১৬ এপ্রিল ২০২৪ / ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:২৪/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ৫:২৪ অপরাহ্ণ

ইন্টারনেট, পর্নোগ্রাফি ও নৈতিকতা

     

আজহার মাহমুদ
দেশ, সমাজ, জাতি যত আধুনিক হচ্ছে তত বেশি নৈতিকতার বিপর্যয় ঘটছে। আপনি ভাবতে পারেন আধুনিকতার সাথে নৈতিকতার বিপর্যয়ের সম্পর্ক কি! কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে সেটা আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।

বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। যেখানে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী এই দেশের ৮০ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত। যা আট কোটিরও বেশি। যেখানে ২০০০ সালে এক লাখ মানুষ ইন্টারনেট চালাতো, সেখানে ২০১৭ সালে আট কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। গড় হিসেবে প্রতি বছর ৪৭ লাখ মানুষ ইন্টারনেটের সাথে জড়াচ্ছেন। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম প্রযুক্তির সহজলভ্যতা কতটুকু সহজ হয়েছে এখন। কিন্তু এই প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সাথে সাথে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে নগ্নতা। আজ থেকে কয়েক দশক পূর্বে যা হাতের কাছে পাওয়া দুষ্কর ছিল তা আজ মিলছে কিবোর্ডে কয়েকটি বোতাম টিপলে। ফলে শিশু, যুবক, নর-নারী প্রায় প্রত্যেকেই এই বিষয়ে ঝুঁকে যাচ্ছে যা অপ্রিয় হলেও সত্য। এমনকি বিভিন্ন সাইটে নগ্ন ভিডিও, ছবি হোম পেইজে শো করা হচ্ছে। ফলে সদ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়া ছেলেমেয়েদের মনে বিকৃত রুচির জন্ম দিচ্ছে। আজকাল ফেসবুক থেকে শুরু করে যেকোনো মাধ্যমেই নগ্নতা চোখে পড়ে। হাতের কাছেই এখন পর্নোগ্রাফি এবং নগ্ন ভিডিও। আর সেই সুযোগ সহজেই লুফে নিচ্ছে বর্তমান তরুণরা। এটা এখন একটি নেশার মতো রূপ নিয়েছে। আপনি সিগারেট খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে যেমন আর ছাড়তে পারেন না, তেমনি পর্নোগ্রাফি দেখতে দেখতে এক সময় সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। তাই নিজেকে সংযত না রাখলে এসব সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় নেই। কোনো ভদ্রলোক একবার বলছিলেন, আগে আমরা টিফিনের টাকা দিয়ে বল কিনে খেলতাম, আর এখনকার বাচ্চারা মোবাইলের এমবি কার্ড কিনে। এমবি কার্ড কিনলে যে সে পর্নোগ্রাফি দেখবে তা নয়। কিন্তু টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কেন একটা বাচ্চা এমবি কার্ড কিনবে? প্রশ্নটাও জরুরি। বর্তমানে যারাই ইন্টারনেটে আসক্ত তার ৪০ শতাংশ নগ্নতায়ও আসক্ত। তারই ফলশ্রুতিতে দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ, যৌন-নির্যাতনের মতো ঘটনা। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে একটি বিকৃত মনমানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিচ্ছি।

এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরের প্রতি সম্মানবোধ, নৈতিক মূল্যবোধ এবং মানবতা সব অনলাইনমুখী হয়ে পড়েছে। এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মানুষ মানবতা দেখায়। কিন্তু বাস্তবে তাদের ভেতর মানবতা এবং মনুষ্যত্বের ছিটেফোঁটাও নেই।

এখন ভ-ামি আর প্রতারণার অন্যতম স্থানও ইন্টারনেট। যে মেয়েটার প্রোফাইল পিক নগ্ন, সে মেয়েটা আবার পোস্ট দেয়, ‘ছেলেরা এতো নোংরা হয় কীভাবে?’, আবার একটি ছেলের প্রোফাইলে ঢুকতেই লেখা আছে, ‘অনেস্ট ইজ দ্যা ব্যস্ট পলিসি’, কিন্তু সেই ছেলেটিই তার পেইজ বিক্রি করবে বলে বিকাশে টাকা নিয়ে বস্নক করে দিয়েছে। যে মেয়েটা সারারাত ইয়াবা সেবন করে সে মেয়েটা ফেসবুকে আবার স্ট্যাটাস দেয়, ‘ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম’। ঘুষখোর লোকটিও সারাদিন অবৈধ পথে আয় করে রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, আল্লাহ আমাকে রহমত করছেন বলে আজ আমি সবার চাইতে ভালো। যে ছেলেটা সারারাত পর্নোগ্রাফি দেখে সেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলে, সমাজটা নোংরামিতে ডুবে গেছে।

এ থেকে আমরা কি বুঝতে পারবো? এখানে সব ভ-ামি। আসলে আমরা সকলেই সভ্য। কিন্তু সভ্যতার আড়ালে আমাদের আরও একটা মুখোশ আছে। যেটা আমাদের বাস্তব রূপ। এরকম মুখোশ থাকতে পারে আপনার আমার সবার। কিন্তু ইন্টারনেটে আমরা সবাই সভ্য এবং সাধু।

আমি কখনও বলবো না প্রযুক্তি আমাদের কাজে আসছে না। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কাজেই প্রযুক্তির ব্যবহারকে নাকচ করে উপরোক্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে এর যথাযথ, নিয়মতান্ত্রিক ও সংযমী ব্যবহার আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তা না হলে মনুষ্যত্বহীন একটি সমাজ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply