১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:৪৫/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৭:৪৫ অপরাহ্ণ

ভারত থেকে আমেরিকা কেমন লকডাউন হচ্ছে হিসেব দিল গুগল

     

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কার্যত সারা বিশ্বেই চলছে লকডাউন। শপিং মল, হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে গণ পরিবহণ, সবকিছুই প্রায় বন্ধ। তার জেরে কমেছে গতিশীলতা। বেড়েছে বাড়িতে থাকার প্রবণতা। কিন্তু সেই পার্থক্য কতটা তার একটা চিত্র তুলে ধরল গুগল। ১৩১টি দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে গুগল দেখিয়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পার্ক, থিয়েটার, অফিস থেকে শুরু করে মুদি বা ওষুধের দোকানে মানুষের যাতায়াত বা উপস্থিতি যেমন কমেছে, তেমনই বেড়েছে বাড়িতে থাকার হার। একই ভাবে কমেছে বাস, ট্রেন, মেট্রোর মতো গণ পরিবহণব্যবস্থাও। তবে ইরান এবং চিনে যেহেতু গুগল নিষিদ্ধ, তাই ওই দু’দেশের তথ্য পাওয়া যায়নি।

তথ্য জোগাড় করতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়েছে গুগল। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে কত লোক অবস্থান করছে, তার যোগফলের উপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে। সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৬ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ। তবে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিসেবে গুগল বলেছে, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

গুগলের চিফ হেল্থ অফিসার কারেন ডিসালভো তাঁর ব্লগে লিখেছেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহের প্রবণতা আমরা দেখেছি। তাতে দেখানো হয়েছে, কত শতাংশ মানুষের যাতায়াত কমেছে বা বেড়েছে। তবে সঠিক সংখ্যাটা জানানো হবে না।’’ গুগলের মতে, এই তথ্যের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি বোঝা সহজ হবে। পাশাপাশি কোন এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি, সেটা বিশ্লেষণ করে তাঁদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতেও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে সাহায্য করবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এখনও পর্য়ন্ত মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইটালিতে। আক্রান্তের সংখ্যাও বিপুল। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের প্রভাবও সবচেয়ে বেশি সেই ইটালিতেই। গুগলের হিসেবে বিনোদন ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানুষের যাতায়াত কমেছে ৯৪ শতাংশ। একই ভাবে মুদি ও ওষুধের দোকানে ৮৫ শতাংশ, পার্কে ৯০ শতাংশ, কর্মক্ষেত্রে ৬৩ শতাংশ কমেছে। গণ পরিবহণ, যেমন বাস, ট্রেন, মেট্রোর টার্মিনাসগুলিতে মানুষের যাতায়াত কমেছে ৮৭ শতাংশ। উল্টোদিকে বাড়িতে থাকার হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। মৃত্যু-হারে ইটালির পরেই রয়েছে স্পেন। সেখানকার পরিসংখ্যানও ইটালির কাছাকাছি। কোথাও সামান্য বেশি, কোনও ক্ষেত্রে কিছুটা কম।

 

বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়ানক আকার নিয়েছে আমেরিকায়। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আগেভাগে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই এত ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। গুগলের দেওয়া গতিশীলতার পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে সেই ছবিই। দেখা যাচ্ছে ইটালি স্পেনে যেখানে বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল-রেস্তোরাঁয় যাতায়াত কমেছে ৯০ শতাংশেরও বেশি, সেখানে আমেরিকায় কমেছে মাত্র ৪৭ শতাংশ। মুদি, ওষুধের দোকান, পার্ক, গণ পরিবহণ, সব ক্ষেত্রেই একই চিত্র। সব ক্ষেত্রেই ইটালি-স্পেনের অর্ধেকের মতো পরিসংখ্যান। যেমন বাড়িতে থাকার প্রবণতা বেড়েছে ১২ শতাংশ। ইটালি, স্পেনের ক্ষেত্রে সেটা যথাক্রমে ২৪ ও ২২%।

ভারত আগেভাগে লকডাউন ঘোষণা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিশ্বের প্রায় সব দেশই স্বীকার করেছে। মিলেছে হু-এর প্রশংসাও। গুগলের পরিসংখ্যানেও তার ছাপ। দেশে সংক্রমণ ইটালি, স্পেন বা আমেরিকার তুলনায় অনেক কম। কিন্তু তার পরেও লকডাউনের জেরে গতিশীলতা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এমনকি, সব বিভাগের গতিশীলতা কমার নিরিখে আমেরিকার চেয়ে ভাল অবস্থায় ভারত। যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁয় আমেরিকায় উপস্থিতির হার কমেছে ৪৭ শতাংশ, ভারতে ৭৭ শতাংশ। মুদি ও ওষুধের দোকানে আমেরিকায় কমেছে ৭৭ শতাংশ, ভারতে কমেছে ৬৫ শতাংশ। বাড়িতে থাকার প্রবণতা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ভারত ও আমেরিকায় একই– ২২ শতাংশ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

অন্য দিকে যে সব দেশে ব্যাপক আকারে ছড়ায়নি এবং লকডাউন ঘোষণা হয়নি, তেমন দেশের পরিসংখ্যানও রয়েছে। কিন্তু করোনার আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, সেই সব দেশেও কমেছে গতিশীলতা। যেমন জাপান এবং সুইডেনে তেমন কোনও নিয়ন্ত্রণ জারি হয়নি। তবু মোটের উপর ২৫ শতাংশ গতিশীলতা কমেছে। আবার করোনা ছড়ালেও আক্রান্ত এবং সংক্রমণের শৃঙ্খল খুঁজে বের করে ব্যাপক হারে টেস্ট করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ফলে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তেমন কিছু বিধিনিষেধ ছিল না। ফলে সেখানে গতিশীলতা কমেছে মাত্র ১৯ শতাংশ। আনন্দবাজার থেকে

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply