২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ২:০৭/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ২:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ইপিজেডে অবাধে চলে অপরাধ ‘ক্যাশিয়ার’ সোলতানের দাবী চাঁদাবাজির টাকা যায় ওসির পকেটেও

     

 চট্টগ্রামের ইপিজেড থানায় ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।  সুলতান নামের এক ব্যক্তি প্রধান ক্যাশিয়ার হিসেবে এই চাদাঁ তোলেন। তার দাবি, চাঁদার একটি অংশ থানার ওসি ও পরিদর্শকের (ওসি-তদন্ত) পরিবারের জন্য বরাদ্দ থাকে। থানার মেসও চলে এই চাঁদার টাকায়। চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং যেসব এলাকা ও প্রতিষ্ঠান থেকে এসব চাঁদা তোলা হয় সেখানকার অনেকের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আনসার সুলতান সাদা পোশাকে ইপিজেড থানা এলাকার বিভিন্ন জুয়ার আসর, বিউটি পারলারের আড়ালে গড়ে ওঠা ‘স্পা’, মৎস্য পোনা বিক্রেতা, হোটেল-মোটেলে পরিচালিত অসামাজিক কাজের ব্যবসা, সোনার বার পাচার চক্র, মাদকদ্রব্য ও ইয়াবা বিক্রেতা, খাস জমি দখল, অবৈধ মার্কেট ও বিপণির মালিক, ফুটপাতে ভাসমান হকার, চোরাই তেল বিক্রেতা, লাইসেন্সবিহীন যানবাহন ও ইপিজেড শিল্প এলাকার বিভিন্ন বেআইনি কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করেন। স্থানীয় চিহ্নিত কয়েকজন সন্ত্রাসীকে এসব কাজে নিয়োজিত করেছেন সুলতান। তাদের মাধ্যমে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করা হয়।

ইপিজেড রেলবিট এলাকায় পরিচালিত দুটি জুয়া মহলের প্রতিটি থেকে মাসে এক লাখ ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেন ক্যাশিয়ার সুলতান। এই তথ্য নিশ্চিত করেন জুয়া মহলের দুজন মালিক। বন্দরটিলা শাহ আমানত মার্কেটে গড়ে ওঠা স্পা থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে নেয়া হয় বলে জানান স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একজন মালিক। তিনি জানান, ইপিজেড এলাকায় আরও ১১টি স্পা থেকে এ হারে চাঁদা নেন ক্যাশিয়ার সুলতান।

নগরীর নেভালের ঈশা খাঁ গেইটের কাছে গড়ে তোলা চোরাই তেল কারখানা থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার, ইপিজেড ফটকের কাছে গড়ে ওঠা চিংড়ি পোনা বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেয়া হয় বলে জানান স্থানীয় সূত্র।

যোগাযোগ করা হলে চিংড়ি পোনা বিক্রেতা শাহজাহান ও চোরাই তেল ডিপোর মালিক নুরু ইপিজেড থানার ক্যাশিয়ার সুলতানকে মাসোহারা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে শাহজাহান চিংড়ি পোনা বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় মাসোহারা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও চোরাই তেলের ব্যবসার কথা অস্বীকার করেন নুরু। তিনি বলেন, খোলা বাজারে তেল বিক্রি করার কারণে এ টাকা দিতে হয় তাকে।

এ ছাড়া নগরীর মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রেতা বাদশা, আবদুর রহিম, জাভেদ, মনির, ইয়াকুবসহ ২৮-৩০ জন মাদক বিক্রেতার প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা মাসোহারা নেন ক্যাশিয়ার সুলতান। মাদকদ্রব্য লেনদেনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কাছাকাছি হওয়ায় এ এলাকায় মাদকের রমরমা ব্যবসা। রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল ঘিরে এলাকার অলিগলিতে রয়েছে  অসংখ্য মিনি পতিতালয়। এগুলো চালানোর জন্য ক্যাশিয়ার সুলতানকে দিতে হয় মাসোহারা। এ ছাড়া জাহাজের ফার্নিচার ও ফার্নিচারের কারখানায় অবৈধ সেগুন, গামারি ও গর্জন কাঠ ব্যবহার করায় মাসোহারা নেন ক্যাশিয়ার সুলতান।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আনসার সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে থানার ক্যাশিয়ার  বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, , ‘চাঁদা নিয়ে কি আমি খাই? চাঁদার টাকা থানার ওসিদের পরিবারের জন্য যায়, এমনকি পুলিশের মেসের খাবারের সব টাকা আসে চাঁদার টাকা থেকে।’তিনি এসব বিষয়ে খবর নেবার জন্য থানায় যাবার অনুরোধ করেন।

তিনি একা নন, ক্যাশিয়ার আরো আছে জানিয়ে সুলতান বলেন, ‘মনিরসহ আরও কয়েকজন ক্যাশিয়ার আছে। দুই ওসি ও থানার মেসসহ এদের খরচ জুগিয়ে মাসের শেষে কিছু থাকলে আমি রাখি। এই আর কি।’

ইপিজেড থানার পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে জনৈক সুলতান অপরাধ কর্মকাণ্ডের হোতাদের আশ্রয় দিয়ে আইন- শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে  চলছে । ইপিজেড এলাকাটি অপরাধের স্বর্গ রাজ্য করে সুলতান বিভিন্ন স্পর্ট থেকে মাসে কোটি টাকা মাসোহারা আদায় করে থাকে।এতে ওসি নুরুল হুদাসহ পুলিশ বিভাগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ওই  টাকা প্রশাসনের কিছু ঘাটে ঘাটে বিলি করে সে নিরাপদে চাদাঁবাজি করে চলছে দিনকে দিন।এই বিষয়ে তার মুঠোফোনে ০১৯৯০  ০২৫০০৫ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সে প্রথমে ফোন রিসিভ করে, সাংবাদিক জানার পরে ফোন আর রিসিভ করেনি।এই বিষয়ে ভিন্ন নাম্বরে জানতে চাইলে থানায় যেতে বলে এবং থানায় গেলে গাড়ী ভাড়াও দেবে বলে।

জানা গেছে, সে ভুলু মাঝির জুয়ার আসর সহ  আকমল আলী রোডে কয়েকটি জুয়ার আসর পরিচালনা করে থাকে।তার অধীনে বন্দরটিলা উত্তরা ব্যাংকের উপরে মেসেজ পার্লারের আড়ালে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানোর জন্য সে একটি অফিস খুলেছে। আবাসিক বাড়ী ভাড়ার নামে তার রয়েছে বেশ কয়েকটি মিনি পতিতালয়, মদ ও ইয়াবা আসক্তদের নিরাপদ ঘরে আশ্রয় দিয়ে দিন দিন চাঁদা আদায় করে থাকে।ইপিজেড থানার ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামীরা তার কারণে গ্রেফতার হচ্ছে না বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।ওয়ারেন্ট প্রাপ্ত আসামীদের গ্রেফতার এড়ানোর শর্তে সে সকল আসামীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকে।যা পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে সে এই কাজে লিপ্ত রয়েছে।এইজন্য অনেক সৎ ও দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা কোন ওয়ারেন্ট প্রাপ্ত আসামীকে গ্রেফতার করতে চাইলেও তা পারেনা।  জুট পাচারকারী, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও হুণ্ডি ব্যবসায়ীদের  প্রধান আশ্রয় দাতা হিসেবে থানার ক্যাশিয়ার নামধারী এই সুলতান  ইপিজেড থানায় পুলিশের নামেই কাজ চালিয়ে আসছে। এদিকে মাসে মোটা অংকের চুক্তিতে ইপিজেড ওভার ব্রীজের পূর্ব পাশে গ্রীণ ফুড নামে একটি রেস্টুরেণ্ট খুলেছে ।এইটি রেস্টুরেণ্ট নামে হলেও আসলে একটি মিনি পতিতালয়।পতিতারা এটি অসামাজিক কাজের নিরাপদ ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ।এই বিষয়ে রেস্টুরেণ্ট পরিচালনা করে জনৈক মাসুদ এই প্রতিনিধিকে বলেন, এইটি আমরা চালালেও সব আয়ের টাকা সোলতানকে দিতে হয়  । সোলতান ইপিজেড থানার ওসিসহ সবাইকে এই টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে থাকে।সর্বশেষ এই রেস্টুরেণ্ট বিষয়ে ফোন করে সত্যতা জানতে চাইলে সে ফোন রিসিভ করেনি।

এই এলাকায় অবস্হিত ব্যারিষ্টার আহমেদ সুলতান চৌধুরী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস এম আনচার উল্লাহ বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর এটি বন্ধ না হলে আমরা ইপিজেড থানা ঘেড়াও করব।চাঁদাবাজ সোলতানের শাস্তি চাইব।প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়ে মাঠে নামতে হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply