২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:২১/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৮:২১ অপরাহ্ণ

পথশিশুদের প্রতি নজর দিন

     

কাজী অমিত হাসান

প্রতিটি দেশ বা জাতির একটা নিজস্ব পরিচয় সত্তা থাকে। আর সেই পরিচয় সত্তা সেই দেশের মানুষই সৃষ্টি করে। অর্থাৎ মানুষের কর্ম দ্বারা দেশটি পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে দেশটির পরিচয় ছিল পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা নামে, তখন দেশটি বহির্বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ,ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত ও অভাব-অনটন দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশটি পরিচিতি লাভ করে একটি বীরত্ব জাতির দেশ হিসেবে, যার মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য দেশটির ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক, পুলিশ, বাঙালি সেনাবাহিনী ও বাংলার সকল স্তরের মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি। দেশ স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ নামে অনেকেই চিনত না ‘মুজিব কান্ট্রি’ নামেই বেশি সমৃদ্ধ ছিল।আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব,জাতির পিতা ছিলেন আমাদের দেশের আইডেন্টিটি।কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যা করার পরেই হঠাৎ করেই ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ ‘মুজিব কান্ট্রি’ থেকে ‘কিলার কান্ট্রি’ নামে পরিচিত হয়ে গেল।

১৯৭৫ সালের পর দেশটি শাসন শুরু করে দু’জন সেনা শাসক ও বিচারপতি সাত্তারের সংক্ষিপ্ত শাসনকাল। তখন আমাদের পরিচয় ছিল, পাকিস্তানের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেনা শাসকদের দেশ পরিণত।এরপর ৯০-এর গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদের পতন হলে খালেদা জিয়ার শাসন কাল শুরু হয়। তার সময়ে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল বিদেশি সাহায্য আর দয়া দাক্ষিণ্যে নির্ভরশীল দেশ হিসেবে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আবার নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে উঠতে থাকে।এরপর ২০০১-০৬ মেয়াদে খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠে সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ ও ১০ পার্সেন্ট এর দেশ।

আবার ২০০৯ সালে মমতাময়ী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দেশটি দ্রুত হয়ে উঠে উন্নয়নের একটি রোল মডেল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ। সবকিছু ঠিকঠাক মত চল্লেও,দেশের বৃহৎ একটি সমেস্যা হলো “পথশিশু”।

ঘূণ যেমন কাষ্ঠকে খেয়ে ফেলে ঠিক তেমনিভাবে পথশিশুরা একটি দেশের সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করে ফেলে। কারণ একটি দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রসর। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখ পথশিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর বিছানা নেই,৮৪ শতাংশ শিশুদের শীতবস্ত্র নেই,৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে, ৩৫ শতাংশ শিশু খোলা জায়গায় পায়খানা করে,৭৫ শতাংশ শিশু ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না, ৮০ শতাংশ শিশু মাদকাসক্ত নেশায় আসক্ত ও এসব পথশিশুরা বিভিন্ন বস্তি, রাস্তার ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালে জীবন অতিবাহিত করে। আমরা বাঙালিরা আবেগ-প্রবণ জাতি,আমরা পথশিশুদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি। যেমন:অনেকেই পথশিশুদের প্রতি করুণা করে,তাদেরকে কিছু টাকা পয়সা, খাবার ও পরিধানের বস্তু কিনে দেয়। আর যারা অতি দয়ালু তারা নিজের শরীরের কাপড় খুলে দেন। আবার কিছু মানুষ আছে যারা পথশিশুদের সকল অপকর্মে জড়িত রাখে। ক্ষমতায় থাকা দল/বিরোধী দলের সকল ইউনিটের নেতারা পথশিশুদের চোরাকারবার, দালালী,মাদকদ্রব্য, পতিতাবৃত্তি ও সন্ত্রাসী কাজে নিয়জিত করে। বিভিন্ন মিছিলে পথশিশুদের সংখ্যা গরিষ্ঠ থাকে(বিশেষ করে বিরোধী দল)। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মততাময়ী শেখ হাসিনার মতে,২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিনত হবে।দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ হবে ও শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বলবে।যে ১০ লক্ষ পথশিশুদের ঘর নেই, তাদের শিক্ষার আলো কে জ্বালাবে? তাদের ঘর ছাড়াই কি প্রতিটি ঘরে শিক্ষার আলো জ্বলবে? তাহলে পথশিশুরা কি বাসস্থান বহির্ভূত থাকবে? যেহেতু বাংলাদেশে বৃহৎ একটি সমেস্যা পথশিশু সেহেতু সরকার কেন এর স্থায়ীভাবে সমেস্যা সমাধান করছে না।

৪৮ বছরে যেই সমেস্যার সমাধান হয়নি তার সমাধান আদৌ কি হবে? বাংলাদেশ সরকার যদি প্রবাসী ১০ লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্র দিতে পারে তাহলে পথশিশুরা শিক্ষা,খাদ্র ও বাসস্থান কেন পাবে না? পরিশেষে বলি, আমরা পথশিশুদের প্রতি যতই করুণাভাবে তাকাই না কেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা কেউ তাদের আসল প্রাপ্য দিচ্ছি না।আমরা তাদের কিছু টাকা, খাবার ও বস্তু দান করি, এগুলো ওদের আসল প্রাপ্য না।ওদের আসল প্রাপ্য হলো ‘বর্ণমালার শিক্ষা’ অ,আ,ক ও,খ হ্যা এগুলোই ওদের আসল প্রাপ্য। তাই আসুন না আমরা সবাই পথশিশুদের প্রতি করুণভাবে না তাকিয়ে ওদের অধিকারের দিকে তাকাই।ওদের প্রাপ্য ওদের বুঝিয়ে দেই।তাহলে আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পাবর। আমরা আবারো আমাদের ‘মুজিব কান্ট্রি’ ফিরে পাব।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply