ্যে তারা দুই ভাই এলাকা ছাড়া বলে জানা গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। পত্রিকার পাতা খুললেই এ ধরনের খবর চোখে পড়ে। আসলে জনগণ স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের নিকট নানাভাবে জিম্মি অবস্থায় থাকে। তাদের কিছুই করার থাকেনা। দুর্নীতিবাজ ওইসব জনপ্রতিনিধিরা দুর্নীতি করতে করতে সীমা ছাড়িয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যখন এ ধরনের নির্বাচন আসে তখন জনগণ ওতপেতে থাকে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার জন্য। সেটাই এখন সারা দেশে লক্ষ্য করছি। বাস্তবে এসব দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাসীন দলকে ব্যবহার করে কতিপয় নেতাদের ছত্রছায়ায় দুর্নীতির শেষ সীমায় আরোহণ করে। পরবর্তীতে তাদের আর যাওয়ার কোনো রাস্তা থাকেনা। অবৈধ অর্থ জমিজমা এসব কোথায় রাখবো সে জায়গায়ও তারা খুঁজে পায়না। জনগণের চিন্তা আর চেতনা হলো দুর্নীতিবাজ চরিত্রহীন ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী মাদক কারবারীদের যেনো দলের মধ্যে স্থান দেওয়া না হয়। উপর থেকে নিচের লেভেল পর্যন্ত সবখানে যেনো এসব চরিত্রহীন তথাকথিত নেতা ও কর্মীদের বয়কট করা হয় সেটাই জনগণের চিন্তা। প্রয়োজনে দল এবং প্রশাসনকে তাদের সংঘটিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী আইন শৃংখলা বিরোধী কর্মকান্ড যেই সংঘটিত করুক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব। সরকার জনগণের জনগণ সরকারের। জনতার বিরুদ্ধে সরকারের যাওয়া সংবিধান বিরোধী কর্মকান্ড। অপরাধী সে যেই হউক না কেনো তার বিচার হওয়া চায়। আজগর হোসেনদের মতো যারা জনপ্রতিনিধির পোশাক পরিধান করে লুটপাট করেছে দুর্নীতি করেছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করেছে তাদের বিচার জনগণ চায়। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ এবং অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত্ আনা হউক। তাদের আয়ের সমস্ত সম্পদের হিসেব নিকেশ জনগণ দেখতে চায়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply