২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:১৭/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:১৭ অপরাহ্ণ

দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ মৎস্য কর্মকর্তা আলমের বিরুদ্ধে, অনুসন্ধানে দুদক

     

একে কাওসার, সিলেট ব্যুরো প্রধান: হবিগঞ্জ
দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছিলেন ৮৯ জন ভুক্তভোগী।
সেই অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে তার তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম তাদের নজরে রয়েছেন। তার দুর্নীতির অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশিত।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
শুক্রবার (২৪ জুলাই) দুপুরে দুদক হবিগঞ্জ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা  বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। চিঠি পাঠানো হয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরেও। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে মূল তদন্ত হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হবে।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন স্থানীয় একজন। এতে অভিযোগের সপক্ষে ৮৯ ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর ছিল।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদ আলম নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচারিতে কর্মরত অবস্থায় প্রতি বছর হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় পোনামাছ সরবরাহের মাধ্যমে দুর্নীতি করেছেন। ৩৮ লাখ টাকা লোপাট করেছেন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পুকুর পুনঃখনন বাবদ। আত্মসাৎ করেছেন যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ প্রায় তিন ৩ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে ১১টি উপজেলায় পোনা সরবরাহ করলেও সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন সামান্য টাকা।
এছাড়া সরকারি হ্যাচারির নিজস্ব পোনা বিক্রি করে নিম্নমানের হ্যাচারি থেকে রেনু পোনা সংগ্রহ করেন তিনি। একইসঙ্গে টার্গেটের অতিরিক্ত রেনু, পোনা ও মাছ বিক্রির টাকা যায় তারই পকেটেই। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পুকুর পুনঃখনন দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে উদাও করেছেন সরকারি অর্থ। হ্যাচারির সামনে খোলা জায়গা অনুমোদন ছাড়া বহিরাগত লোকদের কাছে লিজ দিয়ে সবজি চাষের ব্যবস্থা করে হাতিয়েছেন আরও টাকা। শুধু এসবই নয়, মোহাম্মদ আলম হ্যাচারির বড় বড় গাছ বিক্রির মাধ্যমেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় ওই অভিযোগপত্রে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে অফিস মেরামত দেখিয়ে লুটপাট করেছেন মোহাম্মদ আলম। সরকারি কোয়ার্টার ব্যবহারে সম্মানি থেকে বিধি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া কর্তনের নিয়ম থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি তা করছেন না। এছাড়া ২০১৬ সালের সেপ্টম্বর থেকে ছয় মাসে রাজস্ব ও প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা কোনো কাজ না করেই ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন।
এছাড়া মোহাম্মদ আলম বানিয়াচং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় আবেদনে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম দীর্ঘদিন এক কর্মস্থলে চাকরির সুবাধে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, এমন অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন অভিযুক্ত আলম। কিন্তু এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।
পরবর্তীকালে তিনি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি চৌধুরী মো. মাসুদ আলী ফরহাদ ও বাংলানিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বদরুল আলমকে। এরপর মামলাটি তদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার পর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে আন্দোলন করছে হবিগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছেন তারা। মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও রিপোর্টার্স ইউনিটির ব্যানারে। তাতে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মৎস্য কর্মকর্তা আলমের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাজাদা খসরু  বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্তও হয়েছে। তবে প্রতিবেদন আমাকে দেওয়া হয়নি। এছাড়া মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন আপনি জানেন কি-না, প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু মনে নেই।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply