১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:৪৪/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি কানেকটিকাটের ম্যানচেস্টার মসজিদ!

     

বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক:
নানা অনিয়ম আর সংবিধান বহির্ভুত কর্মকান্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদটি বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আল্লাহর ঘর মসজিদকে এই সংঘবদ্ধ চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে উক্ত মুসল্লিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। তা নাহলে যুগের পর যুগ সংঘবদ্ধ চক্রটির দ্বারা অনিয়ম আর সংবিধান বহির্ভুত কাজ চলতেই থাকবে।এভাবেই তারা মসজিদ পরিচালনা করবেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মত কাউকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদের চলামান পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য নাজমুল আহসান ফারুক এসব কথা বলেন।মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এখবর জানিয়েছে।
নাজমুল ফারুক বলেন, ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সেখানে আঞ্চলিকতা এতই প্রাধান্য পেয়েছে যে বর্তমানে তিনি সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেষ্টা থাকলেও সংখ্যালঘু হওয়ায় তার দ্বারা কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। মসজিদে কয়েক দফা অপ্রীতিকর ঘটনা এবং ইমামকে লাঞ্ছিতের ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক। আমি সব সময় ন্যায়ের পক্ষে। কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না। সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে থাকি কিন্তু কে শোনে কার কথা? উক্ত সংঘবদ্ধ চক্রটির কাছে তার মত অনেকেই অসহায় বলে উল্লেখ করেন ফারুক।
মসজিদের সম্পাদক পদ থেকে আশিকুর রহমান আশিকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফারুক বলেন, সম্পাদকের পদত্যাগের কথা তিনি লোকমুখে শুনেছেন। দাপ্তরিক নিয়মে কমিটির পক্ষ থেকে কেউ তাকে এ কথা জানান নি। এটা সভাপতি কিংবা সহ সভাপতির দায়িত্ব কিন্তু  তাদের কেউই তাকে জানান নি। তিনি লোকমুখেই শুনেছেন নতুন সম্পাদক নিয়োগের কথা। এ ব্যাপারেও তিনি কিছুই জানেন না।
ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ফারুক আরো বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্বই হচ্ছে নতুন কমিটির নির্বাচন, নতুন নিয়োগ এবং কারো নিয়োগ বাতিল করা। তিনি ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদ পরিচালনা কমিটির ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য হয়েও দুই মাসেও সম্পাদক আশিকুর রহমানের পদত্যাগ ও নতুন সম্পাদক নিয়োগের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এটি একটি দুখঃজনক ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি মনে করেন নতুন কমিটি গঠনের সময় যদি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের প্রয়োজন হয় তাহলে নতুন সম্পাদক নিয়োগের ব্যাপারে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের না জানানোর ব্যাপারটি রহস্যজনক। এ ব্যাপারে তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের আরেকজন সদস্য আব্দুল কাইয়ুমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু আব্দুল কাইয়ুমও সম্পাদক আশিকুর রহমানের পদত্যাগ ও নতুন সম্পাদক নিয়োগের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান ফারুক।
ম্যানচেস্টার বায়তুল মামুর মসজিদ পরিচালনা কমিটি কর্তৃক ৫ জন মুসল্লিকে সদস্যপদ বাতিলের হুমকি দিয়ে উকিল নোটিশ পাঠানো প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, এ ব্যাপারেও তিনি কিছুই জানেন না। কোন সভায় এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ ধরনের কোন সিদ্ধান্তে তিনি রাজি হবেন না বলেই তাকে জানানো হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রহমান তুহিন বলেন, ৫ জন মুসল্লিকে উকিল নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে স্যোসাল মিডিয়ায় কে কি পোষ্ট দিয়েছে তা উল্লেখ না করে সবাইকে ঢালাও ভাবে নোটিশ পাঠানো ঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করেন তুহিন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন’২০ শুক্রবার বিকেলে তিন বছর মেয়াদি নতুন কমিটি গঠন করার সময় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ‘শয়তান’ বলাকে কেন্দ্র করে কমিটির সদস্য ও মুসল্লিদের মাঝে হট্টগোল ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একই মসজিদে এর আগেও কয়েক দফা অপ্রীতিকর ঘটনাসহ কোষাধ্যক্ষের হাতে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত হবার ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানান,মসজিদের নতুন কমিটি গঠন করার জন্য ওইদিন সাধারন সভা আহবান করা হয়। বাদ আছর সভা শুরু হলে মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান শান্তিপূর্ণভাবেই সভা পরিচালনা করছিলেন। মাগরিব নামাজের পুর্ব পযর্ন্ত কোন প্রকার সমস্যা দেখা যায়নি।বাদ মাগরিব আবারো সভা কার্য শুরু হয়। মুসল্লিদের পক্ষ থেকে চাঁদা ভিত্তিক (গুড স্টান্ডিং) মসজিদের সদস্য ভোটারের মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১ বছর করে সংবিধানের কিছু নিয়মকানুন পরিবর্তনের দাবি উঠে। এ প্রস্তাবটির পক্ষে উপস্থিত অধিকাংশ মুসল্লি তাদের সমর্থন দিলেও কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদধারী তারেক আম্বিয়া ও তার ভাই তৌফিফুল আম্বিয়ার সমর্থক ও নিকটাত্মীয়রা উক্ত প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। উক্ত সাধারন সভায় সংবিধান সংশোধন ও সংবিধান বহির্ভুত কাযর্ক্রমের উপর মুসল্লিগণ বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। মুসল্লিগণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তারেক আম্বিয়ার ইশারায় তার চাচাত ভাই মইনুল,এনাম,নাজমুল প্রশ্নকারিদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে নাজেহাল করে তোলেন। এক পর্যায়ে তারেক আম্বিয়া ও মইনুল ইসলাম কয়েকজন মুস্ললিকে উদ্দেশ্যে করে শয়তান বলেন। তাদের এমন কথায় অন্য সদস্য ও মুসল্লিরা প্রতিবাদ করতে গেলে উপয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। মারমুখি হয়ে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চলে উভয় পক্ষে। এক পর্যায়ে প্রচুর হট্টগোল শুরু হয়।
মসজিদ কমিটির সদস্য ও মুসল্লি হারুন আহমেদ ও সরকার মামুন জানান, কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া ও তৌফিফুল আম্বিয়া এবং তাদের চাচাত ভাই মইনুল,নাজমুল ও এনাম উক্ত শান্তিপূর্ণ সভায় বিশৃংখলার সৃষ্টি করেন। বাংলা সিনেমার খল নায়কদের মতো দুই দফা মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করেন। এতে মুসল্লিগন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তারেক-টিপু তাদের লাঠিয়াল চাচাত ভাইদেরকে মসজিদ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান হট্টগোল থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে অন্যান্যদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কমিটি গঠনের এ সভা ভুন্ডুল হলেও অধিকাংশ মুসল্লিদের অনুপস্থিতিতেই জোরপুর্বক এবং অবৈধভাবে আগামী ৩ বছরের জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমানের কাছে শুক্রবারের উক্ত ঘটনার বর্ণনা জানতে চাওয়া হলে তিনি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, উক্ত ঘটনার জন্য তিনিই দায়ী। কারন পদাধিকার বলে তিনি উক্ত সভাটি পরিচালনা করছিলেন। সভার কার্য চলাকালীন সময় দুই গ্রুপের লোকজনই উপস্থিত ছিলেন। এক সময় মইনুল ইসলাম নামের এক মুসল্লি ও সদস্য বলে ওঠেন, এখানে অনেক শয়তানও আছে। এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সদস্য ও মুসল্লি হারুন আহমেদ বলেন শয়তান তোমাদের মধ্যেও রয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয় এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মারমুখি হয়ে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চলে উভয় পক্ষে। এক পর্যায়ে প্রচুর হট্টগোল শুরু হয়। তবে তিনি হট্টগোল থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে নিজেকেই দায়ী মনে করেন।
এদিকে, গত বছর ১২ অক্টোবর’১৯ মসজিদ কমিটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া সাবেক পেশ ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদকে অকারণে লাঞ্ছিত করেন। উক্ত ঘটনাটি কানেকটিকাটসহ উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ মুসলমান কমিউনিটিতে প্রচুর সাড়া পড়ে। অনেকেই এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেন।
২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে বায়তুল মামুর মসজিদের পেশ ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জোবায়ের আহমেদ প্রতি সপ্তাহের ন্যায় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ করাচ্ছিলেন। মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে আসার কথা থাকলেও প্রায় ১৫/২০ মিনিট বিলম্বে নিজ ছেলেকে নিয়ে আসেন মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া। তিনি দরজার কড়া নাড়তে থাকেন। ভেতর ক্লাশ চলছিল তাই কড়ার শব্দ বুঝতে পারেননি ইমাম জোবায়ের আহমেদ। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় ইমামের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারেক। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন ইমামকে।ইমাম তাকে ভদ্রভাবে কথার বলার অনুরোধ করলে তিনি আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, এক পর্যায়ে তারেক ইমামকে পশুর সঙ্গে তুলনা করেন। এর কারণে ইমাম জোবায়ের আহমেদ চরম লাঞ্ছিতবোধ করেন। মনে কষ্ট নিয়ে নিজ বাসায় ফিরে যান ইমাম। ওইদিন থেকে তিনি আর মসজিদে আসেননি। পরে অন্য আরেকজন ইমামকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মসজিদ কমিটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়ার ভাই তৌফিফুল আম্বিয়া টিপু তার একটি ফেসবুক পোষ্টের মাধ্যমেও ম্যানচেস্টার প্রবাসী বাংলাদেশি মুসল্লিদেরকে ‘শয়তান’ বলে গালাগালি করেন। 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply