২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:৩৮/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৩:৩৮ অপরাহ্ণ

পৃথিবী কি এই মহামারি থেকে মুক্তি পাবে?

     

মোঃ ওসমান গনি শুভ
পৃথিবী তার নিজস্ব নিয়মে চলছিল কিন্তু হঠাৎই হলো বড় ছন্দপতন। অদৃশ্য এক ভাইরাস দৃশ্যমান পৃথিবীকে করে তুলল মৃত্যুপুরী। যে ভাইরাসের উৎপত্তি ঘটেছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে। কিছুদিনের মধ্যে চীন পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষ চীন দেশের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত । ব্যবসায়ের খাতিরে লক্ষ লক্ষ মানুষ চীনের বিভিন্ন শহরে যাতায়াত করে যার ফলে অতি দ্রুত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই মহামারি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কভিড-১৯ ভাইরাস পৃথিবীকে করে ফেলেছে অসাড়৷
প্যাঙ্গোলিন,ইঁদুর, বাদুড়, কুকুরের মূত্র থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি বলে একদল গবেষক মত প্রকাশ করেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের একজন গোয়েন্দা সাংবাদিক বলেন যে, উহানের জৈব রাসায়ানিক গবেষণা কেন্দ্র থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবীতে।  আর একদল বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন বর্তমান বিশ্বের একক আধিপত্য পেতে চীন নিজেই এই ভাইরাস বিশ্বে ছড়িয়েছে। ওয়াল্ড হেলথ্ অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউ.এইচ.ও) এই নোবেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ কে “মহামারি” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই  মহামারি সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করবে বলে জানিয়েছেন একদল গবেষক। একদল ইসলামী গবেষক মনে করেন পৃথিবীতে চলমান পাপ,পঙ্কিলতা, আধিপত্য বিস্তার, সুদ,ঘুষ, যিনা, ব্যাভিচার, জুলুম বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্টিকর্তা এই গজব নাজিল করেছেন। একদল প্রকৃতিবিজ্ঞানী বলেছেন, গ্রীণ হাউজ গ্যাস বেড়ে যাওয়ায় বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়া, কলকারখানার অতিরিক্ত বর্জ্য পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করা,কলকারখানার ধোঁয়া বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত করা, পলিথিন এবং পলিমার জাতীয় দ্রব্য মাটিতে ফেলে মাটি দূষণ করা, সাগরে ময়লা ফেলে সাগর দূষিত করার ফলে পৃথিবী যে বিপন্ন হওয়ার পথে, সেই পথ থেকে বাঁচাতে প্রকৃতি তার নিজস্ব উপায়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে।
শিল্প- কারখানায় সবচেয়ে উন্নত মহাদেশ হলো ইউরোপ।  ইউরোপ মহাদেশে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি খুবই করুণ পর্যায়ে এসে পড়েছে।ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন,যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ছাড়িয়েছে। উত্তর  আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় সংক্রমণ বেড়েছে কয়েকগুণ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় গাদ্দাফি হত্যার পরে যিনি অন্তরবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জেব্রিল নামে সেই শাসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
পৃথিবীতে বর্তমান থমথমে অবস্থা।মানব সভ্যতা আজ মহাবিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে।হোম কোয়ারেন্টাইন,  আইসোলেশন,সোশ্যাল ডিসট্যান্স, লক ডাউন শব্দগুলো হয়ে পড়েছে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। ত্রাণ দেওয়ার নামে করছেন স্বজনপ্রীতি, হচ্ছে মণ-মণ,টন-টন,বস্তা-বস্তা চাউল চুরি। হত দরিদ্ররা না খেতে পেয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম। বড় বড় নেতারা এখন জীবন বাঁচাতে হোম কোয়ারান্টাইনে। করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে এগিয়ে আসছেন না  নিকট আত্মীয়-স্বজনরা।লাশের পাশে কাঁদছেন অসহায় পিতা অথবা মাতা। অবশেষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে এগিয়ে আসছেন স্বেচ্ছা সেবায়।
শহরে বসবাসরত মানুষজন সতর্কতা ও নিয়মাবলী মানলেও মানছেন না গ্রামে বসবাসকারী সাধারণ জনগণ। তারা চায়ের দোকানে, মুদি দোকানে এবং জনসমাগম স্থানে আসার চেষ্টা করছেন।এই ভাইরাসের পূর্বেও বহু মহামারি ভাইরাস পৃথিবীর বুকে হানা দিয়েছিল৷ ২০০৩ সালে  হংকংয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাস সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এ আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮২ হাজারের বেশি লোক এবং ১৭ টি দেশে মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের। ২০১২ সালে সৌদি আরবে প্রথম মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রম বা মার্স ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রথম শনাক্ত হয় ইবোলা ভাইরাস। মধ্য আফ্রিকার ইবোলা নদীর তীরে শনাক্ত হওয়ায় নদীর নামে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ বা ইভিডি বাদুড়ের খাওয়া ফল থেকে মানুষের দেহে প্রথম প্রবেশ করে। ইবোলা ভাইরাসের ফলে সিয়েরা লিওন,লাইবেরিয়া ও গিনির অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল।জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৪৭ সালে যার টিকা এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। চিকেন ফক্স প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫৩ সালে যার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয় ১৯৯৫ সালে। হেপাটাইটিস-বি প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৬৫ সালে যার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয় ১৯৮১ সালে। এইডস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৮১ সালে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস যেটি কোনো উন্নত মানের ব্যালাস্টিক মিসাইল দিয়েও ধ্বংস করা যায় না। মার্কিন রণতরী থেকে শুরু করে ব্রাজিলের বনে বাসকারী উপজাতিরা কেউই করোনা ভাইরাসের হিংস্র থাবা থেকে বাঁচতে পারেনি। পরিশেষে বলা যায় যে,  প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর এই বসুন্ধরা কি আবার তার চঞ্চলতায় মুখর হবে? লেখক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
০১৭৮২ ৭০৯৭১৩
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply