১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:০৬/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৮:০৬ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতঘর নির্মাণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

     

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৭ টি বসত বাড়ীর নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কাঠইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়,ইউনিয়নের মোট ১৭ টি গ্রামের মধ্যে ১৬টি গ্রামকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হুছননগর গ্রামের ৩৭টি পরিবারকে এ পূনর্বাসন কর্মসুচির আওতায় আনা হয়েছে। উপকার ভোগীদের নির্বাচনে নেয়া হয়েছে স্বজনপ্রীতির আশ্রয়। এক পরিবারের ৩ পুত্রকে পৃথক ৩টি বাড়ি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কোন কোন প্রবাসী পরিবারও বসতঘর পেয়েছে স্বজন প্রীতির অনিয়মের আশ্রয়ে। বসতঘর প্রাপ্তরা হচ্ছেন হুছননগর গ্রামের মৃত মনু মিয়ার দুই পুত্র আব্দুল্লাহ মিয়া, আব্দুল আওয়াল,আব্দুল খালিক এর কন্যা বুশরা বেগম,ডাঃ হাফিজুর রহমানের পুত্র শাহানূর মিয়া,মৃত আজর আলীর পুত্র রফিক উদ্দিন,মৃত আশকর আলীর ৩ পুত্র যথাক্রমে জফর আলী,নূর মিয়া,ফারুক মিয়া,আব্দুল আওয়ালের পুত্র সোহেল মিয়া,জাহির উদ্দিনের স্ত্রী দিলারা বেগম,ছালেহ আহমদের ২ পুত্র জবান আলী, রমিজ আলী,মৃত ঈমান আলীর পুত্র হাবি রহমান,মৃত আব্দুল মনাফ এর পুত্র
আব্দুল কাদির,এশাদ আলীর পুত্র আলী রাজা,মৃত আব্দুল হান্নান এর ২ পুত্র রইছ উদ্দিন ও আফাজ উদ্দিন,হারুন রশীদ এর কন্যা রেজিয়া বেগম,আলী আহমদের পুত্র তোয়াহিদ আলী,মৃত আব্দুল কাহারের পুত্র মৃত আব্দুল মজিদ,মৃত ওয়ারিশ আলীর পুত্র ছালেহ আহমদ।

২১টি পরিবারকে বাড়ি দেয়া হয় মাগুড়া মৌজায়। এই নতুন গ্রামটির নামকরন করা হয় মিসবাহ নগর গ্রাম হিসেবে। অন্যদিকে ধারারগাঁও মৌজায় পূর্ব হুছননগর গ্রামে যাদেরকে বাড়ি দেয়া হয়েছে তারা হলেন হুছননগর গ্রামের নজীর আহমদ এর পুত্র গোলাম রব্বানী,ছুরত আলীর কন্যা ইছমতেরা বেগম ও ছুরত আলীর পুত্র তৈয়বুর রহমান, মুজিবুর রহমানের স্ত্রী আমিরুন নেছা,মৃত আনিছ উল্লাহর পুত্র ছুরত আলী,হোসেন আহমদ এর স্ত্রী অরুনা বেগম, মৃত আহাদ উল্লাহর ৩ পুত্র আবুল কালাম,মুক্তাদির মিয়া,রুহুল আমিন,সমাই উল্লাহর পুত্র সুন্দর আলী,আতাউর রহমানের স্ত্রী খারাতুন নেছা,ছবর আলীর পুত্র হাবিবুর রহমান,আজিদ উল্লাহর কন্যা মালেছা বেগম,মৃত রফিক আলীর ৩ পুত্র হামিদুর রহমান,আইয়্যুবুর রহমান ও তফজ্জুল রহমান এবং হুছননগর গ্রামের সাদক আলী। এর মধ্যে শেষোক্ত ১৭টি বাড়ীর নির্মাণ কাজ মোটামোটি সম্পন্ন হলেও মিসবাহনগর গ্রামের ২০টি পরিবারের বসতঘর নির্মাণ কাজ এখনও সুসম্পন্ন হয়নি। কাজের গুনগত মান অত্যন্ত খারাপ বলে দাবী করেছেন গ্রামবাসী। তারা বলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী নির্বাচন করতে গিয়ে মেম্বার আব্দুর রহমান চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের কথা বলে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে বাড়ির কাগজ বাবদ এক হাজার টাকা পরিবহন খরচ বাবত ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ৩ বারে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার করে টাকা ঘুষ নেন।

এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ীঘর নির্মাণের কাজ যখন সম্পন্ন হওয়ার পথে তখনই গ্রামের মেম্বারের বাড়ী হতে সরকারী কর্মকর্তারা প্রকল্পের মালামাল উদ্ধার করেছেন। স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রহমানের বাড়ীর বসতঘর থেকে তালা ভেঙ্গে ১৯ এপ্রিল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় শহর থেকে একটি ট্রাক নিয়ে ৯০ বস্তা সিমেন্ট ও ১০টি আরএফএল কোম্পানীর দরজা উদ্ধার করেছেন
সুনামগঞ্জ সদর পিআইও অফিসের বর্ণিত প্রকল্পের দায়িত্বরত উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তৌহিদুজ জামান। এ সময় চেয়ারম্যান মোঃ শামছুল ইসলাম ও এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পের উক্ত মালামালগুলো অসদুদ্দেশ্যে কালোবাজারে চোরাই পন্থায় বিক্রয়ের লক্ষ্যে মেম্বারের বাড়ীতে গোপনে রাখা হয়েছিল। ঘটনাটি জানাজানি হলে উদ্ধারের ৩দিন আগে ঘটনাস্থলে গিয়ে মেম্বারের ঐ বসতঘরের ঝুলানো তালার চাবী চান উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তৌহিদুজ জামান। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে মেম্বার বলেন তার ঘরে মাত্র ৪৫ ব্যাগ সিমেন্ট আছে। কিন্তু মেম্বার দেই দিচ্ছি করে মালামাল রাখা ঘরের তালার
চাবী স্বেচ্ছায় না দিলে ঘটনার আগের দিন চেয়ারম্যানকে নিয়ে জয়নগর বাজার থেকে তালা কিনে মেম্বারের ঘরের তালার উপর আরেকটি তালা লাগিয়ে দেন মোঃ তৌহিদুজ জামান। পরদিন যথাসময়ে ট্রাক নিয়ে পৌছে ঐ ঘরের তালা ভেঙ্গে ৯১ বস্তা সিমেন্টসহ আরএফএল কোম্পানীর ১০টি দরজা একটি ট্রাকে উঠিয়ে শহরের দিকে নিয়ে আসেন তারা। জানা যায়, হাছনবাহার গ্রামের আমজদ আলী ঐ প্রকল্পের ঠিকাদার। তিনি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে লেবার ঠিকাদার নিয়োগ করেন বুরিস্তল গ্রামের আমির হোসেন ও হুছননগর গ্রামের সুন্দর আলীকে। তারা বলেন,আমরা গত পৌষ মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু করে চলতি বৈশাখ মাসে শেষ করেছি। সরকার যেখানে বিনামূল্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপকারভোগীদেরকে প্রদান করেছে সেখানে ৩ দফায় কিসের টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে মেম্বার আব্দুর রহমান বলেন,আমি
কোন পরিবারের কাছ থেকে একটি টাকাও নেইনি। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কিছু উপকারভোগীরা আমার বিরুদ্ধে অন্যায় অভিযোগ উত্থাপন করছে। এদিকে উপকারভোগী নির্বাচনে কেন এবং কিভাবে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যানের অফিসে মঙ্গলবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার বাড়ীতে গেলে সাংবাদিকের খবর জানতে পেরে চেয়ারম্যান বাড়ীর পেছন দিয়ে মঙ্গলবার বাদ আছর গ্রামের মসজিদে চলে যান। পরে এ প্রতিবেদক অভিযোগের ব্যাপারে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও চেয়ারম্যান কোন ফোন রিসিভ করেননি। তবে চেয়ারম্যানের পিতা
মুফতি আব্দুল হান্নান বলেছেন,জনগন আমার ছেলেকে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় আমরা নিজেরাই কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্স এর জন্য ৩০ শতক জায়গা দান করেছি। আমার ছেলে কোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির সাথে জড়িত নয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার বলেন, আমি ইতিমধ্যে একটি ঘর বাতিল করেছি। আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে ঘুষ দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও টাকা গ্রহনের অভিযোগ পেলে ভূক্তভোগীদের টাকা উদ্ধারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply