২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:১২/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৩:১২ অপরাহ্ণ

এই মুহুর্তে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে

     

মাহমুদুল হক আনসারী
সারা পৃথিবীতে যেভাবে নোবেলা করোনা ভাইরাসের আধিপত্য বিস্তার হচ্ছে, তাতে করে প্রতিটি মুহুর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। পশ্চিমা দেশে নিত্যনতুন অঞ্চল আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে যতটুকু সরকারী হিসেব আসছে, তন্মধ্যে দেখা যাচ্ছে এ ভাইরাসের আধিক্য বাড়ছে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। সরকারের দশ দিনের সাধারণ ছুটিতে সারাদেশ এখন বন্ধ থাকলেও জনগণ এ বন্ধকে কাটাতে মাতৃ পিত্রালয়ে যাতায়াত বেড়ে গেছে। শহর ছেড়ে গ্রামে এখন জনসমাগম বেশি। সরকারের শহর কেন্দ্রীক প্রশাসনিক তদারকী থাকলেও গ্রাম এখন  উৎসবমুখর হয়ে ওঠছে। গ্রামের রাস্তাঘাট এখন জনবাহুল্য। মসজিদ কেন্দ্রিক মুসল্লী সমাবেশ নামাজ প্রার্থনা সীমিত করার কথা থাকলেও সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। আজ ২৭ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজে মুসল্লীদের সমাগম ও নামাজ সংক্ষিপ্ত করার সরকারী নির্দেশ কোথাও মানা হয়না। গ্রাম শহর দুএকটি মসজিদ ছাড়া বাকি সবগুলো মসজিদে প্রায় বহুগুন মুসল্লীর সমাগম ও নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। গতানুগতিক যেভাবে মসজিদের নামাজ পূর্ব খুতবা বয়ান বক্তব্য অনুষ্ঠিত হতো অনুরুপ এখনো জুমার পূর্বে খুতবা বয়না ভাষণ উপস্থাপন করেছেন ইমাম খতিবগণ। খতিব ইমামদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের যেভাবে যোগাযোগ রক্ষার দরকার ছিলো তা এখনো দেখছিনা। মসজিদ ও খতিব তারা তাদের নিয়মে এখনো মসজিদ পরিচালনা করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সরকারী প্রশাসন কঠোরভাবে এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে বলে দেখছিনা। ফলে গ্রাম এখন জনসমাগমের আধিক্য বিরাজ করছে।

ভাইরাসের আশঙ্কার কথা মাথায় না নিয়ে সব বয়সের মানুষ মসজিদে যাতায়াত করছে। মসজিদ আল্লাহর ঘর প্রার্থনা ও করুনা চাওয়ার স্থান। সেটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে যেভাবে করুনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে জনগণকে দূরত্ব রেখে চলার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বললেও পৃথিবীর বহু দেশ তা অনুসরণ অনুকরণ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সে পরামর্শ কার্যকর হচ্ছেনা। এ ভাইরাসের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য যে পরিমাণ কীট ও চিকিৎসক এবং কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন তাও অনেক জায়গায় এখনো অপ্রস্তুত। উন্নত দেশ সমূহ তাদের সবকিছু প্রস্তুতি থাকার পরও তাদের জীবন হুমকির মুখে।

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ জনবহুল এদেশ প্রস্তুতির যথেষ্ট অপ্রতুলতার কারণে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞমহল উড়িয়ে দিচ্ছেনা। এ মুহুর্তে জনগণকে অধিকভাবে সচেতন করে গড়ে তুলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। মসজিদের ইমামদেরকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতে হবে। দেশের প্রতিটি থানা ও উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয় আছে। এসব কার্যালয়কে এ মুহুর্তে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম মুয়াজ্জিন ও খতীবদেরকে বিশেষ আহ্বানের মাধ্যমে ধর্মমন্ত্রণালয় করুনা ভাইরাসের মোকাবিলায় জনগণের মাঝে ব্যবহার করতে পারে। কারণ দেশে প্রায় আড়াই লাখের অধিক মসজিদ মক্তব ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান একেবারে তৃণমূলে অবস্থান করছে। এখানে কর্মরত প্রায় ৫ লাখের অধিক আলেম ইমাম শিক্ষক নিয়োজিত আছে। তাদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ঘরে ঘরে তৈরী করা যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বেসরকারী এনজিও সেবা সংস্থা এসব প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে গুরুত্ব সহকারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবহার করলে জাতীয়ভাবে সুফল আশা করা যায়। শুধুমাত্র সরকারী কতিপয় সার্কুলার আর নির্দেশনা নিয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী এ ভাইরাস থেকে জনগণকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এর সাথে দেখতে হবে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের বিষয়। তাদের রুজি রোজগার কীভাবে হচ্ছে সেটাও স্থানীয় ভাবে মনিটরিং করা দরকার। যারা দিনে এনে দিনে খায় তাদের বিষয় রাষ্ট্রসহ বিত্তবানদের চিন্তা করতে হবে। এখন প্রায় সব ধরনের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে আছে। এ মুহুর্তে যারা রোজগার করতে পারছেনা তাদের বিষয় সরকারের কী সিদ্ধান্ত কী অবস্থান সেটাও পরিস্কার নন। করোনা ভাইরাস মৃত্যু ডেকে না আনলেও ক্ষিধার যন্ত্রণায় যেনো কোনো মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে না যায় সেটাও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব মানুষ ও পরিবারের পাশে এ মুহুর্তে যাওয়া দরকার। যতটুকু খবর আছে অনেকগুলো দিনমজুর পরিবার খাদ্যাভাব সমস্যায় দিন পার করছে। তাদের হাজার হাজার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন যাপন করছে। শুধু চিকিৎসার প্রতিষেধক নয় অন্যের ব্যবস্থাও রাষ্ট্রকে চিন্তা করতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষের তালিকা তৈরী করুন। শহর নগরে ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য রিলিফের ব্যবস্থা করুন। স্থানীয়ভাবে বিত্তবান জনগণকে এ মুহুর্তে প্রতিবেশীর পাশে আসতে হবে। করোনা ভাইরাসের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার নিকট সকলেই প্রার্থনা করব। সেটা সত্যিই তবে তা হবে ঘরে বসেই। জনসমাগম মসজিদ উপাসনালয়কে এ মুহুর্তে জনসমাগম থেকে বিরত রাখতে হবে। এ সময়ের জন্য এ সচেতনতা সকলের মধ্যে জাগ্রত হোক। অতি মুনাফা অর্জন পণ্য গোডান জাত করে মূল্যবৃদ্ধির পায়তারা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব ব্যবসায়ী করোনা ভাইরাসের অজুহাতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করছে তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সরকারের সবগুলো পদক্ষেপ জনগণকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে  এ ভাইরাস মোকাবিলায় যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা যেনো সব পর্যায়ে অনুসরন অনুকরণ ও বাস্তবায়ন হয়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply