বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে ফাটল; প্রকল্প পরিচালক বলছেন ভারী যানবাহনে, মেয়রের দাবি নির্মাণ ত্রুটি
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র্যাম্পের পিলারে ফাটল পরিদর্শনে এসে নির্মাণ ত্রুটির কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কি কারণে হয়েছে সেটা খালি চোখে দেখে এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে এটা ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণে হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নগরের বহদ্দারহাটে ফাটল দেখতে এসে তারা এই মন্তব্য করেছেন।ফ্লাইওভার নির্মাণের চার বছর পর ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি যুক্ত করা হয়। যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। র্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দিলে সোমবার রাতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমিতো প্রকৌশলী না। ফাটলের সুনির্দিষ্ট কারণ আমি বলতে পারবো না। সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই, নিশ্চয় নির্মাণে ত্রুটি ছিল। যার ফলে এ ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে কি হয়েছে, না হয়েছে এটা আমার থেকে আমাদের প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন। তারা কারিগরী বিষয় ভালো জানেন।’
এদিকে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো একটা ত্রুটি অবশ্যই ছিল। নয়তো ক্র্যাক (ফাটল) দেখা দিতো না। দুটি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাগত ত্রুটি, অন্যটি নির্মাণ ত্রুটি। কি কারণে হয়েছে সেটা খালি চোখে দেখে এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে এটা ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্মাণে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, এই র্যাম্পটি মূল নকশায় ছিল না। পরবর্তীতে এটা যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য নকশায় ত্রুটি থাকতে পারে।’
তবে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ফ্লাইওভারের র্যাম্পের নকশার কোনো ত্রুটি নেই। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। শুরুতে প্রবেশমুখে ভারী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিচের সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সে প্রতিবন্ধকতা কে বা কারা খুলে দিয়েছিল। ফলে প্রতিনিয়ত ভারী গাড়ি চলাচল করছে। এই কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি দাবি করেছেন, ফাটল দেখা দিলেও তা সংস্কার বা মেরামত করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কিছুদিন র্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তা সংস্কার করা হবে।
উল্লেখ্য, যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৪ জন নিহত হয়।
এরপর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।[সমকাল]