২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:৩০/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৮:৩০ অপরাহ্ণ

চলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর গলায় মাল্যধানকারী কমরুন নেছা

     

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে

মুজিববর্ষেই নীরবে নিভৃতে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুনামগঞ্জের সংবর্ধনা সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গলে মাল্যধানকারী সাবেক মহকুমা ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে সুনামগঞ্জ মহকুমার ও প্রত্যেকটি থানার তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের কাছে কমরুন আপা বলে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। শহরের কাজিরপয়েন্ট আবাসিক এলাকার সুরমা ১৪নং বাসভবনে দীর্ঘদিন রোগ শয্যায় থাকার একপর্যায়ে ১০ এপ্রিল রোজ শুক্রবার বিকেল ৩ টা ৫২ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শাশুরবাড়ী ছাতক উপজেলার মধ্য গনেশপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে নামাজে যানাজা শেষে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। রাত ১২টার পরে তার একমাত্র পুত্র জিল্লুর রহমান সোহাগের দেয়া “মা হারা হলাম আজ ১০/৪/২০২০ইং রোজ শুক্রবার বিকেল ৩.৫২ মিনিটের সময়”শীরোনামে দেয়া ফেইসবুক পোষ্ট থেকে বিষয়টি জানতে পারেন এ প্রতিবেদক।
গত ২৬/১০/২০১৯ইং “একান্ত সাক্ষাৎকারে সুনামগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন/ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমিই জাতির জনকের গলায় মাল্যধান করি” শিরোনামে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ও বেশ কয়েকটি অনলাইন ওয়েবপোর্টালে সাক্ষাৎকারমূলক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এ প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন সানভীর আহমেদ তুষার,শামীম হোসেন,আবুল কাশেম মিয়া,মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজির আহমেদ হারুন,মিসেস ফারহানা জামান,জেলা যুবলীগ নেতা সবুজ কান্তি দাস,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ সুজন,শাহনূর মিয়া,নাসির উদ্দিন নাসির,শওকত হোসেন,স্বপ্না চৌধুরী,সাদিকুর রহমান রাহাত,আতাহার চৌধুরী,এম রুহুল আমিন,পিসি হায়দার,সৈয়দ সুমন,শাহ মোঃ রফিক,মোঃ জসীম চৌধুরী জসীম,কায়সার তালুকদার,অশোক কুমার দাশসহ দেশ বিদেশের আরো অনেকে। তন্মধ্যে ২ জনের দুটি মূল্যবান মন্তব্য ছিল এই যে,প্রধানমন্ত্রী সাদা মনের মানুষ খুঁজেন। উনাদের (কমরুন নেছা খাতুন) কেন চোখে দেখেননা। আসলে ঐ নেত্রীর দুর্দিনে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের অনেক কিছু করার ছিল। সিনিয়রদের সম্মান করেনা আফসোস তাই এখন আওয়ামীলীগের ওপরে আশা করেনা অনেকেই।
প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে সেদিন তিনি বলেছিলেন, “কোন কিছু পাওয়ার জন্য নয় একান্তই মনের তাগিদে ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য আমি ছাত্রলীগ করেছি। কিন্তু আজ দেখছি সুনামগঞ্জের মাটিতে জাতির জনকের আদর্শে আমরা যারা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম তাদের কেউই আজ আওয়ামীলীগে নেই। চক্রান্ত করে কৌশলে ত্যাগী নেতাদেরকে দূরে রাখা হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মূলধারার আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার দাবী জানাই। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ শহরের কাজিরপয়েন্টস্থিত বাসভবনে এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে একথাগুলো বলেছেন,১৯৭১-৭২ ইং সনে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী মালেক-ইছকন্দর রাজা প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী সাবেক মহকুমা ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন। সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগের নারীনেত্রীদের নেটওয়ার্কের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসী সাংবাদিক ও জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য ইমানুজ্জামান চৌধুরী মহী ও মহকুমা ছাত্রলীগের ২ বারের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারন সম্পাদক জননেতা এডভোকেট মতিউর রহমান পীরের সাথে। তাদের কাছ থেকে ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন এর নামটি জানতে পেরে বহু অনুসন্ধানের পর সোজা তার বাসায় পৌছেন এ প্রতিবেদক।
ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে কমরুন আপা বলে পরিচিত কমরুন নেছা খাতুন ১৯৫০ সালের ১৫ জানুয়ারী জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী আব্দুর রশীদ ও মাতা মৃত ফাতেমা খাতুন। ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি হচ্ছেন পরিবারের সপ্তম সন্তান। তার আপন সহোদর আলী আকবরও সুনামগঞ্জ কলেজে ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে মারা যান ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর। তার বড় ভাই আলী আমজদ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ৫নং সেক্টরের অধীনস্থ সেলা সাবসেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন এ.এস হেলাল উদ্দিন ও কোম্পানী কমান্ডার একই উপজেলার হরিনাপাটি গ্রামের শহীদ চৌধুরী। ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ। ছাতক উপজেলার মধ্য গনেশপুর নিবাসী সাবেক বিআরডিবি কর্মকর্তা মোঃ সুজ্জাদুর রহমান এর সাথে জেলা শহরে অবস্থানকালেই তার বিবাহ হয়। বর্তমানে তারা ২ কন্যা ও ১ ছেলের জনক-জননী। তাদের একমাত্র পুত্র জিল্লুর রহমান সোহাগ ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সংগঠন ফাড়িয়া সুনামগঞ্জের সভাপতি। শহরের ষোলঘর কাজিরপয়েন্ট আবাসিক এলাকার সুরমা ১৪নং বাসভবনে তারা স্বপরিবারে বসবাস করেন।
১৯৫৫ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সক্রিয় নেতা,চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শহরের পরিচিত মুখ ব্যবসায়ী আফাজ মিয়া ছিলেন তার ফুফাতো ভাই। ১৯৬৭ সালে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে তিনি গ্রামের বাড়ী ছেড়ে ফুফুর বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়াতে আসেন। বড় ভাই আফাজ মিয়ার নির্দেশে ও ছাত্রলীগ সভাপতি নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহীর অনুপ্রেরণায় তিনি গার্লস হাইস্কুলে অধ্যয়নকালেই যোগ দেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। দক্ষ সাংগঠনিক প্রতিভার অধিকারী হিসেবে ছাত্রলীগের পতাকাতলে সমবেত করেন এস.কে রওশনারা (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী),হাছননগর নিবাসী কমলা চৌধুরী,হা¯œা কাজী,লায়েকা বেগম,উকিলপাড়া নিবাসী শাহানা চৌধুরী (আওয়ামীলীগ নেতা হায়দার চৌধুরী লিটনের বড় বোন),অন্য জেলার বাসিন্দা সেলিনা বেগম,আইভী পূরকায়স্থ,সোমপাড়া নিবাসী রতœা ভদ্র ও স্কুল ছাত্রী পলি বেগমসহ নাম না জানা আরো অনেক ছাত্রীকে। দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরীর কন্যা রুবাইদা চৌধুরী আরা ও আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা তামান্না আহমদ লীনাসহ মহকুমা আওয়ামীলীগ নেতাদের স্কুল কলেজে অধ্যয়নরত কন্যাদেরকেও ছাত্রলীগ রাজনীতিতে সক্রিয় করার ভূমিকা পালন করেন তিনি।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন আফাজ মার্কেট,পুরাতন কলেজ ও জেলা পরিষদ রেস্টহাউজেই আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সভা সমিতি সেমিনার হতো। আওয়ামীলীগের রাজনীতি পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থের যোগানদাতা ছিলেন ব্যবসায়ী আফাজ মিয়া,মতছিন মিয়া ও আরপিননগর নিবাসী তারা মিয়া চৌধুরী এ ৩ ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আওয়ামীলীগ ও স্বাধীন বাংলা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের নির্দেশে জীবনের ঝুকি নিয়েই শহরে থেকে যান আফাজ মিয়া। শহরে বসবাস করলেও তিনি ভারতের শরনার্থী ক্যাম্পে নিয়মিত টাকা পয়সা ও খাদ্যের যোগান দিতেন বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে। বিষয়টি স্থানীয় শান্তি কমিটি ও দালাল রাজাকারদের কাছ থেকে জেনে পাকবাহিনী তাকে জোরপূর্বক ধরে আনে শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে। এবং প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। জ্বালিয়ে দেয় তাঁর বাড়িঘর। পরে দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ করে মেজর মুত্তালিব এর নির্দেশে স্বাধীনতা বিরোধী অভিযোগে তাঁকে জেলে নেয়। তার একমাত্র জীপগাড়িটি পিটিস্কুল ক্যাম্পে নিয়ে রাখা হয়। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি সুজাত আহমদ চৌধুরী,নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী ও আলী আকবরগংদের সহযোগীতায় স্বাধীনতা বিরোধী অপবাদ এবং কারাঘার থেকে মুক্তি পান তিনি। তাঁর জীপগাড়িটি একবার পাঞ্জাবীরা ভেঙ্গে দেয়। আরেকবার হস্তান্তর করে থানায়। পরে এটি ছাত্রলীগ নেতারা সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করেন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এমএনএ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী। এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্র থেকে নজরুল ইসলাম ও সেন্টু নামের দুজন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে সুনামগঞ্জ পাটানো হয়। তারা উঠেন দেওয়ান সাহেবের বাসায়। নির্বাচন নিয়ে দেওয়ান সাব ও তার পরিবার অসম্ভব ব্যস্ত হয়ে উঠায় কেন্দ্রীয় মেহমানদের ঠিকমতো আদর আপ্যায়ন করার অসুবিধা হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী মেহমানদেরকে আফাজ মিয়ার বাসায় স্থানান্তর করেন। নিয়মিত খাবার দাবার পরিবেশনসহ তখন তাদেরকে দেখাশুনা করতেন ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ সদর আসনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিসেবে জনাব আব্দুজ জহুর সাহেব প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে জহুর সাহেবের স্ত্রীকে নিয়ে নৌকার পক্ষে গ্রামে গ্রামে গণ সংযোগে যেতেন এই ছাত্রলীগ নেত্রী।
আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা জননেতা হোসেন বখত এবং সাংবাদিক রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল হাই হাছন পছন্দ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন মা মাটি ও মানুষের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে উল্লেখ করে কমরুন নেছা খাতুন বলেন,সেদিন ছিল ১৯৭৩ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি শনিবার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঐদিন হেলিকপ্টারযোগে জীবনের শেষবারের মতো সুনামগঞ্জে শুভাগমন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। দলীয় প্রধান ও রাষ্ট্রনায়কের সম্মানার্থে সুনামগঞ্জের মুক্তিকামী ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে এক বিশাল গন সংবর্ধনা সমাবেশ এর আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা সমাবেশটিকে সাফল্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে সাবেক মন্ত্রী অক্ষয় কুমার দাসকে সভাপতি ও মুহাম্মদ আব্দুল হাইকে সাধারন সম্পাদক করে অভ্যর্থনা সমিতি নামে ১টি সংবর্ধনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি সম্পাদকের যৌথ নামে জাতির জনকের শুভাগমন বার্তা উপলক্ষ্যে ১টি হ্যান্ডবিল প্রকাশিত হয়। প্রচারপত্রটির নিম্নে লেখা হয় সৈয়দ দেলওয়ার হোসেন আহবায়ক প্রচার সাবকমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত এবং মোর্শেদী প্রেস বাসষ্ট্যান্ড সুনামগঞ্জ হতে মুদ্রিত। সুনামগঞ্জ এটিএম ফিল্ডে অনুষ্ঠিত ঐ সংবর্ধনা সমাবেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রী এমএজি ওসমানীসহ কেন্দ্রীয় ও সিলেট জেলা নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হন। সাবেক মন্ত্রী অক্ষয় কুমার দাশের সভাপতিত্বে ও আব্দুল হাই সাহেবের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিদের মধ্যে দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী,আব্দুল হেকিম চৌধুরী,আব্দুর রইছ,আব্দুজ জহুর ও শামসু মিয়া,স্থানীয় মহকুমা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে জননেতা হোসেন বখত,কাজী বশির উদ্দিন নানু মোক্তার,আছদ্দর আলী মোক্তার,আমার ভাই আফাজ উদ্দিন আহমদ,সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন,ছাত্রলীগ নেতা সুজাত আহমদ চৌধুরী,নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী,লালবাহিনী প্রধান শফিকুল হক চৌধুরী বাচ্চুসহ নাম না জানা আরো অনেক নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। ঐ সভায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমিই জাতির জনক এর গলায় মাল্যদান করি। এসময় সুনামগঞ্জে কোন ফুলের দোকান ছিলনা। নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী ভাই সিলেট থেকে ফুলের তোড়া এনে দেন। স্মরণকালের এই সংবর্ধনা সভায় জাতির জনককে স্বাগত জানিয়ে সুনামগঞ্জের পঞ্চরতœ বাউলের মধ্যমণি গানের স¤্রাট বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) পরিবেশন করেছিলেন,“ধন্য নেতা শেখ মুজিবুর বাঙ্গালীর নয়নমনি/ধন্য নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ কর্ণেল ওসমানী” এবং ধন্য নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীর পরান/গুনে শ্রেষ্ট মহান নেতা কি দিব তাঁর প্রতিদান”শীর্ষক দুটি দেশাত্ববোধক গান।
রাজাকার আলবদর কর্তৃক আফাজ সাহেবের বাসা থেকে লুটে নেয়া শখের খাবার টেবিল উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমার ভাইয়ের সর্বস্ব লুট করে নিয়েছিল পাক বাহিনী ও তার দোসররা। দেশ স্বাধীনের পর বেড়াতে যেয়ে আমাদের শখের সেই খাবার টেবিলটি দেখতে পাই সুনামগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক রঞ্জু স্যারের ডেইরী হোটেল সংলগ্ন বাসায়। রঞ্জু স্যারের স্ত্রী স্বপ্না দে এই টেবিলটিতেই আমাকে নাস্তা দেন। পরে আমি যখন টেবিলটি আমাদের বলে দাবী করি তখন স্বপ্না দে এই টেবিলটি আমাদেরকে ফেরত দেন।
জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন বলেন,আমি নেত্রী বা দলের কাছে কিছুই চাইনা। দোয়ারাবাজার থানার নূরপুর গ্রামের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভ্রাতা আলী আমজদ এর নামে একটি সড়ক এর নামকরণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদের কবরটিকে সুরমা নদীর ভাঙ্গন হতে স্থানান্তর করে সংস্কারসহ সংরক্ষণ এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। এবং এ দাবী জানাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিয়ে অনেক মূল্যবান দলিল ছিল কমরুন নেছা খাতুন এর কাছে। বর্তমানে সবগুলো না থাকলেও তিনি এখনও সযত্নে রেখেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সুনামগঞ্জ কলেজ শাখার একটি লিফলেট। এতে দেখা যায়,১৯৭১-৭২ইং সনে সুনামগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে অংশগ্রহন করে ছাত্রলীগ। ঐ নির্বাচনে ছাত্রলীগের পক্ষে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়েছিল প্রবলভাবে। নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাত্রলীগ প্যানেলের সেই লিফলেটটির একটি কপি তার মাধ্যমই প্রতিবেদকের হস্তগত হয়। ঐ প্রচারপত্রটিতে উল্লেখ করা হয়,“জয় বাংলা,জয় ছাত্রলীগ,জয় মালেক ইছকন্দর রাজা কেবিনেট। কলেজ সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনিত প্রার্থীদের নামের তালিকা ঃ-
১৯৭১-৭২ সাল
১। সহ-সভাপতি-মোঃ আব্দুল মালেক ২য় বর্ষ  স্নাতক কলা।
২। সাধারন সম্পাদক-দেওয়ান ইস্কন্দর রাজা চৌধুরী (সুবক্ত রাজা)
৩। সহ-সাধারন সম্পাদিকা-মিস্ কমরুন নেছা খাতুন,১ম বর্ষ ¯স্নাতককলা।
৪। ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক-বাবু প্রদীপ কুমার রায় (সেন্টু),১ম বর্ষ কলা
৫। ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদিকা-মিস্ এস.কে রৌশনারা বেগম ১ম বর্ষ স্নাতক কলা
৬। ক্রীড়া সম্পাদক-মোঃ আছদ্দর আলী,২য় বর্ষ বাণিজ্য
৭। নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক-মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরী,১ম বর্ষ স্নাতক কলা
৮। বিতর্ক ও আলোচনা সম্পাদক-মোঃ জামসেদ আলী,১ম বর্ষ  কলা।
৯। সাহিত্য ও ম্যাগাজিন সম্পাদক-মোঃ নুরুজ্জামান চৌধুরী (শাহী) ১ম বর্ষ কলা
১০। সমাজকল্যাণ সম্পাদক-মোঃ আব্দুস শহীদ,১ম বর্ষ কলা।
বাংলার রায় বাঙ্গালীর রায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ মনোনিত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়িত করুন ও কলেজ সমস্যার সমাধান করুন। ছাত্রলীগের জয় হবেই হবে। জয় বাংলা,জয় ছাত্রলীগ। বিনীত অনুরোধকারী হিসেবে লিফলেটটির ডানে সফিকুল চৌধুরী প্রাক্তন জেনারেল সেক্রেটারী ও ছাত্রলীগ কলেজ ইলেকসন পরিচালক এবং বামে মইন উদ্দিন,সেক্রেটারী ইলেকসন পরিচালনা কমিটি উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও খালেদ,আজিজ,বশির,আকামত,সাহানা,সেলিনা কর্তৃক প্রচারিত,গুলিস্তান প্রেস,সুনামগঞ্জ” হতে মুদ্রিত বলে উল্লেখ করা হয়।
এ নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুল মালেক সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মার্কুলী গ্রামের বাসিন্দা যিনি ৫ বছর আগে মৃত্যুবরন করেন। জিএস পদপ্রার্থী দেওয়ান ইছকন্দর রাজা চৌধুরী সুবক্ত রাজা সুনামগঞ্জ পৌরসভার তেঘরিয়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দা যিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি রব সুনামগঞ্জ জেলা শাখার বর্তমান সভাপতি। এজিএস পদপ্রার্থী কামরুন নাহার দোয়ারাবাজার উপজেলার নূরপুর নিবাসী। ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক-বাবু প্রদীপ কুমার রায় (সেন্টু) শহরের মোক্তারপাড়ার বাসিন্দা, ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদিকা এস.কে রৌশনারা বেগম বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী, ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ আছদ্দর আলী সদর ইব্রাহিমপুর গ্রামের অকাল প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমির হোসেন রেজা, নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরী হবিগঞ্জের বাণিয়াচং থানার শাখাইতি গ্রাম নিবাসী যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি ও সাংবাদিক ছিলেন। বিতর্ক ও আলোচনা সম্পাদক-মোঃ জামসেদ আলী কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর থানার বাসিন্দা যিনি শহরের হাছননগর এলাকায় ডাঃ জালাল আহমদ সাহেবের বাসায় থাকতেন এবং এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। সাহিত্য ও ম্যাগাজিন সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান চৌধুরী (শাহী) শহরের উকিলপাড়াস্থ সুরমা ৪নং বাসভবনের বাসিন্দা যিনি মহকুমা ছাত্রলীগের ২ বারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বর্তমানে বসবাস করছেন আমেরিকায়। সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোঃ আব্দুস শহীদ,ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় গ্রামের বাসিন্দা। লিফলেটটিতে বর্ণিত অপরাপর প্রচারনাকারীরা ছিলেন দিরাই থানার খালেদ আহমদ,ষোলঘরের আজিজ আহমেদ, হাছননগরের আব্দুল হান্নান, হা¯œা কাজী,জামতলার বশির মিয়া,তেঘরিয়ার আকামত আলী,উকিলপাড়ার সাহানা বেগম ও সেলিনা বেগম প্রমুখ।
৩/১১/২০১৯ইং তারিখে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে নিউইয়র্ক আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী এ প্রতিবেদককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুন এর পুরো বক্তব্য সমর্থন ও তাঁর কাছে সংরক্ষিত লিফলেটটির সত্যতা নিশ্চিত করে করে বলেন,মেজর এমএ মোত্তালেব সম্পাদিত বিন্দু বিন্দু রক্তের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা জনমত নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতাম। পত্রিকাটির পুরো দায়িত্বেই ছিলাম আমি ও মনোয়ার বখত নেক। মাঝে মাঝে আমাদেরকে সহযোগীতা করতো ছাত্রলীগের আব্দূন নূর। পুরাতন কলেজস্থিত ছাত্রলীগ কার্যালয় ছিল আমাদের পত্রিকা অফিস। অন্যদিকে বিন্দু বিন্দু রক্তে প্রকাশিত হতো শান্তি কমিটির কার্যালয় থেকে। জনমত পত্রিকাটি আমরা প্রকাশ করতাম আফাজ উদ্দিন সাহেবের গুলিস্তান প্রেস থেকে। ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছার ভাই আলী হায়দর গুলিস্তান প্রেসে থাকতেন। তিনিই আমাদের পত্রিকাটি প্রকাশনার বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া আমরা ছাত্রলীগের কর্মীরা সূর্যের দেশ পত্রিকায় লেখালেখি ও প্রকাশনায় সহযোগীতা করতাম। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আফাজ উদ্দিন সাহেবের মতো অবদান আর কারো ছিলনা। তার মতো ভালো আওয়ামীলীগার আমি জীবনেও দেখিনি। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আফাজ উদ্দিন সাহেবেরই বোন কমরুন নেছা খাতুন এর অবদানও কম ছিলনা। আমি মেয়েদের মধ্যে এরকম আন্তরিক নিবেদিত ছাত্রলীগ নেত্রী আমার জীবনে খুব কমই দেখেছি। এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগ নেত্রী কমরুন নেছা খাতুনের মৃত্যুতে সুগভীর শোক প্রকাশ করেছেন,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাহান।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply