২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১২:২০/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের গুরু বাশঁখালীর কাউন্সিলর আজগর ও তার ভাই আকতার

     

বাশঁখালী উপজেলার উত্তর জলদি পৌরসভার কাউন্সিলর আজগর হোসেনের অপকর্ম এবং দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ স্থানীয় জনসাধারণ। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ বেরিয়ে আসছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। এলাকার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ঠান এবং মুসলমানরা সকলেই তার অপকর্ম আর সহ্য করতে পারছে না। সম্প্রতি অভিযোগ এসেছে তার ভাই মৌলভী আকতার হোসাইনের কারণে ওই এলাকার (ছুম্মার পাড়া) সংখ্যালঘুরা শান্তিতে নিরাপদে রাত কাটতেও পারে না। কাউন্সিলর ও তার ভাই মিলে এলাকার সব গরীব অসহায় মানুষের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। বাশঁখালী থানাসহ চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের নিকট তার নামে অনেক অভিযোগ জমা রয়েছে। সম্প্রতি দুদকের নিকটও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের মতে, তারা তার অপকর্ম সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দিলে তা আমলে নেওয়া হয় না। যার অন্যতম কারণ সে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করে এবং সে দলের নাম দিয়ে দুর্নীতিও করে। সরজমিনে গিয়ে অনুসন্ধান চলাকালীন প্রতিবেদকের নিকট স্থানীয় এক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজগর হোসেন ও তার ছোট ভাই আকতার হোসেন অন্যের জমির উপর মাদ্রাসা মসজিদ গড়ে তুলছে। এসব জমিতে লোকজনের বৈধ দাবি রয়েছে। যার কোনো তোয়াক্কা করে না কাউন্সিলর ও তার ভাই। নামে বেনামে কাউন্সিলার এখন অনেক জায়গার অবৈধ মালিক এবং দখলদার। অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ আয়ের সাথে বিশাল অমিল। অথচ মাত্র দু’বছর আগে অর্থাৎ কাউন্সিলর হওয়ার আগে যার বাড়ি ছিলো মাটির এবং উপরে টিনের ছাদ ছিলো। কাউন্সিলার হওয়ার পর রাতারাতি এভাবে ধনী হওয়ার রহস্য স্থানীয় মানুষের সাথে সাথে অন্যান্য কাউন্সিলরাও বুঝতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, কাউন্সিলর হওয়ার পর তার বাড়িটি প্রায় দুই-কোটি টাকা ব্যায়ে করে নিমার্ণ করেছে বলে লোকজন ধারণা করছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, তার বাড়ির গেইট তৈরী করতে খরচ হয়েছে পঁচাত্তর লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয়, তার বাড়ির আশেপাশে কয়েক একর জমিও সে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলার এবং প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন মন্জুর মতে, একজন কাউন্সিলারের সৎ দুর্নীতিমুক্ত থাকাই হচ্ছে প্রথম কাজ। কিন্তু এখন সে জায়গা থেকে অনেকেই সরে আসছে। সেই সাথে শিক্ষিতরা যদি সুযোগ না পায় তাহলে এসব অপকর্ম চলতে থাকবে।

প্রসঙ্গত, কাউন্সিলার আজগর হোসাইন তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। স্থানীয় এক তরুণ শিক্ষার্থীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তার মতামত বর্তমান সরকার যদি এ ধরনের অশিক্ষিত লোকদের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয় তাহলে পরিস্থিতি এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। যার কোনো অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা কিছুই নেই সে কীভাবে কাউন্সিলার হয় এমন প্রশ্ন অনেকের আছে।

কাউন্সিলার এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলেও জানায় অনেকে। তাদের এ অত্যাচার থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ খুজেঁ পাচ্ছে না মানুষ। তাদের দাবী হচ্ছে, কাউন্সিলার হওয়ার পর তার এমন আকাশ-কুসুম পরিবর্তনের তদন্ত এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

বছর কয়েক আগে উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তাকে মারধর এবং নাজেহাল করার দায়ে কাউন্সিলারের ভাই আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা সবসময় স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের নাম দিয়ে পার পেয়ে যায়। এমপিকে ব্যবহার করে এসব অপকর্ম তারা অবিরত চালাতে থাকে। বিভিন্ন মামলায় পড়লেও এমপির সুপারিশে সবসময় পার পেয়ে যায়। যার সুবাদে কাউন্সিলার ভুমিদস্যু আজগর এবং তার ভাই আকতার সম্প্রতি লেখক গবেষক মাহমুদুল হক আনসারীর ক্রয়কৃত জায়গাও দখল করে নিয়েছে জোরপূর্বকভাবে। তাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ লেখক সমাজ। একজন প্রগতিশীল লেখকের সাথে যদি এমন হতে পারে তবে অসহায় স্থানীয় মানুষদের সাথে কেমন হতে পারে সেটা নিশ্চই আর ভাবতে হবে না। যে লেখক দেশ এবং জনগণের জন্য দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে লিখে আসছে নিষ্ঠার সাথে তার সাথে এমন কর্মকান্ড সত্যি অবাক হওয়ার মতো।

মাহমুদুল হক আনসারী বলেন, ১৫ বছর আগে কাউন্সিলার আজগর হোসেন থেকে ৫ গন্ডা এবং তার বড় ভাই মৃত দেলোয়ার হোসেন থেকে ২ গন্ডা জমি আমি ক্রয় করি। ক্রয় করা জমি এতোদিন নিজের দখলে রাখলেও সম্প্রতি বাড়ি করার জন্য যখন সেখানে চারিদিকে বাউন্ডারী দিতে গেলে তখন তারা আমার সাথে দেখা এবং কথা বলে না। আমি তাদের সাথে চার বার দেখা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। এরপর আমি গত ১ জিসেম্বর বাউন্ডারী দেওয়ার সরঞ্জাম নিয়ে এসে ৫ জন শ্রমিকের মাধ্যমে চারিদিকে বাউন্ডারী দিয়ে আসি। ওইদিন রাতেই কাউন্সিলার আজগর এবং তার ভাই আকতারসহ কতিপয় আরও আনুমানিক ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী মিলে বাউন্ডারী ভেঙ্গে দিয়ে সব মালামাল লুট করে নিয়েছে। পরের দিন সকালে এ খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা আমাকে আরও বলে, আপনার মতো সাংবাদিক, লেখককে গোপন করতে তাদের কঠিন কোন ব্যাপার নয়।

লেখক-গবেষক মাহমুদুল হক আসনারী আরও বলেন, তারা আমাকে জায়গার কথা ভুলে যেতে বলে। শুধু তাই নয় আমার সাথে জঘন্য এবং নোংরা ভাষায় কথাও বলে। যা আমার জীবনে সবচাইতে বড় কষ্টের বিষয়। যেখানে রাষ্ট্রের বড় বড় ব্যাক্তিরা আমাকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে সেখানে এমন কিছু ব্যাক্তি আমাকে এভাবে হুমকি দিবে সেটা আমার কল্পনায়ও ছিলো না। তাই আমি চাই প্রশাসন আমার এই জমি ফিরে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেই সাথে আমার জীবনের উপর যে হুমকি রয়েছে তার নিরাপত্তাও দেবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply