২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:৫০/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

মৌলভীবাজার এনডিএফ- এর ৮ দফা দাবি

     

 

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মহামারীতে দেশে সামাজিক সংক্রমণ
(কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) পর্যায়ে সরকার পর্যাপ্ত পরীক্ষা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ,
পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ চিকিৎসা সুবিধা এবং কর্মহীন
সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা না করতে পারায় সামাজিক
সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে এক যুক্ত বিবৃতি
দিয়েছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির
নেতৃবৃন্দ। এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক
এবং সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস প্রেরিত যুক্ত বিবৃতিতে বলেন সরকারের একের পর
এক ভুল পদক্ষেপ ও প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার প্রশ্ন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচেছ।
প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেছেন এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য মারাত্মক হতে পারে,
সেখানে এপ্রিল মাসেই গার্মেন্টস, পাটকল, ইফতারি বিক্রির জন্য রেস্টুরেন্ট খোলে
দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক হয়েছে সে প্রশ্ন থাকছেই। ইতিমধ্যে ডাক্তাররা
ক্ষোভ প্রকাশ করে বার বার দাবির মুখেও পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা
সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
বিশেষ করে আমাদের দেশের বড় একটি অংশ রোগীর লক্ষণ না দেখা গেলেও আক্রান্ত হওয়ার
তথ্য জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কভিড চিকিৎসা নির্ধারিত নয় এমন হাসপাতালের
অনেক ডাক্তার আক্রান্ত হচ্ছে এবং ঐ সকল হাসপাতাল বন্ধ করা হচ্ছে। সিলেট, খুলনা ও
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের চিকিৎসা প্রস্তুতি করোনার
আগ্রাসন প্রতিরোধের উপযোগিভাবে গড়ে তুলতে পারেনি। সিলেটে ডাঃ
মইনুদ্দিন আহম্মেদ এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় সরকারের চরম উদাসিনতায় মারা
যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদি দায়িত্বরত চিকিৎসকই সেবা না পায় তাহলে সাধারণ
মানুষের কী অবস্থা হতে পারে! সিলেট বিভাগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ নমুনা
সংগ্রহ করা হলেও ওসমানী মেডিকেলে দিনের সর্বোচ্চ ১৮০ টি পরীক্ষার সক্ষমতা
আছে। যার কারণে একদিকে সংগৃহিত নমুনা জমে থাকছে এবং সেই সব নমুনার
ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মোকাবেলায় “পরীক্ষা, পরীক্ষা
এবং পরীক্ষা” নীতির কথা বললেও এখন দেশে পর্যাপ্ত পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে না।
দেশের ৪৭ টি জেলায় আইসিইউ নেই উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ সকল প্রতিকূলতা
মোকাবেলা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাপক পরীক্ষা, শনাক্তদের বিচ্ছিন্নকরণ, জেলায়
জেলায় ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের নিশ্চয়তাসহ কভিড
আক্রান্ত রোগি বাদে অন্য রোগিদেরও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান এবং কর্মহীন
সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য মাথাপ্রতি ন্যূনতম খাদ্য, নগদ অর্থ
সহযোগিতা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে প্রকৃতপক্ষে সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন
করার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যথেষ্ট প্রস্তুতি
নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার ও মালিকপক্ষ কর্মহীন সকল শ্রমিক, শ্রমজীবী,
ক্ষেতমজুরদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মুখে ঘরে ঘরে খাদ্য
পৌছানোর কথা বললেও বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকেরা
বকেয়া বেতন ও খাদ্যের দাবিতে শ্রমিক-জনতা বিক্ষোভ করছে। আত্মহত্যার খবরও
পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। অনাহারক্লিষ্ট জনগণের প্রশ্ন -‘করোনা থেকে বাঁচতে
কী না খেয়ে মরবো?’ দেশের অধিকাংশ জেলাকে স্থানীয় প্রশাসন সরকারের

নির্দেশনায় কার্যত পুরাপুরি লকডাউন ঘোষণা করেছে ও কভিড শনাক্ত হয়েছে ৬০
জেলায়। অথচ মহামারী ঠেকাতে এখনও সামাজিক সংক্রমণ খুঁজে (ট্রেস) শনাক্ত ও
বিচ্ছিন্ন করতে পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী জ্বর
সর্দি কাশিতে প্রতিদিন গড়ে ১০/১৫ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। প্রতিদিনই
কভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে রোগি মারা যাচ্ছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে
যাদের পূর্বে শনাক্তকরণ ও সংক্রমণ ধরা বা সঙ্গনিরোধ প্রক্রিয়া করা হয়নি। অনেকে
অভিযোগ করছে তাদের আত্মীয়-স্বজন চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন, ডাক্তাররা
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত নয় বলেও লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করছে না। বর্তমান
পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতা (অন্য দেশের বিগত বা চলমান অবস্থা) দিয়ে বিশ্লেষণ অনুসারে
একে জাতীয় দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করা হচ্ছে না। সরকার এই পরিস্থিতিকে
এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা না করে ‘সাধারণ
ছুটি’ নামে কার্যত লকডাউন হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৬ এপ্রিল
‘বাংলাদেশ সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন-২০১৮’র ক্ষমতাবলে
সারাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। অথচ সরকারের প্রশাসন দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ অনুসারে বর্তমান পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ হিসাবে
বলছে না। অন্যদিকে সরকার যে ৯২ হাজার কোটি টাকার ‘প্রণোদনা’ ঘোষণা
করেছে তার সিংহভাগই ঋণ ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, যার বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্থ
সংখ্যাগরিষ্ঠরা পাবে কী না সংশয় রয়ে গেছে। ত্রাণের চাল লোপাটের ঘটনা অতীতের
সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে, সরকার লোক দেখানো পদক্ষেপ হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩৯
জন(২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) বরখাস্ত করেছে। এদিকে করোনা মহামারীতে পর্যাপ্ত খাদ্য
সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে এ‌প্রি‌লের শেষে
খাদ্য সঙ্কট দেখা দি‌বে বলে জানিয়েছে পিপিআরসি। তারা জরুরি খাদ্য
সহ‌যো‌গিতার কর্মসূ‌চি বাস্তবায়‌নের আহবান জানিয়েছে। এমতাবস্থায় জরুরী
ভিত্তিতে নিন্মোক্ত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করেত হবে। দাবিসমূহ-
১। সকল উপজেলায় ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা
করতে হবে। ন্যূনতম জেলা পর্যায় পর্যন্ত আইসিইউ বা নিবিড় পর্যবেক্ষণ
কেন্দ্র ও ভেন্টিলেটরসহ সকল চিকিৎসা সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
২। সকল শ্রমিক-শ্রমজীবী, বস্তিবাসীসহ নিম্ন মধ্যবিত্তদের রেশনিংয়ের
ব্যবস্থা ও ভূমিহীন-দরিদ্র কৃষকদের পর্যাপ্ত খাদ্য প্রণোদনা প্রদানসহ
গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। করোনা ছাড়াও অন্যান্য রোগের যথাযথ চিকিৎসার জন্য সকল চিকিৎসক,
স্বাস্থ্যকর্মি, পরিচ্ছন্ন কর্মিদের পর্যাপ্ত পিপিই’র ব্যবস্থা করতে হবে।
চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি দ্রুত চালু করতে হবে।
৪। এ সময় একই সাথে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা
নিতে হবে।
৫। ঋণ নয় কৃষকদের জন্য সরাসরি নগদ প্রণোদণা প্রদান করতে হবে। কৃষক ও
খামারীদের ফসল-পণ্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিপনন করতে হবে।
৬। চলতি বুরো মৌসুমে জরুরী ভিত্তি জরুরী ভিত্তিতে হাটে হাটে ক্রয় কেন্দ্র
খোলে কৃষকের নিকট হতে সরাসরি ধান ক্রয় করতে হবে। ধান ক্রয়ে সকল অনিয়ম ও
দূর্নীতি বন্ধ এবং আগামী ফসলের জন্য বিনাসুদে ঋণ, বীজ, সার প্রদান করতে
হবে।
৭। সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলতি বর্ষের সকল
ধরণের ফি মওক‚ফ করতে হবে।
৮। চা-বাগানে করোনা সংক্রণ শুরু হওয়ায় অবিলম্বে সকল চা ও রাবার শ্রমিকদের
মজুরি-রেশনসহ ছুটি প্রদান করতে হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply