২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:২৪/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৬:২৪ অপরাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণ আটক আসামীদের অপরাধ স্বীকার ডাকাতি করতে ঢুকে গণধর্ষণ

     

 

শংকর চৌধুরী.খাগড়াছড়ি

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বলপাইয়া আদাম এলাকায় চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও ডাকাতির পেছনে সা¤প্রদায়িক কোন উদ্দেশ্য ছিল না। ডাকাতি করতে ঢুকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতার হওয়া আসামীরা। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সাতজনই বিভিন্ন মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামি। তারা অস্ত্র, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে সাজাভোগ করেছে। কারাগারে থাকাকালীন আসামিদের মধ্যে পরিচয় হয়। জেলখানা থেকে বের হয়ে তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

আজ রোববার সকালে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, রামগড় উপজেলার তৈচালা পাড়ার মৃত আবুল কাশেম এর ছেলে মো: নুরুল আমিন (৪০), খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কুমিল্লাটিলা (আনসার ক্যাম্প) ২নং ওয়ার্ডের মৃত আকবর আলীর ছেলে মো: বেলাল হোসেন (২৩), গুইমারা উপজেলার বড় পিলাক ২নং হাফছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মো: ইমরান হোসেনের ছেলে মো: ইকবাল হোসেন (২১), মাটিরাঙ্গা আমতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মো: হাবিল মিয়ার ছেলে মো: আব্দুল হালিম (২৮), গুইমারার পশ্চিম বড় পিলাক ২নং হাফছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের’র ছেলে মো: শাহিন মিয়া (১৯), রামগড় পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের দারোগা পাড়ার আহম্মদ উল্লাহর ছেলে মো: অন্তর (২০) এবং মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মুসলিমপাড়ার শামসুল হক’র ছেলে মো: আব্দুর রশিদ (৩৭)।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ আরো জানান, বুধবার রাতে মামলার প্রধান আসামি নুরুল আমিনের নেতৃত্বে মো. বেলাল হোসেন, মো. ইকবাল হোসেন, মো. আবদুল হালিম, শাহিন মিয়া, মো. অন্তর, আব্দুর রশীদসহ ৯ জন সংঘটিত হয়। এরা মাটিরাঙা থেকে সিএনজি (অটোরিকশায়) ২০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলবাড়ি ইউনিয়নসংলগ্ন বলপাইয়া আদাম ভিকটিমের বাড়িতে ঢুকে। উচুঁ দেয়াল টপকে প্রথমে শাবল, কোরাবারি ও দা দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে। শব্দ শুনে ভিকটিমের মা-বাবা চেঁচামেচি করলে তাদেরকে হাত-পা ও মুখ বেধেঁ ফেলে এবং পাশের কক্ষে থাকা তাদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীর হাত-পা ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে। ধর্ষণে পালাক্রমে ৯ জনই অংশ নেয়। এদের মধ্যে কয়েকজন একাধিকবার প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করে। প্রায় ২ ঘণ্টা বাড়ির ভেতরে অবস্থান করে। স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও মোবাইল লুটপাট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের অভিযানে স্থানীয় মানুষ সহযোগিতা করেছে বলেই দ্রæত অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঘটনার পর থেকেই আসামিদের আটক করতে তৎপর হয় পুলিশ। এবং ২৪ ঘটনার মধ্যেই খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি মো: নুরুল আমিনকে সহ সাতজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে, খাগড়াছড়ি সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ। আসামীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি লুটপাট হওয়া মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার এজহারে উল্লেখিত অভিযোগের সাথে আসামীদের স্বীকারোক্তির মিল রয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং বাকী দুই আসামীকেও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

খাগড়াছড়ি পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার) ও পিপিএম (বার) উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণ ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা প্রত্যেকে পেশাদার অপরাধী। তারা পূর্বকল্পিত ও সংঘটিত হয়ে ডাকাতি ও গণধর্ষণের এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের মুখোমুখি করা হবে। ধর্ষকদের রাজনৈতিক পরিচয় কি সেটি পুলিশের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। অপরাধীরা যে অপরাধ করেছে, তার জন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এ ঘটনায় কেউ যাতে সা¤প্রদায়িকতা না ছড়াতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহবান জানান তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: গোলাম আফসার জানান, আসামিদের বিকেলের মধ্যেই আদালতে তোলা হবে। তারা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিলে রিমান্ড চাওয়া হবে না। এর আগে শনিবার আমলী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয় ধর্ষণের শিকার ওই নারী।

এদিকে, পাহাড় ও সমতলে সংগঠিত সকল ধর্ষণ ঘটনার বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম এবং বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল। এ সময় তারা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে খাগড়াছড়ি সদরের বলপাইয়া আদাম এলাকায় বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢুকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক নারীকে হাত পা বেঁধে গণধর্ষণ করা হয়। ঘটনার পর দিন বৃহস্পতিবার থানায় মামলা করে ধর্ষণের শিকার নারীর মা। মামলার ৯ আসামির মধ্যে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি দুজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply