১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১১:৫৯/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

শার্শায় মাতব্বারের মেয়ের অশ্লীল দৃশ্য ভিডিও ধারন করায় যুবক নিখোঁজ : পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

     

এম ওসমান, বেনাপোল : যশোরের শার্শার পল্লীতে এক গ্রাম্য মাতব্বারের মেয়ের অশ্লীল দৃশ্য ভিডিও ধারন করায় মহিবুল নামের এক যুবককে গুম করার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই যুবককে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসার পর থেকে কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মহিবুল শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় মহিবুলের পিতা স্টোক করে শয্যাশায়ী। তবে ইউপি চেয়ারম্যান শালিসীর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে আইনে সোপর্দ করার পরামর্শ দিয়েছি মাত্র। একটি মহল আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট ও সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
জানা গেছে, কায়বা গ্রামের গ্রাম্য মাতব্বর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা ফিরোজ হাসান টিংকুর লোক দাউদের মেয়ের সাথে পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সাতপোতা গ্রামের জনৈক ইব্রাহীমের সাথে শুক্রবার অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। আর এই অনৈতিক কাজের ভিডিও করে মহিবুল। আর এতেই তার কাল হয় অনৈতিক কাজের ভিডিও করা। ভিডিও করার ঘটনাটি জানাজানি হলে গ্রাম্য মাতবররা অসামাজিক কাজের বিচার না করে উল্টো মহিবুলের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় সে এই অসামাজিক কাজের ভিডিও করেছে কেন ? ভিডিও করায় মহিবুলের পরিবারের কাছে চেয়ারম্যানের লোকজন দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্থানীয় দাউদ, ভাবলু, ইউপি সদস্য রফিকুলসহ ১০/১২ জন দূর্বৃত্ত অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিয়ে মহিবুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল চেয়ারম্যানের কাছে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে আসতে। এর পর থেকে মহিবুলকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। মহিবুলের পরিবারের দাবি চেয়ারম্যানের লোকজনের দাবিকৃত দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় মহিবুলকে গুম করা হয়েছে।
মহিবুলের মা মাছুরা খাতুন জানান, আমার ছেলে মহিবুলকে শুক্রবার সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান টিংকুর কাছে নিয়ে যাচ্ছি বলে দাউদ, ভাবলু ও মেম্বর রফিকুলসহ ১০/১২ জন লোক জোর করে ধরে নিয়ে যায়। আমি চেয়ারম্যানের পা ধরে বলেছি, ছেলে অন্যায় করেছে এবারের মত মাফ করে দেন। তারা আমার কোন কথা শোনেনি। উল্টো বলেছে তোমার ছেলে যে অন্যায় করেছে তাকে থানায় পুলিশে দিতে হবে।

যুবকটি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে শার্শার কায়বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান ফিরোজ আহম্মেদ টিংকুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ইভটিজিং কে কেন্দ্র করে এলাকার সুধি ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সালিশের ব্যাবস্থা করে। স্থানীয় মেম্বার আমাকে ফোন করে বলে যে, কাকা আপনি একটু আসেন তা না হলে উত্তেজিত জনতা কিছু যদি করে বসে আমি একা সামাল দিতে পারবো না। তখন আমি পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায় সে জন্য একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি হিসাবে আমার দায়িত্ব মনে করে আমি সেখানে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি মেয়ে ও ছেলের বক্তব্য শোনার পরে শালিসের সভাপতি নাসির উদ্দিনসহ সকলকে পরামর্শ দেই তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হোক। আমার কথাই সকলে একমত পোষন করে এবং স্থানীয় মেম্বার ও কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে তাকে থানাতে নিয়ে যায়। আমি চলে আসার পরে শার্শা থারার দারোগা মামুনকে ফোন করে বলি ঘটনার বিবরন শুনে ব্যবস্থা নিবেন। দারোগা মামুন আমাকে বলে যে ছেলেটিকে পাঠিয়ে দেন।
এরপরে যারা থানায় নিয়ে যায় তাদের ভাষ্যমতে তারা ভিক্টিমকে দারোগা মামুনের কাছে হস্তান্তর করে এবং থানার ভিতর থেকে ভিকটিম নাকি পালিয়ে যায়। আমি এ ব্যাপারে কোন শালিস করিনি। ঐ ছেলেকে আমি সাথেও নিয়ে আসিনি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে আইনে সোপর্দ করার পরামর্শ দিয়েছি মাত্র। যারা নিয়ে গেছে থানাতে আর যার কাছে দিয়েছে তারাই একমাত্র বলতে পারবে। একটি মহল আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট ও সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
মহিবুলকে নিয়ে থানায় যাওয়া দাউদ ও মেম্বর রফিকুল বলেন, থানায় আনার পর আমরা দারোগা মামুন স্যারের হাতে তাকে তুলে দেই। মামুন স্যার তার পিটে ২টি থাপ্পড়ও মারেন। তারপর চলে আসার পর শুনি মহিবুল থানা থেকে পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার এস আই মামুনুর রশিদ জানান, চেয়ারম্যানের ফোনের পর কয়েকজন লোক ওই ছেলেটিকে থানায় নিয়ে আসে। পরে আমি কাগজ কলম আনতে গেলে এসে দেখি ওই ছেলেটি নেই। লোকজন বলছে বাথরুমের কথা বলে সে পালিয়ে গেছে।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, থানায় কোন ছেলেকে কেউ হস্তান্তর করেনি। আমরা কাউকে কারো কাছ থেকে বুঝে নেইনি। কেউ কোন অভিযোগও করেনি। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply