২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ১:৪৬/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে ২শ বিঘা গাঁজা ক্ষেত ধংস করেছে সেনাবাহিনী সবুজ পাহাড়ে মাদকের স্বর্গরাজ্য

     

শংকর চৌধুরী,খাগড়াছড়ি

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সবুজে ঘেরা পার্বত্য এলাকার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের স্বর্গরাজ্য। খাগড়াছড়িতে ১২ দিনের ব্যবধানে আবারও মাটিরাঙা উপজেলার কালা পাহাড় পেরিয়ে দুর্গম ধল্যাছড়া গ্রামে প্রায় ২শ বিঘা জায়গা জুরে ৩৫ টি গাঁজা ক্ষেতের সন্ধান পেয়েছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের আওতাধীন মহালছড়ি সেনা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে গাঁজা ক্ষেত ধ্বংস অভিযান শুরু হয়।

এসময়, লে. কর্ণেল মেহেদী হাসান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিজেদের অস্ত্র ক্রয় ও সাংগঠনিক খরচ মেটানোর জন্য নতুন কৌশল হিসেবে মাদক চাষ শুরু করেছে। দূর্গম এলাকায় সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এসব চাষ করানো হচ্ছে। সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাঁজা ক্ষেতের সন্ধান পায়। ৩৫ টি ক্ষেতে ৪০ টনের মতো গাঁজা উৎপাদন হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য একশ কোটি টাকার বেশী। বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৩ দিন ধরে গাঁজা ক্ষেত ধ্বংসের পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় ড্রোন ও পেট্রলিং করে আরও অনুসন্ধান চলবে বলে জানান মহালছড়ি সেনা জোনের অধিনায়ক। তবে, গাঁজা চাষের সাথে যুক্ত কাউকে আটক করা যায়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে গাঁজা চাষীরা।

গাঁজা ক্ষেত ধ্বংস অভিযানে সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অভিযান চলাকালে ধল্যাছড়া গ্রামের ২৪ টি বসত বাড়ি জনমানব শুন্য হয়ে পড়ে।

জানা যায়,‘খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে চাষ হচ্ছে নিষিদ্ধ গাঁজা। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি এলাকাকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী গাঁজার আবাদ করছে। মূলত লোক চক্ষুর অন্তরাল করতেই গাঁজা চাষের জন্য দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। গহীন অরণ্য ও দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেখানে জনবসতি তুলনামূলক কম এমন জায়গায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের নিরাপদ বসবাস এলাকা হিসেবে বেছে নেয়।

আর এই ধরনের মাদক ব্যবসা থেকে আয় করা অর্থ ব্যয় হয় আঞ্চলিক দল গুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা, অস্ত্র ক্রয় ও তাদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে। এছাড়াও সাধারণ মানুষ এবং বিশিষ্ট নাগরিক সমাজের ধারণা, বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইনের ফলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলো পাহাড়ে ভূমির অবাধ ব্যবহার করে মাদকের স্বর্গরাজ্য তৈরীর সুযোগ পাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী এসব মাদক ব্যবসায়ী ও দুষ্কৃতিকারীদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা জানান, ‘কীভাবে এই এলাকায় গাঁজার জগত গড়ে তুলেছে তা আমার জানা নেই। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এই ধরণের কাজ করতে না পারে সেই ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

মাটিরাঙা থানার উপ-পরিদর্শক মো: মহিউদ্দিন আহম্মদ জানান, ‘ এত দুর্গম এলাকায় নজর দারি রাখা কঠিন। তাই লোক চক্ষুর আড়ালে গ্রামের লোক জন গাঁজার আবাদ করেছে। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে গাঁজা চাষের সাথে সম্পৃক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান,‘ এখন গাঁজা চাষাবাদের মৌসুম। দুর্গম এসব গ্রামে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী বাহিনী গাঁজার আবাদ করছে বলে জান্তে পারি। তবে গ্রামের বাসিন্দারাও গাঁজা চাষের সাথে সম্পৃক্ত।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মহালছড়ির কলাবুনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৭ শ গাঁজা গাছ ধ্বংস করে মহালছড়ি সেনা জোন। ওইসময় গাঁজা চাষের দায়ে ২ জনকে আটক করে পুলিশে দেয় সেনাবাহিনী।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply