১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১১:৩৩/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ওয়ার্ড পরিক্রমাঃ ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড

     

 

জলাবদ্ধতা, মশা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সচেষ্ট কাউন্সিলর শহিদুল

মোহাম্মদ ইসমাইল 
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম বাকলিয়া। এ ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। সাথে আছে ফুটপাত দখলদার ও মশার উপদ্রব। ওয়ার্ডের ছোট-বড় খাল ও নালাগুলো ভরাট থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিমিষেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

২ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড। সর্বশেষ ২০১১ সালের জন শুমারি অনুযায়ী এ ওয়ার্ডের জনসংখ্যা ৯৭ হাজার। মোট ভোটার সংখ্যা ৪৭ হাজার ৫৮৪ জন। ওয়ার্ডটি চসিকে’র বাকলিয়া থানার আওতাধীন। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোহাম্মদ শহিদুল আলম। ওয়ার্ড কার্যালয়টি ডি সি রোড এলাকায় অবস্থিত।

সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী এ ওয়ার্ডে স্বাক্ষরতার হার ৬৬.৬০%। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১টি, যার মধ্যে সরকারি কলেজ ২টি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে ২৮টি। ওয়ার্ডে উল্লেখযোগ্য খালের সংখ্যা ১০টি।

ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো নিয়ে সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলতে গেলে তাঁরা জানান, রাস্তাঘাট উন্নয়ন নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলরের উপর তাঁরা সন্তুষ্ট। তবে ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতার কোনো কূলকিনারা হচ্ছেনা। বার বার সড়ক উঁচু করা হলেও বর্ষা আসলেই আবার ডুবে যায়। এর কারন হলো খাল ও নালাগুলো শুষ্ক মৌসুমে ভরাট হয়ে থাকে। তাই সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ভরাট থাকা খাল ও নালাগুলো প্রতিবছর বর্ষার আগেই পরিষ্কার করার দাবি জানান তাঁরা।

এ সময় স্থানীয়রা আরো জানান, ফুটপাত বেদখল ও মশার উপদ্রব থেকেও তাঁরা রেহাই পাচ্ছে না । রাস্তার পাশের দোকানদারেরা ফুটপাত দখল করে রাখে। তার উপর আছে আবার ভ্যানগাড়ির উপদ্রব। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলেই বলেন, নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছেন তাঁরা।

পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডটি মশার স্বর্গরাজ্য উল্লেখ্য করে খালপাড় এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, মশার উপদ্রবে ঠেকা দায়। বিশেষ করে সন্ধ্যা হলেই উপদ্রব তীব্র আকার ধারণ করে। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেছেন, লোক দেখানো না করে পরিকল্পিতভাবে নালা পরিষ্কার এবং মশার ঔষধ ছিটালে অন্তত কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যেতো।

কে বি আমান আলী সড়কে যাত্রী পরিবহনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টেম্পুর ড্রাইভার বলেন, নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে হয়। চাঁদা কারা নেয় ? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু দলীয় চ্যাংড়া ছেলে-পেলে এসে টাকা নিয়ে যায়। এ চাঁদার ভাগ নেতা থেকে পুলিশ পর্যন্ত সবাই পায়।

অন্যদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিপলস ভয়েস’ এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আতিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতা রোধে সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের কাজে সমন্বয় থাকতে হবে। আর যত্রতত্র নালায় ময়লা ফেলার বিষয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক গণসচেতনতা তৈরী এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী। এতে কেবল জলাবদ্ধতা নয়, পরিবেশ দূষণও অনেকাংশে কমে আসবে।

মশার ঔষধ ছিটানোর ক্ষেত্র সৈয়দ আতিক বলেন, ঔষধের গুণগত মান, মিশ্রণ পদ্ধতি, মিশ্রণের অনুপাত, যথাযথ স্প্রে পদ্ধতি এবং উপযুক্ত পয়েন্টগুলোতে কর্মীরা স্প্রে করছে কিনা এসব কিছুই উপযুক্ত লোক দিয়ে তদারকি করতে হবে। নইলে তা হবে অর্থহীন এবং লোক দেখানো।

উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে ওয়ার্ডের কর্ণধার বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল আলমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আগে অনেক জলাধার ছিল। কালের পরিক্রমায় তা ভরাট হয়ে গেছে। শহরের চারপাশে লিংক রোড তৈরি, যত্রতত্র ময়লা ফেলা এসব কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে জলাবদ্ধ নিরসনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিচালিত চলমান প্রকল্পটি শেষ হলেই জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে আসবে।

মশার উপদ্রব সম্পর্কে কাউন্সিলর বলেন, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কিছুদিন পরপর ঔষধ ছিটানো হয়। কিন্তু ঔষধের কার্যকারিতা কয়দিন থাকে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। তবে ঔষধ ছিটানোর কার্যক্রম আগামীতে রুটিন মাফিক জোরদারের বিষয়ে আমি চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

যানবাহনে চাঁদাবাজিসহ সব ধরণের সন্ত্রাস, ফুটপাত দখলদার ও মাদকের বিষয়েও মন্তব্য করেন কাউন্সিলর শহিদুল। তিনি এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে বলেন, আমার এলাকায় কারা চাঁদাবাজি করে, এসবের পিছনে কোন নেতা জড়িত তা খুঁজে বের করুন। আমি সবসময় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক এসবের বিরুদ্ধে। এমনকি যদি আমিও জড়িত থাকি, আমারও বিচার হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply