২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ২:১৯/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

মুজিব শতবর্ষে এসেও সামাজিক স্বীকৃতি ভাতাভোগির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না বীর মুক্তিযোদ্ধা দানু

     

লামা সংবাদদাতা
লামায় ভাতাভোগির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না বীর মুক্তিযোদ্ধা দানু মিয়া মজুমদার। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে  মুজিব শর্তবর্ষেও ভাতাভোগির তালিকায় ঠাঁই হয়নি তার নাম। আর ভাতাভোগি না হওয়ার কারণে সামাজিক স্বীকৃতিও মিলছেনা।
ইতিহাসে নাম থাকলেও রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে প্রাপ্য মর্যদা থেকে বঞ্চিত অনেক বীরযোদ্ধা। স্বাধীকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে
পড়েছিলো বীর বাঙ্গালীরা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ইতিহাস যাঁরা লিখেছেন; তারাতো কারো কথায় ইতিহাস লিখেননি। ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া মুক্তি
সংগ্রামের ঘটনা প্রবাহ লিখেছিলেন, সেটাই ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসে নাম থাকলেও অনেকেই আবার বিকৃত ইতিহাসের স্বীকার হয়েছে(। মুঠো
ফোনে এসব কথা জানালেন ২নং সেক্টরে যুদ্ধ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক কমান্ডার (কুমিল্লা সদর)। এই বীরযোদ্ধা আরো জানান, দেশে বহু মানুষ যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আবার অনেকে যুদ্ধ করেও লবিংএর অভাবে স্বীকৃতি বা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। পাকিস্তানের শোষনাত্যাচারমুক্ত দেশ চেয়েছিলেন কোটি বাঙ্গালী। ‘৭১ পরবর্তী সময়ে এসব বীর বাঙ্গালী হয়তো ভাবতে পারেননি; এক সময় মুক্তি সনদের এত মূল্যায়ন হবে। কিন্তু কতিপয় মানুষেরা এই সনদটিকে স্বার্থের ঢাল হিসেবে ব্যাবহারের জন্য ঠিকই যুদ্ধ না করেও যোদ্ধা হিসেবে সনদ সংগ্রহ করে রেখেছিলো। তিনি জানান, বাদ পড়াদের মধ্যে দানু মিয়া মজুমদার একজন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক জানান, ভারতের উদয়পুরে
দানুমিয়া আমার সাথে ট্রেনিং নিয়ে, দেশে ফিরে ৩ নং সেক্টর সিলেট হবিগঞ্জ চুনারোঘাট এলাকায় যুদ্ধে যোগ দেন এবং সে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। আমি ২ নং সেক্টরে থেকে যুদ্ধ করি।
দানু মিয়া মজুমদার এর জন্ম: ১৯৩১ সালে কুমিল্লা সদর উপজেলার বলইন বাজার আধরা ইউনিয়নে মজুমদার বাড়িতে তার জন্ম। তার বাবার নাম কালা মিয়া, মাতা- আসমা বেগম। তারা তিন ভাই এক বোন ছিলেন। জন্ম জেলা কুমিল্লা হলেও তিনি বসবাস করছেন বান্দরবানের লামা উপজেলায়। দেশ স্বাধীন এবং শত্রুমুক্ত; এই তৃপ্তি নিয়ে যৌবন কাটিয়েছেন। কখনো ভাবেননি সময় সংসার এত নিষ্ঠুর হবে। বর্তমানে তার বয়স ৯০ বছর। দুই স্ত্রী ৪ জন ছেলে, ৬ জন মেয়ে। অর্থাভাবে  কোন ছেলে মেয়েকে পড়া লেখা করাতে পারেননি। দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দানুমিয়া।

স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সামাজিক মর্যাদা পাচ্ছেন না দানু মিয়া। গেজেটে নাম থাকার পরেও রাজনৈতিক মতাদর্শের
কারণে রাষ্ট্রিয় সুযোগ বঞ্চিত তিনি। বান্দরবান জেলার লামা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড মধুঝিরি গ্রামে বাস করছেন এই বীর যোদ্ধা। তৎকালীন সাত কোটি বাঙ্গালীর স্বাধীন আশ্রয় পেতে রণাঙ্গনে জীবনবাজি রেখেছিলেন যে যোদ্ধা, ভাগ্যের কাছে পরাজিত সে আজ স্বাধীন অবয়বে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করছেন। এই বীরযোদ্ধার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে এই যোদ্ধা ৩ নং সেক্টর সিলেট হবিগঞ্জ চুনারোঘাট রণাঙ্গনে যুদ্ধরত ছিলেন। তার সাব সেক্টর নং- ২২, এফএফ নং-৮১৫। ১৯৮৭ ইং সালের ৩রা জুন প্রকাশিত জাতীয় তালিকা নং-৩৭, ভারতীয় প্রামান্য দলিল বই নং-৩, ক্রমিং নং-২৬৫৭৯। বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত আগষ্ট ২৯/২০০৫ ইং, নং-৭৭০। মুক্তিবার্তা ১৯৯৯ ইং, ৩১ শে জানুয়ারি, ক্রমিক নং-
০৫০৩০৩০২৪৪, ইবি আরসি নং-২১৩১। এছাড়াও মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনি ও স্বারাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত সনদ রয়েছে তার কাছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা দানুমিয়া জানান, বিগত ২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অনুযায়ী তিনি, ডাটাবেইজ (ভাতাভোগি মুক্তিযোদ্ধার
তথ্য) ফরম পুরণ করে জমা করতে গেলে, তা জমা নেননি সংশ্লিষ্টরা। ভাতাভোগি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করাতে জাতির জনক
কণ্যা শেখ হাসিনার একান্ত হস্তক্ষেপ কামণা করেছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা দানুমিয়া। রাজনৈতিক বৈরিতা নয়, স্বাধীন দেশের একজন সংগ্রামী নাগরিক
হিসেবে এই বীর যোদ্ধাকে ভাতাভোগি করে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়া হোক, এমনটা প্রত্যাশা আমাদের। বিষয়টি বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা নজরে আনা প্রয়োজন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply