২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:২৮/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৭:২৮ অপরাহ্ণ

করোনা মহামারীর অন্তিমকাল থেকে মানবজাতির মুক্তি কবে পাবে?

     

একবিংশ শতাব্দীর সব থেকে ভয়াল ও ভীতিকর মুহূর্তের মধ্যে মানুষের অন্তিম যাত্রা শুরু হয়েছে। এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুতে মানুষ নতুন বছরকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রতিক্ষায় ছিল।কিন্তু নতুন বছরের পূর্ব থেকেই এই শতাব্দীর কলঙ্কময় ও আতঙ্কিত ভয়াল চিত্র দেখতে হল এবং কোভিড-১৯ মহামারী পৃথিবীর মানুষ আক্রান্ত হল।চারিদিকে শুধু ভয় আর মৃত্যুর মিছিল ভেসে উঠল।যেখানে সেখানে লাশ পড়ে আছে,কেউ কাছে যায় না এবং ছুঁয়েও দেখে না।এমনকি অনেক লাশ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।এই চিত্র যে অসহ্য! এই দৃশ্য দেখার জন্য কি মানুষ বিংশ সালকে বরণ করার অধীর আগ্রহে ছিল?
এই মহামারী এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভীত স্তম্ভ নাড়িয়ে দিয়েছে।পৃথিবীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশকে (আমেরিকা, ইংল্যান্ড,জার্মান,চীন,ইতালি, ফ্রান্স) অচলাবস্থা করে দিয়েছে।তবে সেদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা প্রথম দিকে ভালো ছিল কিন্তু আমাদের দেশের কিছু বিবেকহীন(পশু নামক)মানুষের জন্য দেশ ও জাতি আতঙ্কিত। এদের মূর্খতার কারণে আজকে দেশের বেহাল অবস্থা এবং হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।প্রতিটি মানুষের মধ্যে মৃত্যুর ভয়,মৃত্যু মানুষের খুব নিকটে,মনে হচ্ছে মানুষ ও মৃত্যু একটি মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। মানুষজন বাসা থেকে বের হতে ভয় করে,কারো কাছে যেতে ভয় করে,কারো সাথে কথা বলতে ভয় করে আর সবর্দা অন্তিম এক চিন্তা-ভাবনার বশবর্তী হয়ে আছে।নানা চিন্তা-ভাবনার কারণে বিভিন্ন রোগে জর্জরিত হয়ে করোনা রোগীর সংস্পর্শে সে নিজে যেমন আক্রান্ত হয়ে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে এবং সমাজ ও দেশের মানুষকেও বিপদগ্রস্ত করছে।ফলে দেশের মানুষ হুমকিস্বরূপ হচ্ছে।বর্তমানে বাংলাদেশে ২,৯২,৬২৫ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩,৯০৭ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পিছনে মূল কারণ হল অসচেতনা।মূলত অসচেতনতার কারণে মহামারী দিন দিন প্রকটভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।সাধারণত মানুষ কোনো বিধি-নিষেধ না মেনেই বাজারে যাওয়া,অযথা আড্ডা, ঘুরাফেরা ইত্যাদি করছে।সঠিকভাবে উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার না করার ফলে করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমাদের সমাজে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা ধর্মে কর্মে বিশ্বাসী(সাধারণত এদের বয়স ৫০ বা ততোধিক)এরা একদিকে নিজে সচেতন থাকবে না এবং অন্যকে সচেতন থাকতেও দেবে না।এরা সচেতন কাউকে দেখলে বলে ঈশ্বরকে ভয় কর না করোনাকে কিসের ভয়।তারা ধর্মকর্মের দোহাই দিয়ে বলে কপালে যা আছে তাই হবে।ঈশ্বর চাইলে মরণ হবে করোনায় কি হবে।ঈশ্বর বলেছেন,তোমাদের কর্মের উপর তোমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত।আমরা এমন এক জাতি সাফল্যের সময় নিজের ক্রেডিট জাহির করি আর ব্যর্থ হলে সৃষ্টিকর্তার উপর দোষ বর্তাই।তবে এটাই কি আমাদের প্রকৃত মনুষ্যত্ব?
করোনা-কালীন সময়ে সব থেকে বেশি চিন্তায় মগ্ন আছে শিক্ষার্থীরা।বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে।এরাই বেশি হতাশায় রয়েছে।কারণ সব কিছু মোটামুটি সচল থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।এদের মধ্যে সব থেকে বেশি হতাশায় রয়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরিক্ষার্থীরা।এবার ২০,৪৭,৭৭৯ জন ছাত্রছাত্রী এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে(পাশের হার ৮২.৮৭%) তারা চোখে-মুখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে বিদ্যালয়কে বিদায় জানিয়ে কলেজে পদার্পণ করবে কিন্তু নিমেষ মাঝেই তাদের স্বপ্নকে কালবৈশাখী ঝড়ের মত উপড়ে দিল করোনা নামক মহামারী।আবার পড়ালেখার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ১৪ লাখ এইচএসসি শিক্ষার্থীদের মনে হতাশার বীজ বপন করেছে এই করোনাভাইরাস।উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করবে কিন্তু তারা হতাশায় জর্জরিত।তারা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখবেন এবং দেশ জাতিকে উন্নতি ও সভ্যতার দিকে প্রসারিত করবেন এই স্বপ্নে বিভোর ছিল।কিন্তু তাদের স্বপ্ন আজ সুদূরপ্রসারী।তারা আজ হতাশার মর্ম জালে অবরুদ্ধ।
পরিশেষে বলি,মানবসভ্যতার ইতিহাসে কোন মহামারী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ ইত্যাদি মানবসভ্যতাকে পরাজিত করতে পারে নি।বর্তমানে ভয়াল-ঘূর্ণি কোভিড-১৯ মহামারী এর ব্যাতিক্রম হবে না।এই মহামারী ভাইরাস মানব সভ্যতার কাছে হার মানবে এবং বিপর্যস্ত হবে।যেহেতু করোনা মহামারীর ভ্যাক্সিন এখনো বের হয়নি।এতএব এই মহামারী থেকে মুক্তি পেতে হলে সচেতন থাকতে হবে।আমরা নিজেরা সচেতন থাকি,অন্যকে সচেতন করি এবং সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।আসুন আমরা নিজেরা বাঁচি এবং অন্যকে বাঁচাতে সাহায্য করি।
শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply