১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:৩৩/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ৪:৩৩ অপরাহ্ণ

টিএসপির গ্যাস নির্গমনে পতেঙ্গা এখন বিপর্যস্থ এলাকা

     

 হোসেন বাবলা

নগরীর পতেঙ্গার টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেক) কারখানার সালফিউরিক এসিড নির্গতের কারণকে গত ২/৩ দিনে৩০-৩৫জন অসুস্থ্য হবার খবর পাওয়া গেছে। প্রবল বর্ষা ও শীত মৌসুমে কারখানার এসিড কিংবা গ্যাস নির্গত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এরপরও স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

কর্তৃপক্ষ সবসময়ই উৎপাদন কাজ সতর্কতার মধ্যে করার চেষ্টা করে থাকেন এমন দাবি করলেও স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষা ও শীত মৌসুমে গ্যাস বা এসিড নির্গমণ নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। শীত ছাড়া অন্য সময়ে অবশ্য তেমন আতঙ্ক থাকে না। এদিকে উৎপাদনের সময় কারখানায় জমে যাওয়া এসিডগুলো বিশেষ চেম্বার বা প্ল্যান্টের মাধ্যমে নষ্ট করার নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠার সময় এমন প্ল্যান্ট টিএসপিতে স্থাপনই করা হয়নি। ৪৭ বছর পর বছর দু’য়েক আগে নির্গত গ্যাস বা এসিড নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র স্ক্রাবার মেশিন বসানো হলেও সেটির কার্যকারিতা নিয়েই এখন নানা প্রশ্ন উঠেছে। স্ক্রাবার মেশিনটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা কিংবা মঙ্গলবার মধ্যরাতে গ্যাস লিকেজের সময় এসএস-২ প্ল্যান্টে কর্তব্যরতদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল- সেটি নিয়ে খোদ কারখানা কর্তৃপক্ষই সন্দেহের মধ্যে রয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ জোর দিয়েই বলছেন, কর্তব্যে কারো গাফেলতি থাকুক কিংবা স্ক্রাবার প্ল্যান্টে সমস্যা থাকুক তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কি ঘটেছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল টিএসপি কারখানা এলাকা। পরবর্তীতে রাত দশটার দিকে বিদ্যুৎ আসা মাত্রই এসএস-২ প্ল্যান্টটি চালু করা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে প্ল্যান্টে জমে থাকা গ্যাস। সঙ্গে সঙ্গেই আশ পাশের মানুষের মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয়রা জানান, রাত ১১টার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে টিএসপি কারখানার আশপাশের মানুষগুলো। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে ৫/৭জনের অধিক মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি শীতেই এমন ঘটনা ঘটে। এজন্য তারা শীতকালে বেশি আতঙ্ক থাকেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলার পরও কোন সুরাহা মিলেনি।

কর্তৃপক্ষ বলছেন : টিএসপি কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আতাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পরদিনই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। যদিও প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যখন প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছিল ওই সময়ে স্ক্র্যাবার গ্যাসটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল কিনা কিংবা কারও গাফেলতি আছে কিনা- সেটা খোঁজা হচ্ছে। ৪৭ বছরের পুরোনো প্ল্যান্ট এটি। এরপরও সর্বাত্মক সতর্কতার সাথে কাজ করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনার সাথে যদি কারও গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

গ্যাস ছাড়তে হয় যে কারণে : কারখানাটিতে সার উৎপাদন করতে কয়েক ধাপে কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন করে থাকে। কাঁচামাল সালফার থেকে সাফিউরিক এসিড তৈরির মাধ্যমেই সার উৎপদন হয়ে থাকে কারখানাটিতে। প্রথম পর্যায়ে সালফার পুড়িয়ে তা সালফার ডাই-অক্সাইড হয়। এরপর ডাই-অক্সাইড থেকে ট্রাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। এরপরই ট্রাই-অক্সাইড থেকে সালফার এসিডে রূপান্তর হয়ে থাকে। এ রূপান্তরের মাঝেই ট্রাই-অক্সাইড পানির সাথে মিশে পুরোপুরি এসিডে রূপ নেয়। তবে কয়েক ধাপের এই কাজটি করতে হলে প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন হয়। যদিও প্ল্যান্ট ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে তখন ঠান্ডা হয়ে যাওয়া প্ল্যান্ট চালু করলেও এসিড নির্গত হয়। পুরোনো কৌশলে নির্গত গ্যাস বাতাসে ছাড়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সময়কেও গুরুত্ব দিতে হয়। গতির কৌশল পরিবর্তন হলে এমন ঘটনা ঘটে থাকে বলেও জানান কারখানা সংশ্লিষ্টরা।

যেসব কারণে হতে পারে : অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে প্ল্যান্ট পরিচালনা, গ্যাস বা এসিড নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র স্ক্র্যাবার মেশিন ঠিকঠাক মতো কাজ না করা অথবা স্ক্র্যাবারের মধ্যে সঠিক সময়ে কেমিক্যাল না দেয়া, অপারেটরের গাফেলতি, বাতাসের গতি না বুঝে গ্যাস নির্গত করা এবং কুয়াশার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, গেল ১৭ বছর আগে একযোগে পেপার মিল্স, গ্ল্যাস ফ্যাক্টরিসহ দেশের আটটি কারখানা পে-অফ করে দেয় তৎকালীন মন্ত্রণালয়। শ্রমিক-কর্মচারীরা কোর্টে মামলা দায়ের করলে আদালত সকল শ্রমিকদের পুনরায় শিল্পমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্য কারখানাতে নিয়োগ দিতে বলে। বর্তমানে টিএসপি কমপ্লেক্সে এমন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজে রয়েছেন যারা সার কারখানায় প্রশিক্ষিত নয়। এদের কয়েকজন ওইদিন রাতে আলোচ্য প্ল্যান্টটিতে (এসএস-২) কর্মরত ছিলেন।

অদক্ষ অপ্রশিক্ষিত এসব কর্মীর কারণেই অনাকাঙ্গিত গ্যাস নির্গমণের ঘটনা ঘটেছিল কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি টিএসপি’র এমডি আতাউর রহমান। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যা পাওয়া যাবে, সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply