২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:৫৪/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:৫৪ অপরাহ্ণ

নার্সিং পেশায় বৈষম্যের শিকার নারী কর্মকর্তারা

     

মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন

কঠিন দুঃসময়ের অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আজ জাতীয় জীবনের এক মাহেন্দ্রক্ষণে উপনীত। আমাদের সকল ভরসার স্থল জাতির জনক আজ নেই। জনতার মুক্তির দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনাপূর্বে তিনি বুকের রক্ত ঢেলে দিলেন সাম্রারাজ্যবাদ ও দেশীয় প্রতিক্রিয়ার হিংস্র চক্রান্তে। কিন্তু মহামানবের মৃত্যু নেই, মুক্তির দিশারী বেঁচে থাকেন মুক্তি সংগ্রামের প্রাণ শক্তি রূপে। তিনি আমাদের কর্ম ও চেতনার হাতিয়ার রূপে নির্মাণ করে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর এই কর্মসূচীকে আমরা বহন করে চলেছি মানুষের মুক্তির মিছিলে। আর এই মিছিলের অগ্রসেনানী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক। সংগ্রামী নেত্রী সিকি শতকের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে নিরন্তর ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ দরকার। তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। নার্সিং একটি মহৎ পেশা। বাংলাদেশের নার্সিং পেশাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। নার্সিং কেবল পেশা নয়, তা আর্ত-মানবতার সেবা করায় শ্রেষ্ঠ অঙ্গন। স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে নার্সিং পেশায় নিয়োজিত সেবক-সেবিকাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক জীবনে মানুষ বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সেবা গ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে যা মানুষের সহজাত স্বভাব। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নার্সরা ও গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী ভূমিকা রাখেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময়ও এক ভাষা সৈনিকের রক্তক্ষরণ দেখে একজন নার্স চিৎকার করে বললেন, এই যে আমার ভাইয়ের রক্ত। নার্সের ধ্বনিত বাক্য থেকে বিশিষ্ট কলামিষ্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো দেশাত্ববোধক গানটি রচনা করেন। নার্সিং প্রধানত নারীদের পেশা। উন্নয়নশীল সব দেশের নারীদের মতো আমাদের নারীরাও নানা বৈষম্যের শিকার। নারী প্রধান পেশা হওয়ার কারণে নার্সিং কর্মকর্তারা নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ মানবতার শ্রেষ্ঠতম উপাদান ‘সেবা দান’ সেবাই কর্ম, সেবাই ধর্ম, অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার ধৈর্য্যরে প্রতীক হয়ে এগিয়ে যেতে হয় নার্সিং কর্মকর্তাদের। নার্সিং পেশা না-না সন্কটে জর্জরিত। আমাদের দেশে নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় এতটাই অপ্রতুল যে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নার্স রোগী, নার্স চিকিৎসক এবং নার্স জনগণের অনুপাত অত্যান্ত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিপরীতমূখী। যেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নার্স রোগীর অনুপাত সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে ১ঃ৪ এবং জটিল রোগীর ক্ষেত্রে ১ঃ১। পাশাপাশি একটি আদর্শ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ডাক্তার নার্সের অনুপাত ১ঃ৩ অথচ আমাদের দেশে তা গড়ে ২ঃ১। অপরদিকে ১৭ কোটি জনগণের বিপরীতে নার্সের পদ রয়েছে মাত্র ২৪,৮৩০। যারা শুধু হাসপাতালের সেবা দান প্রক্রিয়ায় জড়িত। নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়ায় নার্সিংয়ে বিদ্যমান প্রায় সকল কর্মকর্তার পদসমূহ চলতি দায়িত্ব বা নিজ বেতনে অথবা প্রেষণে কর্মরত নার্স দ্বারা পরিচালিত।
নার্সিং কর্মকর্তাগণ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- স্বাপকম/নাসা/পদোন্নতি-৪/২০০১/১৪৬ মূলে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে গত ৬/৪/২০১১ ইং তারিখে ২য় শ্রেণী পদে যোগদান করায় বেতনস্কেল ৮০০০-১৬৫৪০ যাহা গ্রেড ১০ এর অর্ন্তভুক্ত। পরবর্তীতে ২য় শ্রেণী পদমর্যাদায় চাকুরীর মেয়াদকাল চার বছর পূর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের বিগত ২৭/১/২০১১ ইং তারিখের স্মারক নং- ০৫.১৭২.১১.০৭.০০৯.২০১০-২৮৭ এর পরিপত্রমূলে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন সেবা পরিদপ্তর ঢাকা কর্তৃক বিগত ২/২/২০১৪ ইং তারিখের স্মারক নং ডিএনএস/শা-১/২ এন -১১/২০০২/ (পার্ট-১)/ ২০১০ এর বিজ্ঞপ্তি মূলে সকল শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সিলেকশন গ্রেড মঞ্জুরীর জন্য বিগত ১৭/০৫/২০১৫ ইং তারিখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিচালক, সেবা পরিদপ্তর, ইস্পাহানী ভবন, ১৪/১৫, মতিঝিল আ/এ, ঢাকা- ১০০০ এর বরাবরে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সম্মতি থাকা সত্বেও শুধুমাত্র অধিদপ্তরের জটিলতার জন্য বিগত দুই বছর যাবত নার্সিং কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেকশন গ্রেড থেকে বঞ্চিত। অথচ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ সহ সম- শ্রেণির অন্যান্য পেশাজীবীগণ ৪ বছর পূর্তির তারিখের পরের দিন থেকে সিলেকশন গ্রেড সুবিধা লাভ করেন। শুধুমাত্র নার্সিং কর্মকর্তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী হওয়ার কারণে অদ্যবদি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দেশ বরেণ্য জননেত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের একটু সহৃদয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পিছিয়ে পড়া পেশাটি আগামী দিনের একটি সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধশালী পেশায় পরিণত হতে পারবে। আপনাদের সুস্থাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, উজ্জ্বল নেতৃত্ব এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সফলতা কামনা করি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply