২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:০২/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৬:০২ অপরাহ্ণ

ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ প্রাচীন ‘চর্যাপদাবলি’ বিষয়ে গবেষণায় উপমহাদেশে প্রথম মুসলমান ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন

     

 

১০ জুলাই সোমবার বিকেল ৩টায় আন্দরকিল্লাস্থ একটি রেস্টুরেন্টে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর উদ্যোগে প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী, জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র জন্মবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্মানিত অতিথি ও আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ রানা, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, মোহাম্মদ শওকত ওসমান, প্রাবন্ধিক একেএম আবু ইউসুফ, মরমী গবেষক ও প্রাবন্ধিক লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য বলাই, কাজী আবদুর রউফ, অধ্যাপক দিদারুল আলম, মোহাম্মদ আবদুর রহিম, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নয়ন কান্তি বড়–য়া, ডা. বিমল পাল প্রমুখ। সভার শুরুতে উপমহাদেশের শিক্ষা ও ভাষার বরপুত্র জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেছেন, জ্ঞানতাপস, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র মাতৃভাষা বাংলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। শহীদুল্লাহর প্রজন্ম থেকে শুরু করে যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ থাকবে ততদিন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র এ অবদান আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সভায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র উপর সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীনে উপস্থাপিত গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাদেশের যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের তত্ত্বাবধানে শরৎকুমার লাহিড়ী গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ঘরোয়া পরিবেশে উর্দু, ফারসি ও আরবি এবং স্কুলে সংস্কৃত শিখেছিলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অল্পদিনের জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে চট্টগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণীয় করেছেন। তিনি ইউরোপ গিয়ে শেখেন প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত ও প্রাকৃতসহ বিভিন্ন ভাষা। তিনি ‘চর্যাপদাবলি’ বিষয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই ধ্বনিতত্ত্বের মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হন, ১৯৪৪ সালে অবসর নেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস নিযুক্ত হন। মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে তিনিই প্রমাণ করেন গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। তাঁর কাজের মধ্যে অভিধান তৈরি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উর্দুকে বাদ দিয়ে তিনিই প্রথম বাংলা রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবি তোলেন। তাঁর রচনার মধ্যে আছে সিন্দবান সওদাগরের গল্প, ভাষা ও সাহিত্য, বাঙ্গালা ব্যাকরণ, দীওয়ানে হাফিস, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম, পদ্মাবতী, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত প্রভৃতি। তিনি পাকিস্তান সরকারের ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’, ফরাসি সরকারের ‘নাইট অব দি অর্ডারস অব আর্ট লেটার্স’সহ বিভিন্ন স্বীকৃতি পেয়েছেন। ‘জ্ঞানতাপস’ ড. শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালে ১০ জুলাই তিনি জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ইন্তেকাল করেন।

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply