২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ভোর ৫:৫৪/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

এ যেন প্রকৃতির বোবা কান্না

     

আকাশ ইকবাল:
রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে জনগণের জান এবং মালের ক্ষতি ও দুর্ভোগ শিখরে। কতদিনে পাহাড়ে বসবাসকারী সাধারণ মানুষগুলো এ ক্ষতি সেরে সামলিয়ে উঠবে, তা অনিশ্চিত! সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা সঞ্চয় দিয়ে গরীব মানুষগুলো পাহাড়ের কোলে ঘর বেঁধেছিল। স্বপ্ন বুনেছিল নতুন করে বাঁচার। পাহাড় ধসের সাথে সাথে তাদের স্বপ্নগুলোও সব চাপা পড়েছে। রাঙ্গামাটির আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পাহাড় থেকে পাহাড়ে চাপা কান্না গুমড়ে মুচড়ে উঠে। যারা মরে গিয়েছে,তারা বেঁচে গিয়েছে ! যারা বেঁচে আছে, তাদের সামনে নিকষ কালো অন্ধকার ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে! সে অন্ধকার ভবিষ্যৎকে উপেক্ষা করার সাধ্য কি এ অসহায় মানুষগুলোর আছে? বর্ষায় সৌন্দর্য বাসা বাঁধে পাহাড়ে। কত কবিতা, গান এ সৌন্দর্য বন্দনায়। এ বর্ষায়ও সৌন্দর্য আছে, তবে বড় নিষ্ঠুর , নির্মম! বর্ষা যেন তাদের চির শত্রু! বর্ষা যেন আতংক! স্বজন হারা মানুষের আহাজারির করুণ সুরে ভারী সে সুন্দর! আজ মানুষ কাঁদছে! এই যেন পাহাড়ের কান্না ! সে কান্না শোনার দায় তো ছিল রাষ্ট্রের। সে শুনেনি! সে জোর করে উন্নয়নের জোয়াল চাপিয়েছে পাহাড়ের কাঁধে। আজ যে অঝোর কান্না,তা অশ্রু হয়ে ঝরেছিল। পাহাড়ের সম্পদে লোভে চকচক করে উঠে ধধীদের চোখ। গজিয়ে উঠা ধনীদের ড্রইংরুম সেগুন কাঠের আসবাস ছাড়া যেন রঙহীন। লিজ দেওয়া হলো পাহাড়ের পর পাহাড় বাণিজ্যিকভাবে। প্রাকৃতিক বন উজাড় করে গড়ে উঠল রাবার, সেগুন, ফলের বাগান। তামাক চাষের রমরমা। পর্যটনের নামে যত্রতত্র হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পর্যটন স্পট। ইকোলজির বারোটা বাজিয়ে গালভরা নাম দেওয়া হলো ইকোট্যুরিজম। পুঁজি ও নিয়ন্ত্রণ-দুটোর প্রয়োজনে তৈরি করা হলো রাস্তার পর রাস্তা। তাও আবার পাহাড়ের পর পাহাড় কেঁটে। এত ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ, অথচ তার আগে পরিবেশে কি প্রভাব পড়বে, পাহাড়ের মাটির সইবে কিনা, কোনো সমীক্ষারই প্রয়োজন পড়ে না? আইন এখানে অন্ধ, বধির, কালো। ভবিষ্যতের প্রশ্ন অবান্তর। সবই জায়েজ উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে। এ উন্নয়ন মানুষ বোঝেনা, প্রকৃতি-পরিবেশ বোঝেনা। এ উন্নয়ন মানুষের কান্না শোনেনা, পাহাড়ের কান্না শোনেনা। যেন এই অন্নয়নের মনও নেই, কানও নেই। বুঝবে কিভাবে? সে বুঝে উন্নয়ন করতে পারলেই হলো। কিন্তু এটা বোঝার চেষ্টা করে না উন্নয়ন যে করছি, এই উন্নয়ন কি সাধারণ মানুষ, দেশবাসী ভোগ করতে পারবে? নাকি পরিবেশ নষ্ট করে যতটাই উন্নয়ন করছি তার থেকেও বেশি মাশুল দিতে হবে। আজ তার প্রমাণ! পাহাড় কেঁটে, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে মুনাফা লোভীদের কাছে পাহাড় বিক্রি করে পাহাড়ের বুকে যে আঘাত করা হয়েছে তার প্রতিশোধ। অনেকে বলে পাহাড় ধস একটা প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু আমি বলব, সচেতন মানুষ বলছে, এটা কোন প্রাকৃতিক ঘটনা নয়। এটা মুনাফা লোভী প্রকৃতি ধ্বংসকারী ধনীদের কর্মের জন্য ঘটেছে। আজ আমরা পরিবেশের কথা বলছি। পরিবেশের কথা বলতে গেলে আরো একটা বিষয় বার বার সামনে চলে আসে। যেখানে সুন্দরবনকে বাংলাদেশের ফুসফুস বলা হয়। একটা দেহ টিকে থাকার জন্য ফুসফুসের কতটা প্রয়োজন পড়ে তা একটা মানুষ খুব ভাল করে জানে। অসচেতন ব্যক্তি তার হেহের সুস্থতার ব্যপারে সচেতন নয় বলে খুব অল্প সময়ে দেহে বিভিন্ন রোগ বাঁধে। আর অকালে মৃত্যু বরণ করে। ঠিক একই ভাবে রাষ্ট্র তার অসচেতনতার জন্য একদিন পুরো রাষ্ট্রটাকেই ধ্বংস করে বসবে। প্রকৃতির উপর আঘাত করা হচ্ছে। প্রকৃতিও ছাড় দিবে না। এই আঘাতের প্রতিশোধ একদিন নিবে। রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সুন্দরবনের প্রতিটা প্রাণী হাহাকার করছে। বুক ভরা আর্তনাদ নিয়ে কান্না করছে। কিন্তু রাষ্ট্রের যে কান নেই, রাষ্ট্রতো কানে শোনে না। সে উদাহরণ হচ্ছে পাহাড়। সেই ষাটের দশক থেকে পাহাড়ের উপর যে বর্বর আঘাত করা হয়েছে হচ্ছে সেই আঘাতে প্রতিশোধ পাহাড় সুযোগ পেয়ে নিয়ে নিয়েছে। সুন্দরবনের উপর যে আঘাত হানছে, সেই আঘাতের প্রতিশোধও একদিন ঠিক নিয়ে নিবে। তখন আর আমাদের রাষ্ট্রের কিছু করার থাকবে না। রাষ্ট্র বড় জোর একদিন শোক প্রকাশ করতে পারবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply