১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:২১/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ১২:২১ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে আমরা কোভিড অতিমারী মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি

     

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন, কোভিডের মতো এত বড় অতি মহামারী বিগত ১০০ বছরে কেউ দেখেনি। করোনা কাউকেই করুণা করে না। কোভিভ-১৯ আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেকে আমাদের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছে। বৈশ্বিক অতিমারীর এ সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দেশের ১৮কোটি মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে ডাক্তার-নার্স, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করার কারণে আমরা কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। অনেক উদার মনের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে কোভিডের টিকা নিয়ে এখন আর কোন সমস্যা নেই। দেশের ৭ কোটি ১৩ লাখ মানুষকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে আরও ২ কোটি, সিরিঞ্জ মজুদ কোটি। কয়েকদিনের মধ্যে আসবে আরও ৩ কোটি ডোজ টিকা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ও নিয়মিত আরও ৫ লাখসহ মোট ৮০ লাখ ডোজ টিকা এক দিনে প্রয়োগ করা হয়েছে।

আজ ৪ নভেম্বর ২০২১ ইংরেজি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয় সভার আয়োজন করেন। চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে যোগদানের পর দেশে এক ডোজ ভ্যাকসিনও ছিলনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বল্প সময়ের মধ্যে চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি করেছি। এসব দেশ থেকে কোভ্যাক্স, অ্যাস্ট্রোজেনেকা, মর্ডানা, সিনোফার্মা ও ফাইজার টিকা এনে মানুষের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছি। প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি ডোজ টিকা আমরা পাচ্ছি। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে অর্ধেকের বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসবে। পর্যায়ক্রমে সবাই ডাবল ডোজ টিকার আওতায় আসবে এবং এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ১৫তম অবস্থানে চলে আসবে। টিকা কার্যক্রমে পৃথিবীর সকল মহলে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে। চিকিৎসক-নার্স সংকটের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, কোভিডকালীন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ৪ হাজার চিকিৎসক ও ১৪ হাজার মিডওয়াইফারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে চিকিৎসক-নার্স সংকট রয়েছে সেখানে আগামী অল্পদিনের মধ্যে সেখানে তাদের পদায়নের মাধ্যমে সংকট নিরসন করা হবে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১২ বছর সময়কালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য সেবায় ৫ লাখ ডাক্তার-নার্স-কর্মচারী সম্পৃক্ত হলে এদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য আর কাউকে ভারত, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে যেতে হবেনা। বিদেশীরা আমাদের দেশে চিকিৎসা নিতে আসবে।দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে হাজার হাজার ডলার দেশের বাইরে যাবে না। এ ব্যাপারে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা বিষয়ে লোকমান মিয়া বলেন, দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৮০ শতাংশ রোগ ভালো হতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারীসহ মা-শিশুর আধুনিক চিকিৎসা চলমান রয়েছে। আমাদের সবার রুট (শেকড়) গ্রাম থেকে। এ কারণে আমাদের উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিকে পদায়ন হলে মন খারাপ করা যাবে না। প্রত্যেক চিকিৎসক-নার্সকে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে সকল মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা-সেবা পৌঁছে দিতে হবে। দেশের চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো সরকার ও প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে। চিকিৎসকেরা একটু আন্তরিক হলে এ চেয়ে দ্বিগুন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। এ ব্যাপাওে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জন্ম নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদেও দায়িত্ব অনেক বেশি। সে ব্যপারে আপনাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, খাবারের ব্যাপারে আপনারা সচেতন করবেন। কারণ খাবারের কারণেই অনেক রোগ হয়। স্থানীয় চিকিৎসকদের কথা সবাই শুনে। এ কারণে আপনারা এ ব্যপারে ভূমিকা রাখতে পারেন। সচিব বলেন, দেশে আমরা দ্রæত অক্সিজেনারেটর আমদানি করছি। এই মেশিন বাতাস থেকে প্রতি মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। এই একটি মেশিন ১০০ জনকে অক্সিজেন দিতে সক্ষম। ইতোমধ্যে আমরা ৩টি অক্সিজেনারেটর আমদানি করছি। যেগুলো চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও গোপালগঞ্জে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১২৫ মেট্রিক টন থেকে বর্তমানে ৩৩০ মেট্রিক টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে।আরও ৮০টি অক্সিজেনারেটর মেশিন বসলে প্রত্যেক বিভাগে ও জেলায় এটির সুবিধা পাবেন। দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার ২০০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। করোনাকালীন এ সময়ে একটি রোগীও চিকিৎসার বাইরে ছিলনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের সভাপতিত্বে ও কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মুবারক হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মািমনুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল হোসেন, সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সানা শামীমুর রহমান ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. শেখ সফিউল আজম, বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও চিকিৎসা বিষয়ে আলোকপাত করেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে করোনা মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. নাবীল চৌধুরী ও বিগত ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি সালের অক্টোবর পর্যন্ত কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষনার বিষয়ে আলোকপাত করেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের আউটব্রেক ইনভেষ্টিগেশন অফিসার ডা. মুশতারী মমতাজ মিমি। মতবিনিময় সভার পূর্বে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া নগরীর কাজির দেউরি বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উপলক্ষে ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং সভা শেষে নগরীর সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ে বিভাগীয় আরটিপিসিআর ল্যাব ও মুজিব কর্ণারের শুভ উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৬টি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক, ১১ জেলার সিভিল সার্জন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারী বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply