২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৩:১২/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

জি-৭ এর অষ্টম দেশ হিসেবে ভারতকে অন্তর্ভূক্ত করা উচিৎ – ব্রিটিশ সাংসদ

     

বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জোট জি-৭ এর অষ্টম দেশ হিসেবে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য বব ব্ল্যাকম্যান। জি-৭ এ ভারতের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও এ সময় অভিমত দেন তিনি।

একান্ত আলাপে ব্ল্যাকম্যান বলেন, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং জনবহুল একটি রাষ্ট্র। আমার মতামত হচ্ছে, ভারতকে জি-৭ এর অষ্টম দেশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া উচিত। তা ছাড়া বাকি সদস্য রাষ্ট্র সমূহের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্য সহ নানা বিষয়ে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই ভারতকে শুধু অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ না জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা দেয়া উচিত। আশা করছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আসন্ন জি-৭ সম্মেলনে অন্য অংশীদারদের যথেষ্ট তাগিদ দিবেন যেনো ভারত বিশ্বে তাঁর উপযুক্ত স্থান অর্জন করতে পারে।”

প্রসঙ্গত, জি-৭ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্বীকৃত বিশ্বের সাতটি মূল উন্নত অর্থনীতির দেশের গ্রুপ। এর সদস্য সমূহ যথাক্রমে, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এদিকে, চলতি বছর ১১-১৫ জুন তারিখে যুক্তরাজ্যের কর্ণওয়ালে অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে ভারতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ভারতে মহামারি জনিত কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগতভাবে এই সম্মেলনে যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৮% ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক। যা সংখ্যায় প্রায় ১.৫ মিলিয়ন। একই সঙ্গে তাঁরা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ৬ শতাংশ অবদান রেখে চলেছেন। এর ধারাবাহিকতায় চলতি দশকে ভারত-যুক্তরাজ্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর এবং দৃঢ় করতে সম্প্রতি দেশ দুটো রোড ম্যাপ-২০৩০ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে।

এ প্রসঙ্গে ব্ল্যাকম্যানের ভাষ্য, “রোডম্যাপ-২০৩০ -দু দেশের একত্রে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত এক পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে ভারত যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারীদের একটি। যুক্তরাজ্যও ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। তাই দু দেশের পারস্পরিক বন্ধুত্ব, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং অভিবাসন সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। করোনা মহামারীতে সৃষ্ট বাণিজ্য ঘাটতি পূরণেও তা সহায়ক হবে।”

ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য দ্বিগুণ করার লক্ষ্যটি একটি সাহসী পদক্ষেপ এবং এর থেকে সৃষ্ট স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলায় দু দেশকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলে মত দেন এই বরেণ্য রাজনীতিক। তাছাড়া, পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিবেশ তৈরী এবং শুল্ক হ্রাস সুবিধা দেয়ার গুরুত্বের উপরও আলোকপাত করেন তিনি।

এ বিষয়ে ব্ল্যাকম্যানের বক্তব্য, “এ মুহূর্তে দুই দেশেই শক্তিশালী সরকার রয়েছে। তাই যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় এটি। তাছাড়া, দু দেশের সরকারের মধ্যেই পারস্পরিক রাজনৈতিক সমঝোতাও বর্তমানে দৃঢ়। তবে, একটি বিষয় না বললেই নয়, কেবল কেন্দ্র নয়, রাজ্য সরকারের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ব্রিটিশ শিল্প কনফেডারেশন এবং ভারতীয় শিল্প সংঘের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রসঙ্গ টেনে এর প্রশংসা করেন ব্ল্যাকম্যান। উভয় পক্ষেই সম্পর্কের ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলে মন্তব্য করেন ব্রিটিশ এই এমপি।

ভারতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়না, আমরা এখন আর মনস্তাত্বিকভাবেও কোনো প্রভু-প্রজা সম্পর্কে রয়েছি। এখন দুটো দেশকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে।”

প্রসঙ্গত, ব্ল্যাকম্যান গত ২০১০ সাল থেকে ইংল্যান্ডের কনজারভেটিভ পার্টির একজন এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্রিটিশ হিন্দুদের নিয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। নিজের নৈতিক অবস্থানের জন্য তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারও প্রদান করে ভারত সরকার।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply