সুনামগঞ্জে শুরু হয়েছে বন্যা : সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টি মিটারের উপর দিয়ে
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ : প্রবল ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টি মিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর জাহাঙ্গীরনগর ও সুরমা ইউনিয়ন ও পৌরসভা সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এছাড়াও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই উপজেলাগুলো বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৪১৫ মিলিমিটার । অব্যাহত ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষায় সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা ৭.২০ সেন্টিমিটার হলেও শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৭.৮৮ সেন্টিমিয়ার উপর দিয়ে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরন কেন্দ্র। ফলে নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এদিকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনবার্সন কর্মকর্তা ফরিদুল হক।
শুক্রবার সরজমিনে সুনামগঞ্জ পৌর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে সদর উপজেলার কুরবান নগর ইউনিয়নের ধারারগাঁও, হালুয়ারঘাট, সুরমা ও জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল । সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুলতানপুর,আপ্তাবনগর,নবীনগর, বড়পাড়া,কাজিরপয়েন্ট, উকিলপাড়া, সাববাড়ীঘাট জেল রোডের এলাকার বিভিন্ন ঘরবাড়ী, দোকানপাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়াও পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় নালা নর্দমা ও ড্রেনগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবলে পানিবন্দী রয়েছেন শহরের আরফিনগর, সোমপাড়া, রায়পাড়া, মুক্তারপাড়া, নতুন পাড়া, বখত পয়েন্ট, ষোলঘর পয়েন্ট, বড়পাড়া, কাজির পয়েন্ট, পশ্চিম বাজার, লম্বাহাটি ও জেল রোডসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। অনেক বাসাবাড়ী, দোকানপাঠে পানি উঠতে দেখা গেছে। বন্ধ রয়েছে রান্না ঘরের চুলা ও বিদ্যুৎ সংযোগ। এভাবে আরো এক দুদিন চলতে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান ভোক্তভোগীরা।
আরফিন নগর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, সকাল থেকে পানি বন্দী অবস্থায় আছি। বাসার প্রতিটি রুমে পানি ঢুকেছে। সকালে রান্না হয়নি। বাহির থেকে নাস্তা কিনে এনেছি। সুলতানপুর এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে অনেকের বাসাবাড়ীতে পানি ঢুকেছে আমরা অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছি। তেঘরিয়া ঘাট রাস্তায় হাটু-উরু পানি। এভাবে আরো একদিন চলতে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, সুরমা নদীর পানি ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ত্রান ও দুর্যোগ পুনবার্সন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের খবর এখনো পাইনি। তবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরীর জন্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১১ টায় সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা বাজারসহ উত্তরপাড়ের বিভিন্ন উপদ্রুত অঞ্চল ও ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা,সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল হোসেন,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া,সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ ছত্তার ডিলার,জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকশেদ আলী,পদক্ষেপ এর উপ-ব্যবস্থাপক হাসানুর রহমান পাভেল,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জোনের জোনাল ম্যানাজার মোঃ রফিকুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ এরিয়ার এরিয়া ম্যানেজার মোঃ গোলাম এহিয়া ও সমৃদ্ধি কর্মসুচির সমন্বয়কারী মোঃ শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ। তারা ধৈর্য্যের সাথে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জনসাধারনকে আহবাণ জানান।
চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকশেদ আলী জানান, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ইতিমধ্যে সরকার ৬ টন খয়রাতি চাল প্রদান করেছে।
সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসকের বাসভবনেও পানি উঠেছে। সাধারন মানুষের ন্যায় জেলা প্রশাসকের পরিবারও পানিবন্দী রয়েছেন। তারপরও প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ।