২৩ এপ্রিল ২০২৪ / ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:১২/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ৮:১২ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে সিডিএ’র বিরুদ্ধে বাকলিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের স্মারকলিপি প্রদান

     

বাকলিয়াবাসীর ন্যায্য দাবী আদায় না হলে রাজপথে মরণপণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন মোতাবেক ভূমি অধিগ্রহণ না করাসহ, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করার অভিযোগ করেছে বাকলিয়ার ভূমি মালিকরা। বাকলিয়াবাসীর পক্ষে মোট সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রাধানমন্ত্রীর বরাবরে ২৭ জুন স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নাগরিক অধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠক এবং সাংবাদিক আলমগীর নূর।

জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চট্টগ্রাম কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বন্দর-বাকলিয়া মৌজার জমি ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১নং) আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা হয়নি। বরং সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে প্রদত্ত স্মারকলিপিতে।
প্রসঙ্গতঃ গত ৯ এপ্রিল ২০১৯   জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী প্রয়োজনে জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণ কালে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিককে জমির মৌজা মূল্যের ৩(তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রকল্পের কাজ শুরু করার পূর্বে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অথচ, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়া সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান  আবদুচ ছালামসহ অত্র প্রকল্প পরিচালকরা বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে এবং প্রাধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসসরণ না করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই
কথিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিঃ এর সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে গত ৫/৬ বছর যাবৎ বাকলিয়াবাসীকে চাষাবাদ বঞ্চিত করে জোর পূর্বক ব্যক্তি জমি দখল করে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চালাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ অত্র প্রকল্পে নিয়োজিত সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে বাকলিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা এবং প্রকল্পের কাজ সাময়িক স্থগিত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও বিদ্যমান ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭ এর ২১ নং আইন মোতাবেক মৌজা মূল্যের ৩ (তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বাকলিয়াবাসীর পক্ষে ২৭ জুন তেজগাঁও ঢাকাস্থ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক এবং ভূমি মালিকদের সংগঠন বাকলিয়া-বন্দর মৌজার সরকারী প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক কল্যাণ পরিষদ-এর আহ্বায়ক সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী আলমগীর নূর।
  প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত স্মারকলিপিতে সিডিএ’র কর্মকর্তাদের ৫০%, ৩০%, ২০% কমিশন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ সিডিএ’র বেআইনী অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রোহিত করে বিদ্যমান আইনে মাননীয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এল. এ. কেস মূলে (৩ ধারা/ ৬ ধারা/ ৭ ধারা/৮ ধারা) নোটিশ জারি ও ইস্যুর মাধ্যমে বর্ণিত প্রকল্পের ভূমি পুনঃঅধিগ্রহণের দাবী জানিয়েছেন বাকলিয়ার ভূমি মালিকরা। কমিশন না দিলে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকের আবেদন ফাইলও গায়েব হয়ে যায় মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।
উল্লেখ্য,ইতিপূর্বে গত ২১/০৩/২০১৯ ইং তারিখে মাননীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বরাবরে এবং গত ২৭/১১/২০১৯ ইং তারিখে মাননীয় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম বরাবরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বর্ণিত প্রকল্প বাস্তাবায়নে অনিয়ম, দূনীতি ও জনহয়রানির বিষয় উল্লেখ করে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন বৃহত্তর বাকলিয়াবাসী। অথচ, তার কোন সুফল আজ অবধি ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা পায়নি। অধিকন্তু, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএ’র দুর্নীতির বিষয়ে মাননীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং মাননীয় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের বিষয় অবগত হয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজেদের অপকর্ম ঢাকার কুটকৌশল হিসেবে গত ২৪-০৩-২০১৯ ইং তারিখে ‘দৈনিক আজাদী’, ‘দৈনিক পূর্বকোণ’ এবং ২৫-০৩-২০১৯ ইং তারিখে ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ কর্তৃক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিলো। মূলতঃ তৎকালীন সময়ে গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত বক্তব্যসমূহের মাধ্যমে সিডিএ নিজেদের অপকর্ম ঢাকার কূটকৌশল নিয়েছে। কিন্তু ‘গণ বিজ্ঞপ্তি নিয়ম অনুয়ায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগেই দেওয়া উচিত ছিল। স্মারকরিপিতে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও মালিকদের আন্দোলনকারী সংগঠন বাকলিয়া-বন্দর মৌজার সরকারী প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক ও ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক আলমগীর নূর আরো উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করছেন ১ নং খাস খতিয়ানের টাকা আত্নসাৎ করার জন্যই সিডিএ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান  আবদুচ ছালামের প্রবর্তিত নীল নকশার বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করে চলেছেন সিডিএ’র বর্তমান কর্তৃপক্ষও।
তিনি আরো উল্লেখ করেন গত ৩০-০৩-২০১৯ ইং তারিখে “কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত বাঁধ-কাম রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ভূমির ক্ষতিপূরণ সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রদান করা ও ক্ষতিগ্রস্থ ভূমির মালিকদের হয়রানি ও মিথ্যা মামলা প্রতিবাদ শীর্ষক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র বিরুদ্ধে বাকলিয়াবাসীর পক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন ১৮ নং, পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর  মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। উল্লেখ্য, বিগত ০৫-০৩-২০১৯ ইং তারিখের ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় “ক্ষতিপূরণ না দিয়ে সড়ক নির্মানের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ শিরোনামে এবং ২৬-০৮-২০২০ ইং তারিখে ‘দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রথম পাতায় চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ না করেই ব্যক্তি জমিতে সিডিএ’র সড়ক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রসঙ্গতঃ প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে প্রেরিত স্মারকলিপিতে ভূমি মালিকরা প্রশ্ন করেছেন “চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বাড়ই পাড়া হতে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খননের জন্য এল-এ মামলা নং ৩২/২০১৮-২০১৯ ইং এবং ০৫/২০১৯-২০২০ইং মূলে অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির ক্ষতিগ্রস্থ মালিকদেরকে মৌজামূল্যের ৩(তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ইতিমধ্যে। ৭(সাত) ধারা নোটিশ ইস্যু করেছে। এমতাবস্থায় একই শহর, একই নগরবাসী, একই সরকারের সংস্থা হতে অত্র প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা কেন ৩ (তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ পাবেনা? কেন আইনের বৈষম্যের শিকার বাকলিয়াবাসী?
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ৭(সাত) দফা দাবিগুলো হচ্ছে  ১) চট্টগ্রাম কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে স্বেচ্ছাচারিতা, আইন লঙ্ঘণ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ প্রকল্পের দায়িত্বরত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ২) সিডিএ কর্তৃক চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়ায় ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক জবরদখল করে অত্র চলমান প্রকল্পের কাজ সাময়িক স্থগিত রেখে আগে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিককে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা ৩) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ও ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭ মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিককে জমির মৌজা মূল্যের ৩ (তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা ৪) অত্র অধিগ্রহণের আওতামুক্ত অথচ সিডিএ কর্তৃক বেআইনীভাবে ভূমি মালিককে চাষাবাদ বঞ্চিত করে জোরপূবর্ক গত ৫/৬ বছর যাবত ব্যবহৃত ভূমির ভাড়া পরিশোধ করা ৫) ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির জন্য সোচ্ছার ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদেরকে সিডিএ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা-হামলায় গ্রেপ্তার, জেল, জুলুম, হুলিয়া দিয়ে হয়রানি থেকে রক্ষা করা ৬) বর্ণিত অধিগ্রহণকৃত রাস্তা কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বৈধ বিএস খতিয়ান ও বৈধ বিএস দাগাদিভূক্ত পূর্ণ ও নিরঙ্কুশ জমির ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করাসহ ৭) সিডিএ’র বেআইনী অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রোহিত করে মাননীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এল. এ. কেস মূলে (৩ ধারা/ ৬ ধারা/ ৭ ধারা/ ৮ ধারা) নোটিশ জারি ও ইস্যুর মাধ্যমে বর্ণিত প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৭ (সাত) দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের সংগঠন ‘বাকলিয়া-বন্দর মৌজার সরকারী প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক কল্যাণ পরিষদ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে, এই প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা ভূমির মৌজামূল্যে ৩(তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিসহ এই ৭ (সাত) দফার বাস্তবায়ন এবং অতিদ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় ও যথোপযুক্ত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাকলিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা। অন্যথায়, তাদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হওয়ার সমূহ আশংঙ্খ ব্যক্ত করেছেন ভূমির মালিকগণ। বাকলিয়াবাসীর ন্যায্য দাবী আদায় না হলে রাজপথে মরণপণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ আবাদি ভূমি মালিকরা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply