২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:২৯/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৯:২৯ অপরাহ্ণ

সেবা প্রতিষ্টানে জনদুর্ভোগ

     

 

মাহমুদুল হক আনসারী

সমাজ ও রাষ্ট্রকে শৃঙ্খলায় রাখার জন্য রাষ্ট্রকে কতগুলো সেক্টর নিয়ে কাজ করতে হয়। যেগুলোকে জনগণ রাষ্ট্রের প্রশাসন মনে করে। প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা রয়েছে। এসব প্রশাসন প্রশাসনের শাখার সেবা গ্রহণ করে দেশের নাগরিক। রাষ্ট্রের একেবারে তৃণমূল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত এসব প্রশাসনের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাষ্ট্রীয় সেবা নিয়ে থাকে। এসব সেক্টর পরিচালিত হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এ মন্ত্রণালয় সারাদেশে তার শাখা প্রশাখার অধীনে জনগণের প্রশাসনিক কর্মকান্ড সমাধান দিয়ে থাকে। মূলত এখানে ূভূমিকা  বলার উদ্দেশ্য নয়। কথা হলো রাষ্ট্রের সবগুলো মন্ত্রণালয় জনগণের কল্যাণে গঠিত। এসব মন্ত্রণালয় গঠন ও বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। এর উদ্দেশ্য হলো তৃণমূল পর্যন্ত জনগণকে সেবা পৌছে দেয়া। কয়েক কোটি জনবল এসব সেক্টরে জনগণের কষ্টের অর্থে জনসেবায় চাকরি করে। তারা সাংবিধানিকভাবে জনগণের চাকর। জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। রাষ্ট্রীয় এসব কর্মচারিরা সবসময় জনগণের নিকট সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। সংবিধান দেশের সকলের জন্য সমানভাবে অনুকরণীয়। সংবিধানের বাইরে অন্যকোনো ভাবে চলার উপায় নেই। সরকার ও রাষ্ট্রকে সাংবিধানিক কাঠামোতে চলতে হবে। রাষ্ট্রের সবগুলো সেক্টরের কর্মচারিকেও জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার ভোগান্তিহীনভাবে নিশ্চিত করা তার নৈতিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতনভাতার জন্য জনগণের টেক্সের হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাদের প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সব সুযোগ সুবিধা দিতে সরকার সদা প্রস্তুত। বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে একজন সরকারি চাকরিধারি ব্যক্তি অত্যন্ত সুন্দর ও অভাবহীন জীবনযাপন করছে। তাদের সব ধরনের বেতনভাতা আবাসন, চিকিৎসা, পুষ্যদের শিক্ষা, চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে প্রজাতন্ত্রের সরকার। বলা যায়, চাকরিতে তাদের যেসব সুযোগ সুবিধা অব্যহত আছে তাতে করে তারা অন্য জনগণের তুলনায় ভালোভাবেই জীবন প্রবাহ নির্বিঘেœ  চালাতে পারছে। তবুও এসব প্রশাসনের কতিপয় সেক্টর ও ব্যক্তি রাষ্ট্রকে মারাত্মকভাবে কলুষিত করছে। এমন কোনো বিভাগ বা সেক্টর নেই যেখানে জনভোগান্তি হয় না। সরকারি যতগুলো সেক্টর রয়েছে সবগুলোতে ধাপে ধাপে সুবিধেমতো জনভোগান্তি চলছে। সবগুলো সেক্টরের কথা উল্লেখ করলে দিনের পর দিন লিখেও শেষ করা যাবে না। এখানে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং জনগণের নিত্যদিনের প্রয়োজনে যেসব সেক্টরে যাতায়াত ও সেবা নিতে হয় সে ধরনের দু’টি সেক্টরের কথা সামান্য ভাবে তুলে ধরতে চাই। আর সে দু’টি হলো ভূমি ও পাসপোর্ট অফিস। এ দু’টি সেক্টর  নিয়ে প্রতিদিন খবরের পাতায় বাংলাদেশের কোনো না কোনো অঞ্চলের জনভোগান্তির চিত্র উঠে আসে। স্পর্শকাতর ওই দু’টি সেক্টর দেশের দুর্নীতির শীর্ষে। অনেক ধরনের তথ্যবহুল রিপোর্ট প্রতিবেদন ইলেক্টনিক্স মিডিয়া, অনলাইন পোর্টাল ও দৈনিক পত্রিকায় অসংখ্য প্রতিবেদন  প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতভাবে দু’টি সেবা প্রতিষ্টান থেকে জনগণ কোনোভাবেই ভোগান্তিহীন দুর্নীতি ছাড়া সেবা পাচ্ছে না। বাংলাদেশের ভূূমি অফিস, এলএ শাখা দুর্নীতির সর্ব রাজ্য বললেও অতি রঞ্জিত হবে না। কারণ পাসপোর্ট ও ভূমি অফিসে অবৈধ অর্থের লেনদেন ছাড়া কোনো গ্রাহক বেরিয়ে আসতে পারে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে  অবৈধ লেনদেনের পরও সেবা পেতে মাসের পর মাস চলে যায়। সব  ধরনের  কাগজপত্র সরবরাহ করার পরও যতক্ষণ না অবৈধ অর্থ আদান-প্রদান হয় না, জনগণ সেখান থেকে মুক্তি পায় না। রাষ্ট্রের দুর্নীতি দমন কমিশন, এসবি, এনএসআই, ডিবিসহ জাতীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টে এসব তথ্য পরিষ্কার। দুর্নীতি দমন কমিশন ৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের এলএ শাখার অবৈধ লেনদেনের প্রচুর নগদ অর্থ ও নথিপত্রসহ জেলা প্রশাসনের একজন কর্মচারি, এলএ শাখার একজন চেইনমেনকে হাতেনাতে তাদের অবৈধ আস্থানা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। চট্টগ্রামের একটি প্রথম সারির দায়িত্বশীল পত্রিকায় তাদের ছবিসহ প্রতিবেদন ছাপা হয় ৮ নভেম্বর। সে প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসন ও এলএ শাখার ধারাবাহিক দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, সীতাকুন্ড ও সিটি কর্পোরেশনের  বিভিন্ন এলাকায় অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ পেতে কী পরিমাণ জনভোগান্তি ও অবৈধ অর্থের লেনদেন হয় তার সামান্য চিত্র পাওয়া যায়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। একেবারে পিয়ন থেকে সর্বোচ্চ কর্তা দায়িত¦শীল ব্যক্তির সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলএ শাখার একজন কর্মচারি বলেন, এখানে পার্সেন্টিস ছাড়া কোনো অর্থ ছাড় দেয়া হয় না। এলএ শাখায় অথবা ভূমি অফিসে পা রাখলেই সেবা গ্রহীতাকে তার অধিকার পেতে ঘুষ দিতে হবে। এ নিয়ম অনুসরণ না করলে তাকে বছরের পর বছর আসা যাওয়া করতে হয়। কিন্তু তার অধিকার সে পাবে না। এখানে যাদের হাতে জনগণ জিম্মি তারা হলো সার্বেয়ার, কানুঙ্গু ও তহসিল অফিসার। এর বাইরেও সব পদে পদে সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়। ভুক্তভোগী তার জমিজমার ক্ষতিপূরণ পেতে ৩ ধারা, ৪ ধারা , ৭ ধারা সর্বশেষ ৮ ধারার নোটিশ প্রাপ্ত হয়। এসব নোটিশ পাওয়ার অর্থ তার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বৈধতা বহন করে। এরপর এলএ শাখার নিয়ম মেনে আবেদন করার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। কিন্তু সে অধিকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জনগণ গ্রহণ করতে আসলেই চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হয় এসব মানুষ। কতিপয় দালাল এলএ শাখার কর্মচারিদের যোগসাজশে অতিসহজে ক্ষতিগ্রস্থদের টাকা পেয়ে দেয়ার বিদুৎ গতিতে কাজ করে দেয়। সেক্ষেত্রে ফাইল দ্রুততার সাথে কার্যকারিত হয়। দালাল ও ঘুষ লেনদেন ছাড়া কোনো কাজ ভূমি অফিসে হয়েছে এমন নজির দেয়া কঠিন। এরপর পাসপোর্ট অফিসের চিত্র একই নিয়মে চলছে। এখানেও সরকারি ফি’র বাইরে সম পরিমাণ ঘুষ লেনদেন না হলে সে পাসপোর্টের ফাইল নড়াচড়া করবে না। মাসের পর মাস চলতে থাকবে কিন্তু গ্রাহক তার পাসপোর্ট পাবে না। হোক সে দূরারোগ্য রোগি যেখানে তাকে পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যেতে হবে। কিন্তু যখন গ্রাহক অতিরিক্ত ঘুষের টাকা প্রদান করবে না তখন সে আর পাসপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের কয়েকগুণ পার হয়ে গেলেও তবুও সে পাসপোর্ট পাবে না। এ হচ্ছে সূর্যের আলোর মতো সত্য দু’টি বিষয়। এ দু’টি সেক্টরের ভোগান্তির কথা জনগণ থেকে রাষ্ট্রের সবগুলো গোয়েন্দা বিভাগে রিপোর্ট থাকলেও কোনো নিস্তার জনগণের কাছে মিলছে না। দু’টি বিভাগেই মাঝেমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান চললেও আসলে সেখানকার দুর্নীতির লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। বলা যায়, দু’টি সেক্টরে অসহনীয় ভোগান্তির মাত্রায় সেবাগ্রহীতাদের নিশ্বাস যায় আসে। তাহলে কি এ দু’টি সেক্টরের দুর্নীতির লাগাম বন্ধ হবে না?

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply