২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৫২/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১২:৫২ অপরাহ্ণ

আমার বাবা আমার বটগাছ

     

আজহার মাহমুদ

বাবা, একটি নাম! শুধুই কি নাম ? না। আমার কাছে বাবা মানে প্রাণ। আমার কাছে বাবা মানে নতুন ভোরের আলো। আমার কাছে বাবা মানে বেঁচে থাকার শক্তি। এই যে সুন্দর পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি, তার অংশীদার কিন্ত মা-বাবা দু’জনই। এটা আমরা সকলেই জানি।  সমাজ, দেশ এবং আমাদের সংস্কৃতি মায়ের প্রতি যতটুকু ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি দেখায় ততটুকু বাবার প্রতি দেখায় বলে আমার মনে হয় না। মাকে হয়তো কাছে একটু বেশি ভালোবাসা উচিৎ। কিন্তু বাবা! তার কি কম হলেও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই?
বাবা নামটাই সন্তানের জন্য। একজন পুরুষ যখন বাবা হয়ে যায় তখন কার চিন্তা-চেতনায় থাকে শুধু সন্তান। সন্তানের প্রতি তার যে দায়িত্বটা রয়েছে সেটা পালন করার জন্যই রোজ নিজের সাথে যুদ্ধ করছে। কিন্তু আমরা সন্তান হয়ে বাবার প্রতি যে দায়িত্ব আছে তা কয়জন পালন করছি। বৃদ্ধ হলে যে বাবাদের আমরা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছি তারাই আজ আমাদের এ পর্যন্ত এনেছে। অথচ আজ আমরা সেটা ভুলে গেছি। মায়ের গর্ভে হয়তো মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু পৃথিবীতে এসে বাবাকে দিয়েছি কঠিন পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ। বাবার সামনে সন্তানের পড়া শুনার খরচ, খাবারের দায়দায়িত্ব, জামা, চিকিৎসা এবং আমার সুখে থাকার চ্যালেঞ্জ। যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাবা রোজ লড়াই করে যাচ্ছে নিজের সাথে। এসব কার জন্য? সন্তানের জন্য। কিন্তু সেই সন্তানই একদিন “বাবা” নামক প্রাণীটিকে চিনে না।
পৃথিবীতে জন্ম হওয়ার পর প্রথম যে দিন বসতে পারি, সেদিন বাবার কাঁধে বসেছিলাম, আর আমার বালিশ ছিলো বাবার বুক। যার চুমু না পেলে আনন্দ পেতাম না তিনিই বাবা। যার হাত ধরে প্রথম স্কুলে গিয়েছিলাম তিনিই বাবা। পরীক্ষার হলে গিয়ে সন্তানের জন্য নিজের কাজ ফেলে দাড়িঁয়ে থাকা মানুষটাই বাবা। যখন সে মানুষটাই জীবনের শেষ বয়সে এসে সন্তান থেকে আঘাত আর অবহেলা পায়, তখন বাবা নামটার সাথেই অন্যায় অবিচার হয়। এটা দু-একজন বাবার কথা নয়। পৃথিবীর সব-বাবারাই এমন। সন্তানের কাছে বাবা আজীবন এক রকম থাকবে। কিন্তু সব সন্তানরা কি এক? প্রশ্নটা সব সন্তানদের কাছে রইলো। আপনি কেমন সেটা আপনিই বিচার করুন। বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাজীবন পরিশ্রম করে শুধু মাত্র আমাদের জন্য। প্রতিটা বাবাই চান তার সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। আর আমরাই একদিন অমানুষের মতো আচরণ করে বাবাকে দূরে সরিয়ে দিই। আমাদের কষ্ট হলে বাবারও কষ্ট হয়। আমরা হয়তো তা বুঝতে পারি না, কারণ বাবা আমাদের সেটা বুঝতে দেন না। কিন্তু আমরা বাবার কষ্ট হলে কখনো কী নিজেদের কষ্ট অনুভব করি? এমনও কিছু কিছু নজির রয়েছে যে বাবা সন্তানকে সারাজীবন পরিশ্রম করে বড় করে তুলেছে আজ সেই সন্তান তার বাবাকে আঘাত দিয়ে চলে গেছে। কারণ আজ তার হয়তো আর বাবার প্রয়োজন নেই। তবুও সব বাবারাই চায় তার সন্তান ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, সুন্দর থাকুক। আমরা সকলেই হয়তো তেমন নোংরা সন্তান না, তবে আমরা সন্তান হিসেবে কেমন তা আমরা নিজেরাই জানি। আমরা আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করলেই উত্তর পাবো।
বাবার চিন্তা থাকে শুধু পরিবার আর সন্তান। কীভাবে সন্তানের চাহিদা পূরণ করবে, কীভাবে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করবে সেই চিন্তা নিয়েই বাবার বাকি জীবন কাটে। মৃত্যুর আগেও বাবা নামক মানুষটি তার সন্তানের জন্য চিন্তা করে যাবে। হ্যাঁ, এটাই বাবা। বাবার চিন্তার ভাগ নেয়ার মতো কেউ থাকে না। বাবাকে একাই তার সব চিন্তার ভার নিয়ে চলতে হয়। আর আমরা সেই বাবাকেই অনেকসময় ভালোবাসতে জানি না, দেখাতে পারি না কৃতজ্ঞতা। একটা সময় পৃথিবীতে আমাদের অনেক আপনজন হয়ে উঠবে। কিন্তু বাবার কাছে সন্তান ছাড়া তখন কেউ আপন থাকে না। সেই বৃদ্ধ বাবাকেই আমরা একা করে দিই অনেকসময়। বাবা কীভাবে সময় কাটায়, কীভাবে খায়, কীভাবে ঘুমায় সে খবরটাও আমরা রাখি না। আমরা কি কখনও জানতে চেয়েছি, বাবা তোমার ডায়বেটিসের কি অবস্থা? নাকি কখনও জিগ্যাস করি, বাবা তোমার প্রেসার কেমন? আসলে আমরা ব্যক্তিত্বহীন। তাই আমরা এসব কিছুই জানতে চাই না। বাবাকে নিয়ে আসলে বলতে গেলে বলা শেষ হবে না। শুধু আমার বাবার কথা লিখতে গেলেও হাজার বছর ধরে লিখতে পারবো। তাই আজ এতোটুকুতেই চুপ রইলাম। ভালো থাকুন পৃথিবীর সব বাবা। ভালো থাকুন আমার বাটগাছ আমার বাবা। আজ লোক দেখানোর জন্য তোমাকে ভালোবাসি বলবো না। তবে বলবো, তুমি আমায় ভালোবেসো বাবা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply