২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৪:৪৫/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

আউটসোর্সিং এর সম্ভাবনা ও সাফল্য

     

আবছার উদ্দিন অলি

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। আউটসোর্সিং বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। “তারুণের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি”। ‘আর নয় চাকরি খোঁজা, হবো সাহসী, হবো উদ্যোক্তা’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ বিনিয়োগ বিকাশ। এ লক্ষ অর্জনে উদ্যোক্তা সৃষ্টির ফ্রি প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগ সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ব্যবসা ক্ষেত্রে, আউসোর্সিং বলতে কোন একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়াকে বুঝায়। “আউটসোর্সিং” এর ধারনাটি এসেছে আমেরিকান শব্দ ‘ঙঁঃংরফব জবংড়ঁৎপরহম’ থেকে এবং এটি আমাদেরকে কমপক্ষে আশির দশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আউটসোর্সিং বলতে কখনো কখনো এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠান কর্মী হস্তান্তর করাকেও বুঝায়, কিন্তু সব সময় না। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সরকারি কাজ সমূহকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্টানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বিদেশি এবং দেশি ঠিকাদারি উভয় আউটসোর্সিং এর অন্তর্গত এবং কখনো আউটসোর্সিং এ দূরবর্তী দেশে নিজের প্রতিষ্ঠান স্থাপন (সমুদ্রবর্তী) অথবা পাশাপাশি কোন দেশে প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও অন্তর্ভূক্ত থাকে। একটি কোম্পানি আউটসোর্স করতে পারে (একজন আউটসোর্সিং সেবাদন কারী) দূরবর্তী দেশের কোন সাহায্য ছাড়াই উদাহরণস্বরূপ ২০০৩ সালে, চৎড়পঃবৎ ধহফ এধসনষব কোম্পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কর্মীদের আউটসোর্স করে। কিন্তু এতে তারা দূরবর্তী কোন দেশের সাথে সম্পৃক্ত হননি। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। কারণ এতে স্থানীয় শ্রমিকের চাইতে কম বেতন প্রদান করতে হয়। এটি আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে একটি বড় অনুপ্রেরণা।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং শব্দ দুটি এ দেশে অনেকের কাছেই পরিচিত। দেশের প্রচুর ওয়েবসাইট ডেভেলপার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, রাইটার, মার্কেটার বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন, আবার অনেকে নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মার্কেটে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। এখানে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ লাখ কাজ করেন মাসিক আয়ের ভিত্তিতে।

আউটসোর্সিং এর আসল উদ্দেশ্য ব্যবসার কাজে যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানেই টাকা ও সময় সাশ্রয় করা। এই নীতি অনুসরণ করে যেসব কাজ আউটসোর্স করা যায়, সেই সব কাজগুলো হলো- অ্যাকাউন্টিং, বুককিপিং, সেলস, মার্কেটিং, কপিরাইটিং, ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচারিং, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ব্যাক অফিস অ্যাসিস্টেন্স, কাস্টমার সার্ভিস, ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, ওয়েবসাইট মেইনটেইনেন্স, গ্রাফিক ডিজাইন এবং আরও অনেক কিছু। অনেক ক্ষেত্রে এমন কিছু ফ্রিল্যান্সার বা কোম্পানি খুঁজে পাওয়া যায় যারা বিশেষ একটি কাজে পারদর্শী, যেমন ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট। অন্যান্য সময়, দেখা যায় সে বা তারা অনেক রকম কাজে একসাথে পারদর্শী, যেমন গ্রাফিক্স ও ওয়েব ডিজাইন অথবা কোডিং ও ডেভেলাপমেন্ট।

পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে আপনি ট্যালেন্ট খুঁজে পাবেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার কাজের জন্য বেষ্ট ক্যান্টিডেট আপনি নিয়োগ দিতে পারবেন। এখন কেউ লোকাল চাকুরিতে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর অপর প্রান্তে থাকা কাউকেও নিয়োগ দিতে পারেন। নিজের দেশের বাইরে কাউকে আউটসোর্স করে কাজ দেয়া অনেক সুবিধার। যেমন দিন রাত চব্বিশ ঘন্টার কাস্টমার সাপোর্ট এর মত কোন কাজ অন্য টাইমজোনের মানুষকে দিয়ে করানো সহজ।

দেশে বিদেশে যেখানেই আপনি কাজ আউটসোর্স করেন না কেন, পাকাভাবে কাউকে চাকুরিতে রেখে কাজ করানোর চেয়ে সেটা অনেক সস্তায় করানো যাবে। যে কয়দিন কাজ করা লাগবে সেই কয়দিনের জন্য কাউকে কাজটি আউটসোর্সিং করে করিয়ে নিলে খরচ কমে আসে। আর গরিব কোন দেশ থেকে মানুষকে কম টাকায় খাটিয়ে নিলে অনেক টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এভাবে অনেক কম খরচেই কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। আর এই ভাবে কাজের কারণে বড় অফিসেরও দরকার হয়না, তাই ভাড়ার টাকা সহ অন্যান্য অনেক খরচ কমে যায়।

ব্যবসায়ীর একটি বিজনেস ডকুমেন্ট দরকার হলেও ছোট মাত্রার ব্যবসায়ীরা এটা করার সময় করে উঠতে পারেন না। কিন্তু আউটসোর্সিং করা শুরু করলে সব কাজের ডকুমেন্টেশন মেইনটেইন শুরু করা লাগে, তাই এটি আলাদা করে করা লাগে না। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ইমপ্লয়ীদের কাজের মান ও প্রসেস ট্র্যাক করা যায়। যাকে যা কাজ করতে দেয়া হয়েছে সে সেই কাজ করেছে কিনা তা টের পাওয়া যায়। তাই হিসাব রাখা সহজ হয়ে যায়।

আপনি সবচেয়ে ভালো ফুল বিক্রেতা হতে পারেন, কিন্তু আপনি গ্রাফিক্সের কাজে দক্ষ নন। তাই গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ আউটসোর্স করে দেয়াই ভালো। এমন কাউকে আউটসোর্স করা উচিৎ যে এই কাজে দক্ষ। এভাবে কাজ আরও ভালো মানে ও দক্ষ হয়। এতে নিজের কাজও প্রফেশনালি করা যায়। আর অন্যকে দিয়ে কাজ করানোর হিসাব ট্যাক্স রিটার্নের সময় লাভজনক হয়ে দাঁড়ায়।

যদি আপনার বিজনেসের মূল কাজ কাস্টমার সাপোর্ট দেয়া হয়, তাহলে সেটা রাত দিন করতে হয় সাধাণত। এই কাজ আউটসোর্সিং এর চেয়ে ভালো উপায়ে করার আর কোন পথ নেই। অন্য টাইমজোনের কাউকে দিয়ে এই কাজ করালে যখন আপনি থাকবেন না, তখনও কাস্টমারকে সাপোর্ট দেয়া সম্ভব।

আপনি যে কাজ করতে পারেন না, সেটা অন্য কাউকে দিয়ে করালে নিজের সময় বাঁচে। নিজের সময় বাঁচলে সে ফ্রি টাইম দিয়ে আপনি নিজের কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এই সময় আপনি আপনার প্রোডক্টের জন্য নতুন মার্কেটিং প্ল্যান সাজাতে পারবেন। মোট কথা, ব্যবসার কাজ না করে ব্যবসা বেশি করতে পারবেন।

আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে বিজনেস স্কেল করা। কর্মচারীদের দায়িত্বের বোঝা একটু কমিয়ে দিয়ে সেই ফ্রি সময় তারা আপনার বিজনেস স্কেল করার জন্য সহায়ক কাজ করে কাটাতে পারবে। ব্যবসার সময় ব্যবসা কাজে লাগিয়ে শেষ করে ফেললে ব্যবসা আর বাড়ানো যায় না। এই জন্য অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিজে ব্যবসার বড় করার কাজে আউটসোসিং ভাইটাল।

বাংলাদেশের অন্তত ২০ লাখ তরুণ-তরুণীকে ২০২১ সালের মধ্যে আউটসোর্সিং খাতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। বর্তমান সরকার ১ লাখ ৭০ হাজার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন বছরের মাথায় ইন্টারনেটে সংযুক্ত করবে। ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে, হাইস্পীড ফাইবার অপটিক কেবল ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই অবকাঠামো তৈরি করার জন্যই লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও বাড়বে বলে আশাবাদী। সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় তিন বছরের মাথায় এই চ্যালেঞ্জ চাইলেই পূরণ করা সম্ভব।

যারা এখন ইন্ডিভিজুয়ালি সাকসেসফুলি কাজ করছে তাদের মাধ্যমে ভাল ভাল কোম্পানি থেকে কাজ আনা যেতে পারে এবং এই কাজগুলো মেডিওকার কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে যেখানে কাজগুলো তাদের ছত্রছায়াতে পরিচালিত হবে। ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের দিক যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় তেমনটি আউটসোর্সিং খাতের প্রতি নজর দিলে বড় ধরণের পরিবর্তন আনা যাবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply