১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১১:২০/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রীনিবাস, অমানবিকতা এবং অন্যায়

     

আজহার মাহমুদ

আমাদের সমাজ দেশ সবকিছুই এখন উন্নত। এটা আমাদের মানতেই হবে। আগেকার সময় ছেলেরাও ভালো করে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করতো না। আমার বাবাদের সময়ও শতকরা ৩০ শতাংশ মানুষ ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়াশুনা করতো। আর মেয়েরা তো সেখানে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়লে অনেক বেশী।
কিন্তু বর্তমান সময় সেই অন্ধকার ধাধা থেকে বের করে এনেছে মানুষকে। এখন পড়াশুনা করে নিজের উপর নিজে নির্ভরশীল হতে চায় সকলে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এখন অনেক এগিয়ে। সবস্থানেই মেয়েরা সমান পারদর্শী। তাই বাবা-মায়েরাও এখন ছেলেদের সমান গুরুত্ব মেয়েদের দিচ্ছে। পড়াশুনার শেষ স্তর পর্যন্ত এখন মেয়েরা পৌঁছে যাচ্ছে সাফল্যের সাথে।
কিন্তু এসব সাফল্যের পেছনে থাকে অনেক কষ্ট, অমানবিকতা এবং নির্যাতন। হয়তো মেয়ে বলেই এমনটা সম্ভব। যাই হোক মূল কথায় আসি। উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি মেয়ে পরিবার-স্বজন রেখে অচেনা শহরে এসে স্থান খুঁজে নেয় হোস্টেলে। আমাদের শহরে এখন এমন অনেক ছাত্রী হোস্টেলে রয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও এখন মেয়েদের পড়াশুনা করার জন্য হোস্টেলে রেখে নিরাপদে বাড়ি যায়। কারণ এখানে তারা ভালো থাকবে। তাই বেশিরভাগ মেয়েরাই হোস্টেলে থাকে। শুধু মাত্র পড়াশুনার জন্য।
যদি ছেলে হতো তাহলেও বাবা-মা এতো চিন্তা করতো না, কিন্তু মেয়ে বলেই এতো চিন্তা। কারণ চারিদিকে যেভাবে নর পশুরা উৎপেতে রয়েছে তাতে সব বাবা-মা’রাই চিন্তা করবেন। যেখানে ২ বছরের শিশু রেহাই পাচ্ছে না সেখানে আর কিইবা বলবো। তাই বলেতো পড়াশুনা থেমে থাকবে না! জীবন যুদ্ধে পড়াশুনাটাও জরুরী। এজন্যই সব ছেড়ে অচেনা একস্থানে এসে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় এসব মেয়েদের। ছেলেদের বেলায়ও একই। তবে আমাদের সমাজে একটা ছেলে যা করে একটা মেয়ে তা করতে পারে না। যেমন আমার হোস্টেলের খাবার ভালো লাগলো না, আমি হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসলাম। আমার ক্ষুধা লাগলো, আমি নাস্তা করে আসলাম। আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে আমি চা খেয়ে এলাম। কিন্তু একটা মেয়ে হলে ? আমাদের এ সমাজে সেটা অনেক কিছু হয়ে যাবে। একটা মেয়ে হোটেলে বসে চা খেলে পুরো হোটেলের মানুষ তার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে। আর কিছু বিকৃত মনষ্কের লোক পরিবশেটাকে আরও নোংরা করে তোলে। অনেকে আবার এটাকে ধর্মের জালে আটকে দিয়ে নানান যুক্তিও দিবে। কিন্তু আমরা একবারও তাদের চাহিদা, ইচ্ছার কথা চিন্তা করি না। আমরা একবারও গভীরে চিন্তা করি না। বাইরে যা দেখি তাতেই মন্তব্য করি।
এবার আসি মূল বিষয়ে। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরো পৃথিবীটাই অনিরাপদ। তবুও এসব ছাত্রীরা যখন হোস্টেলে থাকে তখন বাবা-মা’রাও একটু নিশ্চিন্তে থাকেন। কিন্তু এসব নিরাপদ হোস্টেলেও যখন চলে অন্যায় আর নির্যাতনের মতো কান্ড, তখন বাকশক্তিটাও হারিয়ে ফেলি। একদিন আগের বাসি নষ্ট ছোলা দিয়ে পরেরদিন সকালেও যখন নাস্তা করতে হয় হোস্টেলের ছাত্রীদের, তখন বলতে ইচ্ছে করে হে মানবতা, তুমি কি সত্যিই হারিয়ে গেছ?। হ্যাঁ এমনও অমানবিক কাজ করা হয় এখনকার হোস্টেলগুলোতে। চট্টগ্রাম নগরীরর একটি ছাত্রীনিবাসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এমন অভিযোগ উঠে। অথচ, এসব ছাত্রীদের অভিবাকরা প্রতি মাসের শুরুতেই ৪৮০০ টাকা করে দিয়ে যায়। বিনিময়ে ২ বেলা ভাত, এক বেলা নাস্তা। আসলে এখন ছাত্রী নিবাস কিংবা ছাত্র নিবাস বলতে কিছু নেই। সবকিছুই এখন মানুষের টাকা মেরে খাওয়ার ফন্দি।
অভিবাকরা না পারতে, বাধ্য হয়ে হোস্টেলে তাদের সন্তানদের রাখছেন। কিন্তু কে জানতো মাসে এতোগুলো টাকা দেওয়ার পরও তাদের মেয়েদের বাসি-পঁচা খাবার খেতে হবে। শুধু যে সকালের নাস্তা তা নয়, অনেক সময় দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবারেও এমন অমানবিক কাজ করে হোস্টেলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানায়, তারা যখন এ বিষয়ে হোস্টেল সুপারকে নালিশ দিয়ে তখন হোস্টেল সুপার তাদের জবাব দেয়, ভালো না লাগলে চলে যাও। যার অর্থ দাড়াঁচ্ছে পচাঁ-বাসি খাবার খেয়ে থাকলে থাকো, না থাকলে চলে যাও। অর্থাৎ এতোগুলো টাকা নিয়েও তিনি ছাত্রীদের পচাঁ-বাসি খাবার দিবেন।
এতে স্পষ্ট প্রমাণ হয় এখন মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই। মানবতাতো দূরের বিষয়। আমরা এখন মানুষকে তার ন্যায্য পাওনাটাই দিই না। তবুও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে এসব ছাত্রীদের। কারণ পড়াশুনা আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত সুবিধা আছে বলে। অনেক ছাত্রী খেয়ে না খেয়ে একমাত্র স্বপ্ন পূরনের জন্য থেকে যাচ্ছে এমন নির্মম পরিস্থিতিতেও। এমন কষ্ট আর নির্মমতার পরও একদিন এসব ছাত্রীরা সফলতার চূড়ায় উঠবে। যদি তাদের একটু সুন্দর পরিবেশ এবং ভালো খাবার দিয়ে আরও ভালো রাখতো এ সমাজ, তাহলে হয়তো তারা পুরো বিশ্ব জয় করতো। হয়তো মেয়ে বলে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু যারাই এসব অন্যায় করছেন তাদের শাস্তি প্রাপ্য। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। সমাজের উচ্চ মহলের এবং অভিবাকদের সজাগ হতে হবে। নতুবা এভাবেই অপরাধগুলো বড় হতে থাকবে। তাই সময় থাকতে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে এবং প্রশাসনের দৃষ্টি দিতে হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply