বিশ্বরাজনীতি কি চীনের বিরুদ্ধে?
বিশ্বরাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে বায়োওয়েপন নামক অস্ত্র নোভেল করোনা ভাইরাস, পূর্বে মহামারি ভাইরাসের তালিকায় স্প্যানিশ ফ্লু, এশিয়ান ফ্লু, হংকং ফ্লু এবং সোয়াইন ফ্লু? নোভেল করোনা ভাইরাসের উদ্ভাবক হিসেবে আন্তর্জাতিক মহল দোষারোপ করছে চীনকেই?
চীনের উহান শহরে কোভিড-১৯-এর প্রথম ‘করোনা-হটস্পট’ হিসেবে বিশ্বের নজরে আসে। উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি (WIV), যা চীনের একমাত্র মারণ-ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চালায়।
আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায় দাবি করছে, চীন সরকার আধিপত্য বিস্তারে সুপরিকল্পিতভাবে বায়োলজিক্যাল মারণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিল বিশ্বরাজনীতিকে থমকে দিতে। বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে মারাত্মক সংকটে, হিমশিম খাচ্ছে টিকিয়ে রাখতে।
অন্যদিকে চীন সরকার অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতি বাজারের মন্দা কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি বাজারকে চাঙ্গা করতে, উহান শহর এখন লকডাউন আওতামুক্ত, স্বাভাবিক প্রায় গোটা চীন। যা সন্দেহের নজরে দেখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব রাজনীতিবিদরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন-রাশিয়ার যুদ্ধটা অনেক আগে থেকেই। উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটো (NATO)-এর সীমান্ত পূর্ব দিকে বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে পড়ে রাশিয়ার। ন্যাটোর সদস্যের তালিকায় আছে উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপীয় কিছু দেশ, এছাড়াও তুরস্ক ও আলবেনিয়া। রাশিয়া ন্যাটোর অ্যাসোসিয়েট সদস্য হলেও বর্তমানে সদস্য নয়। রাশিয়ার ন্যাটোর বিরুদ্ধে ক্ষোভটা দেখা যায় মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই।
চীন সরকার হংকং বিক্ষোভের দায় ভার চাপিয়ে দেয় ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে। চীন-রাশিয়া রেষারেষি সম্পর্কে গেলেও মীমাংসায় ফিরে আসে নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার তাগিদেই? মস্কো এবং বেইজিং বিশ্বাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাবাদের অবসানের একমাত্র পথ উভয়ের ঐক্যবদ্ধতা। চীন-রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কটাই লক্ষণীয়। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহীদের পক্ষ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সরকারের পক্ষ নিয়ে ওয়াশিংটনকে পিছু হটতে বাধ্য করে রাশিয়া।
ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা যায় ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র, আটকাতে পারেনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার দলে যুক্ত হতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষোভ ধরে রাখতে না পেরেই ওয়াশিংটন বলে ফেলেন, একক পরাশক্তি হিসেবে ধরে রাখাই এখন মূল লক্ষ্য। রাশিয়া-চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে সামরিক বাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত রাখার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাবে ট্রাম্প প্রশাসন?
বিশ্বরাজনীতিতে করোনার ভাইরাসকে বায়োলজিক্যাল মারণাস্ত্র হিসেবে মনে করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে ‘চীনা-ভাইরাস’। যা চীনের এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মনে করছে ওয়াশিংটন।
অস্বীকার করে চীন বলে, সবাই এতে কাঠ যুক্ত করলে আগুন বেশি জ্বলে। করোনা ভাইরাস কোনো সীমানাকে সম্মান করে না বা বর্ণের পার্থক্য করে না। এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে বিশ্বের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
৭ জানুয়ারিতে ‘China Central Disease Control (China CDC) প্রথম নোভেল করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে সফল হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবহিত করে? ‘Online Covid-19 Knowledge Centre’ স্থাপন করেছে যা সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত দাবি চীনা সরকারের।
বিশ্বের অন্যতম ভেন্টিলেটর যন্ত্র সরবরাহকারী সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সরঞ্জাম তৈরিতে, কোভিড-১৯-এর ওষুধ ও ভ্যাকসিন গবেষণায়। সাহায্য করছে ১২০টিরও বেশি দেশকে। আন্তর্জাতিক মহল এগুলোকে চীনের আধিপত্য বিস্তারের পূর্ব পরিকল্পনা বলে আখ্যায়িত করছে।
NHK WORLD -JAPAN NEWS বিবৃতিতে, জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী তারো এসো ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার’ প্রধান তেদ্রোস ঘ্রেব্রেসাসকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়ে অনলাইন পিটিশন জারি করে, দোষ চীন সরকারের সংগ্রহীত তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করেই প্রকাশ যা WHO প্রধানের দায়িত্বহীনতাকে প্রকাশ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) চীনের পক্ষপাতিত্ব করছে ধারণা বিশ্ব-রাজনৈতিক মহলের। তারো এসো, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার’ নাম পরিবর্তন করে ‘চীনা স্বাস্থ্য সংস্থা’ রাখতে বলেন। চীন অর্থনৈতিক বাজারে এগিয়ে গেলেও কতটা ছিনিয়ে নিতে পারবে একক পরাশক্তি? অসম্ভব বলা যেতেই পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই একতরফাবাদ ছেড়ে দেবে না উলটো ওয়াশিংটন অবস্থান ধরে রাখার তাগিদে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে। ইতিপূর্বে আফগানিস্তান ও ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে কৌশলগত প্রমাণ দেখিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসন্ন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বিশ্বরাজনীতিতে ওয়াশিংটনের আধিপত্য ধরে রাখতে চায়। আগামীতে আরো ঘাতক বায়োলজিক্যাল মারণাস্ত্র নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে মাতামাতি দেখতে পারে গোটা বিশ্ব , ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে শক্তিশালী দেশগুলো থেকে।
লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়