২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ২:২৮/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

দূর্জয় করোনা

     

 এম. ওসমান 

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির এক ভয়াল থাবা। ‘উৎস বিন্দু’ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ চীনের অন্তর্গত উহান শহর। প্রান্তিক
জনগোষ্ঠীর এই এলাকায় প্রথম প্রকাশ পায় নোবেল করোনা ভাইরাস তার পরবর্তী সপ্তাহে কোভিড-১৯ রূপ নিয়ে নতুন নাম ধারন করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত এই করোনার আভিধানিক অর্থ মাথার মুকুট বা তাজ। করোনা শব্দটির ব্যুৎপত্তি গ্রীস থেকে। গতিশীল এই করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পায়নি বিশ্বের কোন দেশ বা জাতি। এমনকি ধর্মপ্রাণ অতি বাস্তববাদীরাও। অদৃশ্য এই শক্তিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গবেষনায় লিপ্ত বিশ্বের বড় বড় চিকিৎসা বিজ্ঞানী। গত ছয় মাসের নিরন্তর চেষ্টা প্রচেষ্টায় মিলেনি কোন প্রতিষেধক ভ্যাকসিন।
বিশ্বব্যাপী এই রোগ প্রতিরোধের দৃশ্যমান মিল পাওয়া যায় খানিক অন্তর হ্যান্ড স্যানিটাইজিং তরলে কবজি পর্যন্ত হস্তদ্বয় ধৌতকরণ, মুখে মাস্ক পরা, পুরোশরীর সুরক্ষিত পোষাক পরা এবং মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা ও জনাকীর্নতা বিমুখ হওয়া। বৈশ্বিক পরিস্থিতির হাল দশায় প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃতি মানুষের হীনমন্যতা, অমানবিকতা, মোহাচ্ছন্নতা, তমশাচ্ছন্নতা এবং ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা সহ প্রতিটি অজ্ঞতা সৃষ্ট বর্বর কর্মকান্ডকে নর্দমার রসাতলে নিক্ষেপ করে পৃথিবীময় অংকন করতে যাচ্ছে সভ্যতার এক সরল রেখা। যুক্তরাজ্যের গনিতবিদ ‘ম্যালথাস’ প্রণীত অধিক জনসংখ্যা সভ্যজাতির জন্য বিস্ফোরন এই মহাবিস্ফোরনের সত্যতা প্রকাশ পায় মহামারী করোনা উপলব্ধির মধ্য দিয়ে। সারা বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠছে সৌরম্য অট্রালিকা, রাজপ্রাসাদ, আকাশ চুম্বি শপিং মহল এবং সাধারন মানুষের ঠাসাঠাসি ঘর-বাড়ি। এই সব নির্মাণে প্রয়োজন গাছ, বাঁশ, মাটি এবং মাটির তৈরী ইট ও পাহাড়ের বালি।
এসব প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক বিষয় সমূহ যার যার সুরক্ষিত অবস্থান থেকে চ্যুত করা হলে সৌন্দর্য্যের যে শুধু ঘাটতি ঘটে তা নয় প্রকৃতির উপর অনৈতিক নির্যাতনের প্রভাবও পড়ে। অক্সিজেন প্রদেয় গাছ কেটে বন উজাড় করা হলে পক্ষান্তর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বেড়ে বিশ্বকে উত্তপ্ত করে তুলে যার পরিনাম ফল ভোগ করতে হয় মানুষ নামের আদর্শ প্রাণীদের। বিশ্বজুড়ে অদৃশ্য করোনা মহামারীর চিত্র তার একটি দৃষ্টান্ত। উচু উচু বিল্ডিং এর ভরতো পড়ছে ভুতলে এ ছাড়া পুরোবিশ্বের আটশত কোটি জনসংখ্যার ভরও বহন করছে এই পৃথিবী। পৃথিবীর নিজের ওজনের চেয়ে অধিক ওজনের ভর বহন করতে হচ্ছে তার পৃষ্ঠে থাকা বস্তুর। একজন মানুষ তার সক্ষমতা বহির্ভূত ওজন বহনে যেমন অপারগতার প্রকাশ করে বর্তমান পৃথিবীও তাই করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে দিয়ে অমানবিক নিঠুর, নির্বোধ মানুষদের প্রতি শাস্ত্যারোপ করে চলছে। এ দশায় মানুষ এখন নির্বাক।
প্রতিশোধের আগুন আর জ্বলছে না। প্রকৃতি পাচ্ছে স্বস্তি।সামুদ্রিক প্রাণী ডলফিন খেলছে সানন্দে। বৃক্ষ রাজিতে শোভাপাচ্ছে ঋতুগত ফুল ফলাদি। সমুদ্রে দৃশ্যত হচ্ছে তরঙ্গুচ্ছ্বাস। এই করোনা মানব জাতির জন্য আদর্শ এক পাঠ অভ্যাসের উপযুক্ত সময়। সভ্যতার বাঁক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এমন একটি সৌন্দর্য উপাদানের সময় উচু-নিচু জাতিভেদ পরিহার করে সম্প্রদায়মুক্ত বিশ্ব সমাজ গঠনে উদ্দোগ হওয়াই হউক মানব জাতির অনবদ্য অনন্য উপলদ্ধিবোধ। ‘মানুষ সম্পদ’ যতটুকু না তার চেয়ে বড় সত্য হওয়া চাই সভ্যতা, মানবতা। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী সকল
জাতিই এক আল্লাহর সৃষ্টি হলে মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে এতো মতভেদ কেন? আল্লাহর ইচ্ছার ওপর মানুষের অপশক্তি প্রয়োগ
কেন? মানবজাতির ক্রান্তিকালেও থেমে নেই অনুজীব সম্প্রদায়ের অমানবিক সমালোচনা। অথচ বাঁচিবার তরে অপেক্ষামান ইহুদি
খ্রিষ্টানদের গবেষনালদ্ধ ভ্যাকসিন প্রয়োগ প্রত্যাশায়। মানব বিধ্বংসী অদৃশ্য করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে রপ্ত করে
চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া স্বাস্থ্যনীতি। নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে প্রার্থনা করা, হাত ধোয়াসহ আরো কতিপয় নীতি। ধর্মীয় বিধান আছে ইমাম সাহেবের সাথে নামাযের জামা’তে ফাঁক ফাঁক করে দাঁড়ালে শয়তান ঠাঁই পেয়ে যায়। সাধারন্যে উত্থিত প্রশ্ন- কোভিড-১৯ এর সময়কালে শয়তানের অবস্থান কোথায়? পাশাপাশি দুই নামাযীর মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক পাওয়াই ফাঁকতালে ইবলিশ শয়তান খালিস্থান পূরণ করছে কিনা সংশয় প্রতিক্ষন না তো? তজ্জন্যই বুঝি স্ব স্ব বাসগৃহে প্রার্থনা করার নির্দেশ জাতীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের।

১। করোনা মোকাবেলায় লড়াকু সৈনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিঞ্চিৎ ভীত-সন্ত্রস্ত হননি। হত দরিদ্র কোটি মানুষের প্রতিটি মানুষ যেন না খেয়ে না থাকে সেই ব্যবস্থা মাথায় রেখে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী।
২। পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রদানের জন্য হাসপাতলগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত চিকিৎসক।
৩। রেড জোন এলাকায় লক ডাউন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মাঠে
নামানো হয়েছে সামরিক বাহিনীর দল ও পুলিশ বাহিনী। ৪। বিদেশ আগত কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের পরিচর্যা,
পরিসেবা ও পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় থানা পুলিশদের।
৫। সুস্থ মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেছেন গুজবে কান দিবেন না।
৬। বিশ্ব স্বাস্থ্যনীতির বিধি মেনে চলুন। মাস্ক পড়ুন, ঘন ঘন
হাত ধুয়ে নিজে করোনামুক্ত থাকুন এবং অন্যকে করোনামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রনোদিত করুন। মানুষের
সেবা মানুষই করুক, জাতিভেদ দূর হউক, জেগে উঠুক মানবতা। বিশ্বময় বিস্তৃত হউক নির্মল মানবতার
হাত মানব কল্যানে।লেখক সমাজ সচেতন ব্যাক্তি , চান্দার পাড়া, বন্দর চট্টগ্রাম।

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply