২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:১৭/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৩:১৭ অপরাহ্ণ

মাদক প্রতিরোধ ও বর্তমান পরিস্থিতি

     

মাহমুদুল হক আনসারী
মাদক উৎপাদন, পাচার ও সেবন একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে মাদকের কারবার বিগত দিনে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। পার্শ¦বর্তী দেশ থেকে অহরহ নেশা দ্রব্য প্রবেশ করছে। বর্ডারে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দেশে মাদক প্রবেশ কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাদকের বিরোদ্ধে কঠোর অবস্থান দেখছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে মাদক কারবারিদের সতর্ক করেছেন। মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্টানে জনগণকে মাদকের বিরোদ্ধে উদ্বুদ্ধ করছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্টানের পরিচালক, ইমাম, খতিবগণ সভা সমাবেশে জনগণকে মাদকের বিরোদ্ধে সতর্ক করতে দেখা যাচ্ছে। তবুও এতো সব তৎপরতার মধ্যেও মাদক উৎপাদন, পাচার, বেঁচা-বিক্রি ও সেবনকারী কোনো অবস্থায় থামছে না। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকের বিরোদ্ধে অব্যাহতভাবে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক যেখান থেকে দেশে প্রবেশ করছে এবং যাদের সামনে জনগণের পকেটে ঢুকে পড়ছে সে জায়গায় জনগণের নানা প্রশ্ন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পাহারার মধ্যে কীভাবে নেশাদ্রব্য দেশে প্রবেশ করছে সেখানে অসংখ্য প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে। একটি জাতি ও প্রজন্মকে ধ্বংস করতে নেশা ও মাদকের বিকল্প নেই। যুব সমাজ আগামীর ভবিষৎ নেশায় অভ্যস্থ’ হলে সে জাতিকে ধ্বংস করতে আর কিছুই লাগে না। একজন নেশাগ্রস্ত যুবক একটি পরিবারকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে যথেষ্ট। আর একটি নেশাগ্রস্ত বাহিনী গোটা দেশকে অস্থির ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অঙ্গন ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেশার প্রবেশ হলে সে ক্ষেত্র শেষ হয়ে যাবে। সমাজের যে সমস্ত মাদকসেবী মাদকের সাথে সম্পৃক্ত তারা সংখ্যায় বেশি না হলেও তাদের হাত অনেক সম্প্রসারিত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অনেক শক্তি রয়েছে। তাদের সামনে সমাজের ভালো মানুষগুলো কথা বলতে পারে না। সমাজ নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও তাদের বিরোদ্ধে আইনের প্রয়োগ দেখাতে পারে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলে। কোনো কোনো সময় স্বয়ং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এ জঘন্য অপকর্মের সাথে যুক্ত হওয়ার সংবাদও পত্রিকায় দেখা যায়। যাদের হাতে মাদকের সম্প্রসারণ নিয়ন্ত্রণের কথা তারাই যখন এ কাজের ধারক বাহক পাচারকারী হয়ে যায় তখন সমাজের আর কি করার থাকে? ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে কঠোর অবস্থান ও পদক্ষেপ থাকার পরও মাদক ও নেশা সংশ্লিষ্টরা পার পেয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায় মাদকের বিরোদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্টানের পরিচালকের উপর সন্ত্রাসী হামলার সংবাদও দেখা যায়। রাষ্ট্রের পক্ষে প্রশাসনের কর্মকর্তা যখন মাদকের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তখন কোনো সমস্যা হয় না। আর যখন ধর্মীয় প্রতিষ্টানে নেশা মাদকের বিরোদ্ধে বক্তব্য উপদেশ রাখা হয় তখন মাদকসেবীদের গাত্রদাহ হয়। দেশের বিভিন্ন্ অঞ্চলে মাদক কারবারিদের হামলার শিকার হচ্ছে, ধর্মীয় প্রতিষ্টানের পরিচালকগণ। এসব সংবাদে অপরাপর ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরী হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে এসব অপকর্মকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যতায় ভালো কাজে যাদের সম্পৃক্ততা থাকে, তারা ওদের ভয়ে সরে পড়বে। সরকারকে ধর্মীয় প্রতিষ্টানের পরিচালকদের নিরাপত্তা দিতে হবে। ধর্মীয় মাহফিল, সভা, সম্মেলনে যারা সমাজ দেশ ও রাষ্ট্রের ভালো মন্দ উপস্থাপন করে সমাজকে আদর্শিক পথে পরিচালনায় অবদান রাখছে তাদের জন্য প্রশাসনের নিরাপত্তা থাকা চায়। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খবরে দেখা যায় অনেক স্থানে ধর্মীয় বক্তাদের উপর হামলা হচ্ছে। অবশ্যই সরকারকে জনগণের স্বার্থে তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। ভালো মন্দ বলার পরিবেশ না থাকলে সে সমাজ অন্ধ ও বধির হয়ে যাবে। এক দলীয় শাসন আর সমাজ তখন প্রতিষ্টা হবে। তাই সমাজের একটি শ্রেণীকে অবশ্যই সমাজের ভালো মন্দ বলতে হবে। তবেই সমাজ কিছুটা হলেও সতর্ক ও ন্যায়ের পথে চলতে চেষ্টা করবে। মাদককে নিয়ন্ত্রণ ও এর পৃষ্টপোষকদের আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা না হলে এদেশের ভবিষৎ খুবই অন্ধকার। বাংলাদেশ সরকার সেটা অনুধাবন করেই মাদকের বিরোদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগকে দেশের মানুষের সর্বাত্মক সহযোগীতা দেখাতে হবে। পরিবার থেকে সমাজ প্রতিটি পাড়া মহল্লায় মাদকের বিরোদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্কুল কলেজ বিদ্যালয় শিক্ষার পাশাপাশি মাদকের ভয়ানক অবস্থা তুলে ধরতে হবে। যেকোনো মাদক ব্যবহারকারীকে পরিবার থেকে প্রতিষ্টান পর্যন্ত বয়কট করতে হবে। মাদকসেবীদের সরকারি চাকরীর জন্য অযোগ্য হিসেবে রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্টানে নেশা মাদকসেবী মুক্ত রাখা চায়। জন চলাচল রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ, সরকারি আঙিনাকে মাদক ও ধুমপান মুক্ত রাখতে হবে। নেশাজাতীয় সমস্ত বিষয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যে সকল সদস্য মাদক পাচারের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে জনসম্মুখে কঠোরভাবে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রের সঠিক নির্দেশনা যাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে প্রশাসন তাদের যদি নৈতিক চরিত্রের এ অধপতন হয় তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র কোনো অবস্থায় তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পৌঁছা সম্ভব হবেনা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply