২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:১৬/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় বেআইনিভাবে গড়ে উঠছে পিএসবি ইট ভাটা, নষ্ট করছে গ্রামীণ পরিবেশ, হুমকির মুখে পরিবেশ

     

লোহাগাড়ায় বেআইনিভাবে গড়ে উঠছে পিএসবি ইট ভাটা, নষ্ট করছে গ্রামীণ পরিবেশ, হুমকির মুখে পরিবেশ
 লোহাগাড়া প্রতিনিধি
 পরিবেশ বিপর্যয় করে, অনুমোদন ছাড়াই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই লোহাগাড়ার কলাউজানে ‘পিএসবি’ ইটভাটা  নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা কামানোর নেশায় মেতে উঠেছে একটি সিণ্ডিকেট।ওই সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।স্হানীয় এলাকাবাসী পরিবেশের ক্ষতিকর এই ইটভাটা বন্ধের দাবীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও এটি বন্ধ হচ্ছে না। এই নিয়ে ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও মনোমালিন্য বিরাজ করছে এলাকায়। খবর নির্ভরযোগ্য সুত্রের।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের পশ্চিম কলাউজানের মালি পাড়া,নাথ পাড়া,শীলপাড়া,আছমত আলী পাড়া,মিয়াজী পাড়া এবং বাংলাবাজার ঘেষেই এই ‘পিএসবি’ ইটভাটা  নির্মাণ করা হচ্ছে। মাবুদ মেম্বারের ছেলে সেলিম কোম্পানী প্রকাশ বুম সেলিম,  মৃত আবুল কাশেমের ছেলে   মুহাম্মদ আব্দুস সবুর প্রকাশ সপুর মলই ও আহমদ হোসেনের ছেলে মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান মিলে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছে।
   ইটভাটা নির্মাণের শুরুতে প্রাথমিকভাবে এলাকাবাসি সম্মিলিতভাবে বাঁধা প্রদান করলে কিছুদিন থেমে থাকে তাদের এই ইটভাটা নির্মাণের কাজ। এরপর স্থানীয় প্রশাসনকে অজানা রহস্যে ম্যানেজ করে এলাকার নিরপরাধ ও সচেতন ব্যক্তিদের মামলা দিয়ে দূর্বল বানিয়ে তারা আবার তাদের ইটভাটা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।। স্থানীয় থানাতে এ ব্যাপারে বেশ কয়েক দফা ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। প্রশাসন পারেনি তাদের বাঁধা দিতে। ওসি সাইফুল ইসলামের রাঙ্গুনিয়া থানায় বদলির পর পুনরায় শুরু হয়েছে এই ইটভাটার নির্মাণ কাজ।
অজানা কারণে প্রশাসন আজ অসহায়।ধরাকে সরা জ্ঞান করে তারা পরিবেশের শত্রু এই ইট ভাটা নির্মাণ কাজের নেশায় মেতেছে। শুধু তাই নয় এই ইটভাটা নির্মাণ করতে আশেপাশের ফসলী জমিগুলো থেকে ইচ্ছেমতো উর্বর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।। জমির মালিকদের মামলার এবং প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা জমি বন্ধক নিচ্ছেন আর খুশি মনে মাটি খনন করছেন।।এসব মাটি ইটভাটা স্থলে আনতে তারা গ্রামের মেঠো পথের রাস্তায় ব্যবহার করছে বড় বড় ট্রাক আর মাটি কাটার মেশিনের গাড়ি।।
কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও ইটভাটা স্থলে বনজ মূল্যবান গাছপালা কেটে নিয়ে আসা হয়েছে।। ডালপালা আর মাটির বিশাল বিশাল স্তুপ যেনো অত্র গ্রামকে পাহাড়ে পরিণত করেছে।। রাস্তায় মাটি বোঝাই,কাঠ বোঝাই ট্রাক চলাচলের ফলে চেনা জানা রাস্তাগুলো এখন আর চেনা যায় না।। কোথাও গর্ত আবার কোথাও টিলা এমন হয়ে গেছে । যার দরুণ স্কুল,মাদ্রাসা,কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে কষ্ট আর ব্যবসার কাজে আসা যাওয়া করা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। চারিদিকে প্রচুর ধুলাবালির মিছিল যেনো নিরিহ মানুষদের ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে টানছে।
অবস্হাদৃষ্ঠে মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম কলাউজানের মালি পাড়া,নাথ পাড়া,শীলপাড়া,আছমত আলী পাড়া,মিয়াজী পাড়া এবং বাংলাবাজার ঘেষেই এই (পিএসবি) ইটভাটা টি নির্মাণ করা হচ্ছে।। আশেপাশে ৩টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল,একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কোরআন শিক্ষার হেফজখানা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, একটি ব্র্যাক স্কুল রয়েছে। ছোট শিশু থেকে সম্ভাবনাময়ী তরুণ শিক্ষারর্থীরা মোট ৪ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী এই গ্রামের প্রতিষ্ঠান সমূহে পড়াশোনা করে আসছে। প্রতিনিয়ত তারা উচ্চ শিক্ষার জন্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে। এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অথচ এই সুনামকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে এবং আগামীর সূর্য সন্তানদের সম্ভাবনাকে নানা ধরণের বিষাক্ত রোগের বলি হতে বাধ্য করছে এই পিএসবি ব্রিকফিল্ড।।
স্থানীয়দের অভিযোগ যে, আমরা কলাউজান ইউনিয়নের ৪নং এবং ৫নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হই।আমরা খুব দরিদ্র আর চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। সম্প্রতি পিএসবি নামের ইটভাটার মালিকরা আমাদের উপর ব্রিটিশদের মতো পৈশাচিক কায়দায় অত্যাচার শুরু করেছে।
তারা মামলা দিয়েছে আমাদের আর প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আমাদের জমি থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি আর ফসলি জমি।। কখনো বিনিময়ে নূন্যতম কিছু টাকা দেয় নতুবা মামলার ভয় দেখায়। এই পিএসবি ব্রিক ফিল্ডের মালিকরা ভূমিদস্যু এরা সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে আমাদের মারধর করতে তেড়ে আসে।শুধু তাই নয় এখানে সংখ্যালঘুদের মন্দির, শশ্মান আর ধর্মীয় উপাসনালয় অবস্থিত।।একদম পাশাপাশি এই পিএসবি ব্রিকফিল্ড নির্মাণ করায় সনাতনধর্মের অনুসারীরা সম্মুখিন হচ্ছে নানা সমস্যার।। ব্রিকফিল্ডের কাজে ব্যবহার হওয়া যানবাহনের কালো ধুঁয়া আর রাস্তার বালি যেনো পুরো মন্দিরের রুপকে পাল্টে দিয়েছে।।প্রতিনিয়ত মন্দির পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে করতে আজ হয়রান।। পিএসবি ব্রিকফিল্ড নির্মাণ হওয়ায় পুরো গ্রামটা আজ হুমকির মুখে।। নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, ঔষধি গাছ, ফলদি গাছ আর দূষিত হচ্ছে সুন্দর পরিবেশ রোগাক্রান্ত হচ্ছে মানুষ আর গবাদি পশু। এমতাবস্থায় যদি এই পিএসবি ব্রিকফিল্ড বন্ধ করা না হয়। তাহলে কয়েক বছর পরেই এই গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। অনতিবিলম্বে পরিবেশের শত্রু এই পিএসবি ব্রিকফিল্ড বন্ধের দাবি আর এর নির্মাণ কাজে জড়িতদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ  কাছে প্রাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply