১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:০৫/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব বাবা দিবস-২০১৯ পৃথিবীর সকল বাবা সুখী হউক বাবা আমার অর্ধ-পৃথিবীর সমান

     

 

১৮ জুন বিশ্ব বাবা দিবস ২০১৯। বাংলাদেশে ১৮ জুন বাবা দিবস পালিত হয়। একটি দিনেই বাবাকে শ্রদ্ধা, সম্মান, মর্যাদাবোধ প্রদান এটি আমার কাছে নগণ্য। তবে কি ঐ দিবসে বাবাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করব না ? তা হয় কি? অবশ্য, আধুনিক পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের সাথে ঐ দিন বাবাকে ভালোবাসার কথা স্মরণ করব। বাবাই আমার অর্ধ-পৃথিবীর সমান। আমার বাবা আমার কাছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভালোবাসা। যাঁর আলোকিত পথে আজো পথ হাঁটছি আমি। বাবার নাম নিরোধবরণ আচার্য। এলাকাতে পণ্ডিত নিরোধ বরণ আচার্য নামেই পরিচিত। আমার মা লীলাবতী আচার্য। দাদা পণ্ডিত রমেশচন্দ্র আচার্য। দাদি সুভদ্রারাণী আচার্য। আমাদের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের হাইদচকিয়া গ্রামে। বর্তমান পরিচিত সূর্যগিরি আশ্রম নামে। আগে আচার্য বাড়ি নামেই সকলের কাছে ব্যাপক পরিচিতি ছিল। হিন্দু কিংবা মুসলিম ও বৌদ্ধ সমাজের মাঝে বাবার পাণ্ডিত্যগিরি ব্যাপক প্রশংসনীয় ছিল। একনামে বাবাকে চিনতেন। বাবা ছিলেন আদর্শবাদী এক বটবৃক্ষের মতো। তাঁর ছায়াতলে আমরা চার ভাই, পাঁচ বোন মানুষ হয়েছি। বাবার আদর্শই আমাদের পথ চলা। বাবা আমাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আমরা চার ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে সকলেই  স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। আমরা চার ভাই, যথাক্রমে: পণ্ডিত অরুণ কুমার আাচর্য, পণ্ডিত কিরণ কুমার আচার্য, পণ্ডিত তরুণ কুমার আচার্য, পণ্ডিত বরুণ কুমার আচার্য বলাই। বোনরা হলেন: শিক্ষিকা রতœ রাণী আচার্য, স্বপ্ন রাণী আচার্য, শিক্ষিকা অর্চনা রাণী আচার্য, অঞ্জনা রাণী আচার্য, অ্যাডভোকেট রূপনা রাণী আচার্য। জীবনের বাস্তবতায় একে এক এক পেশায় নিয়োজিত। কিন্তু বাবার দেখানো পথে সমাজকর্ম, মানবতা ও আদর্শকে সামনে নিয়ে আমাদের সকলের পথ চলা। বাবা আজ আমাদের মাঝে নেই। নেই মাও। কিন্তু তাঁদের আদর্শ আমাদেরকে এখনো পথচ্যুত করতে পারেনি। আমরা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মানুষ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করেই চলছি। ১৮ জুন ২০১৯ বাবা দিবসের এই কর্মসূচিতে বাবাকেসহ পৃথিবীর সকল বাবাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও মর্যাদার আসনে প্রণাম জানাই। প্রয়াত সকল বাবাদের আত্মার সদগতি কামনা করি। যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের সকলের নিরোগ প্রার্থনা করি। আমার এই প্রবন্ধে বাবা দিবসের সারসংক্ষেপ ইতিহাসের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের কাছে দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরতে চাই। এর মাধ্যমে সকল মানুষ যেন বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল হয়। বৃদ্ধ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে নয়। নিজের সযত্নে গৃহে আলোকিতভাবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাবা-মাকে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার মাধ্যমে লালন-পালন হোক আমাদের সকলের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অতি পবিত্র ও মর্যাদাকর।
বিশ্ব বাবা দিবস প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়েই পালিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বুঝানোর জন্যই এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিবসটি প্রথম পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামে ওয়াশিংটনের এক ভদ্র মহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আছে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জেনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত আবার মাকে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর অর্থাৎ ১৯শে জুন ১৯১০ সাল থেকে বাবা দিবস পালন শুরু করেন।
বাংলাদেশে বাবা দিবস উপলক্ষে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় কবি স্বপন দত্ত ‘ও বাবা, বাবা গো’ শিরোনামে লিখেছেন:
বাবা তুমি আছো,
স্মৃতিতে আর রক্তকণায়
জীবন পথের গল্প শোনাও
উজল হয়ে আছো,
অনেক অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার মাঝে বাঁচো।
আমি তোমার স্বদেশ গড়ার
লাল-সবুজের ট্রেন,
নাই-বা থাকুক ময়ূরপঙ্খী, তুমিই হারিকেন।
আঁধার পথে আলোর দিশা তোমার চোখে দেখি,
বচন তোমার মানবতার ভুবন-পাতায় লেখি।
আমি তোমার দুরন্ত ঝড় সাগর-ভাসা চর,
তোমার বসত আমার মাঝেই শ্রান্তি-অবসর
বাবা তুমি আছো,
জীবন সুধায় জনম জনম আমার মাঝেই বাঁচো।
তাঁর কবিতায় বাবার প্রতি ভালোবাসা এত অনুপম ভাবে উঠে এসেছে, যা আমার ভাষায় বর্ণনা খুবই কঠিন। বাবা প্রসঙ্গে ও বাবা দিবসে প্রখ্যাত ছড়াকার ও কবি সনজীব বড়ুয়া ‘বটের ছায়া’ শিরোনামে এক কবিতায় তিনি লিখেছেন:
বাবা ছিলেন মাথার উপর মস্ত বটের ছায়া
যদিও তার ক্ষীণ তনু নয়তো বিশাল কায়া
আদর সোহাগ শাসন ছিলো বাবার হৃদয় জুড়ে
সবার জন্য সোহাগ শাসন বাঁধা একই সুরে।
জন্ম যে তার হয়নি জানি সোনার চামচ মুখে
ছোটবেলা মা হারিয়ে কেটেছে তার দুখে
দুচোখে তার দীপ্তি ছটা মুখে মধুর বাণী
সেই কারণে বাবা ছিলেন সবার প্রিয় জানি
ইস্কুলেতে দিয়েছিলেন মেধার পরিচয়
অনেক বাধা অনেক বিঘ্ন করেছিলেন জয়
দৈন্য এলো দানো হয়ে পড়ার হলো শেষ
অপূর্ণতার তৃষ্ণাটুকু জাগিয়ে মনে রেশ।
তারপরেতে কর্মজীবন সফল তিনি তাতে
চিত্ত হলো মঙ্গলময় বিত্ত ছিলো সাথে
দানের মাঝে পেতেন বাবা আনন্দ আর সুখ
পরের জন্য করলে কিছু ভরতো আপন বুক।
নিজের ছেলের পরের ছেলে ভাগ ছিলো না তার
সবার জন্য দিতেন তিনি স্নেহের উপহার
আমার বাবা অনেক জনের বাবা হলেন তাই
এই জীবনে আমিও তেমন বাবা হতে চাই।
সন্তানের জন্য পিতার ভালোবাসার কোন সীমা নেই। বাবার প্রতিও ভালোবাসার জন্য কোন দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবুও একটা দিন বাবার সাথে কাটুট শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। সিক্ত হোক পৃথিবীর সকল বাবারা। এ আশায় বিশ্বের প্রতিটি সন্তান পালন করে বিশ্ব বাবা দিবস। আর যাদের বাবা নেই তাদের কাছে তো বাবার স্মৃতি হয়ে উঠে মুখ্য। বাবার কথা মনে করে তারা বিমর্ষচিত্তে পালন করে বাবা দিবস। বাবা দিবস প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলেক্স আলীম ‘বাবার জন্য’ শিরোনামে লিখেছেন:
বাবা তুমি চলে গেলে
আমায় দিয়ে ফাঁকি
তোমার জন্য রাত্রি দিবস
আশায় আশায় থাকি।
তুমি বুঝি আকাশ নীলে
তারার সাথে আছো
আমায় ছেড়ে বাবা তুমি
কেমন করে বাঁচো?
প্রতিটি দিন মৃত্যু আমার
কষ্ট ভারী বুকে
তোমার যত স্মৃতি বাবা
খাতায় রাখি টুকে।
বাবা তুমি কোন সুদূরে
কোথায় তোমার বাসা
আসতে তুমি ফের কোনদিন
ছাড়িনি তো আশা।
পৃথিবীর সকল বাবা সুখী হোক, শান্তিতে থাকুক। আর যাঁরা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন সেই বাবাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমি এক বাবা হারা হতভাগ্য সন্তান। আমার বাবা ২০০৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। বাবা তুমি যেখানেই থাকো শান্তিতে ও সুখে থাকো।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply