২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:২০/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

জাতির জনকের জন্ম শত বার্ষিকী, কিছু কথা কিছু প্রত্যাশা

     

মাহমুদুল হক আনসারী
২০২০ সালে পূর্ণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শহীদ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী। ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী পালনের উদ্দেশ্যে ২০ ও২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৬ জুন ২০১৯ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ উদ্ভোধনী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দলের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মুজিব বর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

২০২০ সালে পূর্ণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী। ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ পালন করা হবে। এ সময়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্টানও পালন করা হবে। এ সময়ের মধ্যে যেসব জাতীয় দলীয় দিবস থাকবে সেগুলোকেও বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালন করা হবে। সারাদেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যন্ত এ বর্ষ পালন অনুষ্টান পালন করবে এবং মুজিব বর্ষ সরকারিভাবেও পালিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উল্লেখ করা হয়। বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধমে উদযাপিত হবে বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী। এ সময়ে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, শ্বিবিদ্যালয় সরকারি বেসরকারি সবগুলো প্রতিষ্টানে এসব অনুষ্টান পালিত হবে। জেলা বিভাগ থানা ওয়ার্ড পর্যায়ও জন্ম শতবার্ষিকী পালন করা হবে।

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পচাঁত্তরের ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। এরপর অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তখন সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নৈরাজ্য দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যায়। তবে অনেক রাজনৈতিক আন্তর্জাতিক জাতীয় নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি নিয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে চলছে। বর্তমান উন্নয়নের মহা সড়কে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা আলোচনা পর্যালোচনা থেমে নেয়। তবুও আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের খাতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পর এ দেশে মানুষ দু’বেলা পেট ভরে মোটা চালের ভাত খাওয়ার জন্য চটপট করছিল। মোটা কাপড় আর জামা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য তখন মানুষের কান্নার শব্দ শোনা যেত। ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে সে সময়কার সরকার দেশে বিদেশে হাত বাড়িয়ে ছিল। বাংলাদেশ এখন আর সে সময়ের অভাবের মধ্যে নেই। এখন আর এদেশের মানুষকে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ জনগণ আর শক্তির হাতকে সমন্বিত করে দেশ মাথা উচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই পথচলা চলতেই থাকবে। ইনশাআল্লাহ কেউ বীরের এ জাতিকে থামাতে পারবে না।

বাংলাদেশ এ উদ্দেশ্য অগ্রগতি উন্নতির পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীর এ সময়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে, এগিয়ে নিতে হবে জাতিকে। বাংলাদেশের জন্য এ সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানচিত্র সেদিন তারা ক্ষত বিক্ষত করেছিল। যারায় করেছিল তাদের রাজনীতি অর্থনীতি ষড়যন্ত্র বলতে গেলে এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশি বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন মানচিত্রের বিরোদ্ধে ছিল। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ যেনো পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আর বঙ্গবন্ধু চেয়েছিল বাংলাদেশ দুনিয়ার বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে পৃথিবীর সামনে উঠে দাঁড়াবে। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধ্বংস করতে স্বপরিবারে পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে শহীদ করে। সে থেকে তিলে তিলে এবং ধীরে ধীরে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির কল্যাণে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলো। ফলে আজকে সেই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী হাত গুটিয়ে তাদের প্রায়শ্চিত্র ভোগ করছে। আর দেশ জনগণের কল্যাণকামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একাধারে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ কথায় না, কাজে আজ বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর খাওয়া দাওয়া বিলাসীতা নেই বললেই চলে। ধার্মিক ও সাহসী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি আত্মীয়করণের কঠোর বিরোধী। যা সাম্প্রতি তাঁর আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির ঘোষণার মাধ্যমে জাতি দেখেছে। তিনি স্বচ্ছ নিষ্টা, আদর্শিক নির্লোভ দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক নেতাকর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। নির্লোভ নিরহংকারী প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের জন্য একজন গৌরবান্বিত নেত্রী। তাঁর আশপাশে যারা তাকে সহযোগীতা করছেন, তারাও দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতায় স্বল্প সময়ে দেশ আজ বহি:বিশ্বে নানাভাবে আলোচনার স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতি কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। শিক্ষা এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে আলো ছড়াচ্ছে। বছরের প্রথম দিবসেই নতুন বইয়ের মৌ মৌ গন্ধে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত। স্বাস্থ্য এখন এদেশের প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষিত যুবক যুবতীরা তাদের আয় ও কর্মসংস্থান খুঁজে নিচ্ছে। যে হারে উন্নয়ন অগ্রগতি ডেভলাপ হচ্ছে সেটার প্রশংসা আলোচনা না করলে হয় না। তবে উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি। জগদ্দল পাথরের মতো দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা দুর্নীতির লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। এটা জাতির অগ্রগতির জন্য মারাত্মক প্রতিবন্ধক। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দুর্নীতির বিরোদ্ধে সর্বদা কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ থাকলেও দুর্নীতি কিন্তু মোটেও থামছে না। এটা কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর মুজিব বর্ষের এ সময়ে আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের। শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষিত মানুষগুলোকে উপযুক্ত কর্মসংস্থান দিতে হবে। সন্ত্রাস, মাদক , জঙ্গিবাদ নির্মূলের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের পদ পদবী ব্যবহার করে যারা কালো টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে নিতে হবে। দুর্নীতিবাজ কাউকে কোনো পদ পদবীর আসনে জনগণ দেখতে চায় না। স্বচ্ছ ভদ্র শিক্ষিত মানুষগুলোকে রাষ্ট্রের জনগণের সেবক হিসেবে অধিষ্ট করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মৌলিক চিন্তা চেতনা এদেশের খেটে খাওয়া দু:খী মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর তাদের মৌলিক অধিকার পূরণে আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা সরকারকে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘মুজিব বর্ষ’ সফল ও স্বার্থক করতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। মহান এ বর্ষে বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি গভীর ভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর আত্মার শান্তি ও মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মর্যাদায় আসীন করার প্রার্থনা করছি। বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বপরিবারে ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যার শিকার সকল আত্মীয় স্বজনের প্রতি গভীরভাবে সান্তনা সমবেদনা প্রকাশ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল কর্মসূচী যেনো সুন্দর ও সফল সার্থকভাবে বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে পারেন সে প্রত্যাশায় সফলতা কাম্য।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply