২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৪৩/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ২:৪৩ অপরাহ্ণ

সুপারিশ কমিটির মেয়াদ এক মাস পূর্ণ হলেও দেয়া হয়নি সিদ্ধান্ত : হতাশ শিক্ষার্থীরা

     

সাত কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট সুপারিশ কমিটির মেয়াদ এক মাস পূর্ণ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সরকারের কোনো তৎপরতা দেখেছেন না অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে এসে প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও কার্যকর সমাধান না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিল চাই কমিটির নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সাত কলেজ সমস্যা সমাধানে গঠিত সুপারিশ কমিটি শীঘ্রই সিদ্ধান্ত না জানালে আবারো অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলনের ডাক দিবেন সাধারন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের আহ্বায়ক শাকিল মিয়া জানান, প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত রাখি। সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে প্রথমে ১৫ দিন সময় নিলেন, তারপর আবার ৩০ কার্যদিবস সময় চাইলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ভিসি স্যার যখন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, তখন আমরা তাঁর কাছে এর সমাধান আশা করে ছিলাম। কিন্তু ৩০ কার্যদিবস অতিবাহিত হওয়ার পরও এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক কার্যকলাপ দেখছিনা। এ মুহুর্তে আমরা বিষয়টা নিয়ে হতাশ। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে শাকিল মিয়া জানান, আমরা যারা আন্দোলনে ছিলাম, আমরা চলতি সপ্তাহের মধ্যে বসবো এবং তাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো। খুব দ্রুত আমরা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবীতে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত কলেজের ব্যাপারটা ভুলে গেছে,এ নিয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । দাবী আদায় নাহ হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রশাসনকে অধিভুক্তি বাতিলে বাধ্য করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ অধিভুক্তি নিয় সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে গত ২৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সুপারিশ কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। ২৯ জুলাই কমিটির প্রথম বৈঠকে কমিটির মেয়াদ ৩০ কার্যদিবস করা হয়।কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলেও এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। কার্যকর কোনো সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেননি ওই কমিটি।এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন আন্দোলনকারা। এ বিষয়ে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদসহ কমিটির আরো দু-জন সদস্যকে একাধিক বার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সুপারিশ কমিটিতে থাকা ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরর সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত ২৯ জুলাই সাত কলেজের অধিভুক্তির বিভিন্ন সমস্যা ও শিক্ষার্থীদের দাবির সুষ্ঠু সমাধান কল্পে ভিসি কর্তৃক গঠিত কমিটির একবার বৈঠক হয়েছিল। এতে কমিটির সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ করেছেন। কিন্তু কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভিপি নুর বলেন, বৈঠক আমি মত দিয়ে ছিলাম সাত কলেজকে ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধীনে রাখা উচিত না। তবে যারা রানিং (চলমান) ভর্তি আছে, তারা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সেজন্যে তাদেরকে ঢাবির অধীনে কার্যক্রম শেষ করা। কিন্তু নতুন সেশন থেকে ঢাবির অধীনে ভর্তি না করা। তিনি বলেন, বৈঠকে কেউ কেউ সাত কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনের সুপারিশ করেন। আবার কেউ এই কলেজগুলোকে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আবার কেউ অধিভুক্ত রাখার কথাও বলেছেন। আলোচনার পর এমন একটি মতামত হয়েছিল যে, যারা সাত কলেজের শিক্ষার্থী আছেন এবং যারা অধিভুক্তি বাতিল চাচ্ছেন, এবং সাত কলেজের শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করে একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু ঈদের ছুটি ছিল, বিষয়টি নিয়ে আর বসা হয়নি। তবে এ সমস্যা সমাধানে আরো সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে সুপারিশ কমিটির সদস্য এবং ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী কে এ সম্পর্কে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি। উল্লেখ, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে চাপ কমানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে সরকার। কলেজগুলো হলো- ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কাজী নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ এবং মিরপুর বাঙলা কলেজ। কিন্তু অধিভুক্ত করার ফলে শিক্ষার মানতো উন্নত হয়নি বরং নতুন সংকট তৈরি হয়। উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই থেকে সাত কলেজ অধিভুক্ত বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। টানা দুইদিন আন্দোলনের পর ১৯ জুলাই চার দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে স্থবিরতা কাটাতে শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে কার্যকর সমাধানের আশ্বাস দেন ডাকসুর নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে অধিভুক্তি নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্যের বিশিষ্ট কমিটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply