২৩ এপ্রিল ২০২৪ / ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:২৯/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ৫:২৯ অপরাহ্ণ

বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সি.এস.সি. চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ নিযুক্ত হলেন

     

 

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার ভাটিকান সিটি সময় দুপুর ১২.০০ টা ও বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০০ টায় কাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সি.এস.সি.’কে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ হিসেবে নিয়োগ দান করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত পোপ ফ্রান্সিস-এর প্রতিনিধি এবং ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী চট্টগ্রামের পবিত্র জপমালা রাণী ক্যাথিড্রাল চার্চে উপস্থিত থেকে ধর্মীয় উপাসনা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস-এর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী এবং সহযোগিতা করেন চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের প্রশাসক ফাদার লেনার্ড সি. রিবেরু ও ফাদার সমর দাঙ্গো ও.এম.আই.। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই তারিখে আর্চবিশপ মজেস এম. কস্তা সি.এস.সি.’র মৃত্যুর পর থেকে চট্টগ্রামের আর্চবিশপ পদটি এখন পর্যন্ত শূণ্য রয়েছে। মনোনীত আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সি.এস.সি. চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ বিশপ ও ২য় আর্চবিশপ হিসেবে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন।

মনোনীত আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সি.এস.সি. বর্তমানে বরিশাল কাথলিক ডাইয়োসিসের বিশপ হিসেবে সেবা দান করছেন। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ডাইয়োসিসের সহকারী বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর বরিশালের নবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ও ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র ক্রুশ সংঘের একজন কাথলিক যাজক হিসেবে অভিষেক গ্রহণ করেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুলাই তারিখে তিনি চট্টগ্রাম ডাইয়োসিসের সহকারী বিশপ ও ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি তারিখে নতুন সৃষ্ট বরিশাল ডাইয়োসিসের প্রথম বিশপ হিসেবে অভিষেক গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য যে, খ্রিস্টভক্তদের উপযুক্ত ও নিবিড় পালকীয় সেবাদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে কাথলিক খ্রিস্টানদের ৮টি ডাইয়োসিস আছে, যেগুলো হলো: ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল। প্রতিটি ডাইয়োসিস এর অন্তর্ভূক্ত আছে বেশ কয়েকটি প্যারিশ বা চার্চ। প্রতিটি চার্চের ধর্মযাজক ‘প্যারিস প্রিস্ট’ নামে অভিহিত। আর ডাইয়োসিস-এর প্রধান ধর্মযাজক হলেন একজন ‘বিশপ’। ৮টি ডাইয়োসিস-এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম হলো আর্চডাইয়োসিস এবং এ’দুটো ডাইয়োসিসের প্রধান হচ্ছেন একজন করে আর্চবিশপ।

চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিস এর এলাকা বাংলাদেশের ৯টি প্রশাসনিক জেলা জুড়ে বিস্তৃত। জেলাগুলো হলো: চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার। এই জেলাগুলোতে কাথলিক খ্রিস্টানদের প্যারিশ বা চার্চ আছে ১১টি এবং সাব-প্যারিশ আছে ২টি। চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিস-এর প্রধান ধর্মযাজক মাননীয় ‘আর্চবিশপ’ চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটাস্থ আর্চবিশপ ভবন-এ অবস্থান করেন।

ঐতিহাসিক এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। বাংলাদেশে চট্টগ্রামেই প্রথম খ্রিস্ট ধর্মবিশ্বাস আসে ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে পাথরঘাটা, জামালখান এবং আনোয়ারা উপজেলার দিয়াং-এ গড়ে ওঠে প্রথম গির্জা। জেজুইট সম্প্রদায়ের যাজক ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্ণান্দেজ ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে আসেন এবং পরবর্তীতে আরাকানদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তৎকালে বাংলাদেশে কোন ডাইয়োসিস ছিলনা। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অবিভক্ত পূর্ব বঙ্গের ‘ভিকার এপোস্টলিক’ এর ধর্মাসন-এর মর্যাদা লাভ করে অর্থাৎ কোন ডাইয়োসিস না থাকায় চট্টগ্রাম’ই ছিল সমস্ত পূর্ব বঙ্গের কাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান কেন্দ্র। পরবর্তীতে ‘ভিকার এপোস্টলিক’ এর ধর্মাসন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামকে ‘ডাইয়োসিস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন চট্টগ্রাম ডাইয়োসিস এর এলাকাধীন ছিল বর্তমান বরিশাল ডাইয়োসিস এবং ভারত ও মায়ানমার-এর বিস্তৃত এলাকা। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিস-এ উন্নীত হয়। চট্টগ্রাম একটি বন্দর নগরী এবং স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বিন্দু। চট্টগ্রামের রয়েছে সুদীর্ঘ সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ইতিহাস। চট্টগ্রামে বিশেষভাবে শিক্ষা সেবা এবং চিকিৎসা সেবায় কাথলিক খ্রিস্টানগণ জড়িত আছেন শুরু থেকেই এবং তারা সেবা করছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সকলকে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply