২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:৩৬/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

বাজেট কেমন হওয়া চাই

     

মাহমুদুল হক আনসারী
বাজেট নিয়ে চতুর্দিকে আলোচনা আর সমালোচনা চলছেই। বাজেট প্রণয়ন বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তার কোনো শেষ নেই। বাজেটের উদ্দেশ্য ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়ন। আমাদের মতো পরনির্ভরশীল অর্থনীতির দেশে বাজেটের গুরুত্ব তাৎপর্য্য নিয়ে আলোচনার কোনো শেষ থাকে না। বাজেট সেটা যেরকমই হোক ন্ াকেনো প্রভাব থাকে বছর ব্যাপী। বাজেট সামষ্টিক অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনের উপর নির্দেশনা তৈরী করে। অর্থনীতির সার্বিক কর্মকান্ডকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসে। আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজনীতিতে বাজেট রাজনীতি, অর্থনীতিকে প্রকটভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাজেটে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের আলোচনা পর্যালোচনা থাকে। কর রাজস্বের নীতিমালা ও ধার্যকরের তালিকা থাকে। অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির বিবরণ পাওয়া যায়। বাজেট হলো রাষ্ট্রের জনগণের নিত্যদিনের আয় ব্যয়ের আশা আকাঙ্খার ও আনন্দ বেদনার সীমানা তৈরী করে দেয়। বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হলো অতীত, বর্তমান ও ভবিষৎকে একসঙ্গে ধারণ করে অতীতের মূল্যায়ন, বর্তমানের অবস্থান এবং ভবিষৎতের চিন্তা ভাবনাকে তুলে ধরে। ফলে বাজেটে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় অর্থনীতির গতিও পথপ্ররিক্রমায় বাজেট ভাবনা কর্মকান্ডের বাস্তবায়ন এবং তার আলোকে বর্তমানের বরাদ্দ নির্ধারণ এবং ভবিষৎতের ভাবনা তুলে ধরা হয় বাজেটে। বাজেট পর্যালোচনায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিংবা অগ্রগতি কোন পর্যায়ে আছে তা উপলব্দির সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই বাজেটকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অগ্রগতি আর উন্নয়ন সমস্ত কিছুর উপর ভবিষৎ কর্মপন্থা বাস্তবায়ন করার পরিবেশ তৈরী হয়। গতানুগতিকভাবে উপস্থাপনের পরিবর্তে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট এখন সংসদে উপস্থাপিত হয় অর্থনীতির নানা নির্দেশক সূচক, তথ্য, উপাত্ত, ডিজিটাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে। বর্তমানে সকলেই উন্নয়নের ধারা এর প্রতিবন্ধকতা সমস্যা সমূহের সমাধানের উত্তরণ জানতে আগ্রহী। বাজেট প্রস্তাবনা পেশের পূর্বে জনমত সৃষ্টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় সারা বিশ্বে। আমাদের দেশে সে ধরনের জনমতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ দেখা যায়। বাজেটকে গণমুখী, জনবান্ধব, বাস্তাবায়নে উদ্বুদ্ধকরণে সংস্কারধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাজেটে জনগণের প্রতি সরকারের এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের দায়বদ্ধতার ধারাসমূহ সবশ্রেণী পেশার মানুষের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ থাকে। প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের আয় ব্যয়ের দায়বদ্ধতা দলিল হিসেবে বাজেটকে দেখা হয়। বাজেট হলো সরকার এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক দায় দায়িত্ববোধের নির্দেশিত একটি পথ। বাজেটকে প্রকৃত সুষম বাজেট করতে হলে তার সার্বিক বিষয় যুগোপযুগি করণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দেশ ও সরকার তার পরিবেশ ও জনগণের জন্যেই তা করে থাকে। আর বাজেটের বিধানবলির আলোকে জনগণ ও সরকারের পথচলা ঠিক করে দেয়। তাই বাজেটকে জনবান্ধব ও গণমুখীকরণের চেষ্টা থাকা চাই। জাতীয় সংসদে এখন বাজেট প্রস্তাব শুধুমাত্র পাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পাওয়ার পয়েন্টে হাইলাইটসগুলো সাথে সাথে প্রদর্শিত হচ্ছে। বুলেট পয়েন্টে অগ্রগতি ভবিষৎ কর্মপরিকল্পনার সারাংশ তুলে ধরা হয়। চার্টে জনগণ জানতে পারে সম্পদ কীভাবে, কোথা হতে আসছে ও পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া গুরুত্বের সাথে বাজেটের উপর বিশেষ আলোচনা পর্যালোচনা চালিয়ে থাকে। কিন্তু বাজেট হিসেবে আমজনতার অর্থনীতির উপর তাৎপর্য্য অর্থবহ করে ঠাঁই করতে পারছে না এখনো আমাদের দেশের বাজেট। বাজেটের প্রতি জনগণের আগ্রহ আস্থা বাস্তবায়ন ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের সুখ দু:খের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বাজেটকে জনগণের সামনে আনতে হবে। বাজেটে এখনো মাঠপর্যায়ের চিন্তা চেতনার প্রতিফলন অনুপস্থিত। বাজেটকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিাহতামূলক হিসেবে বাস্তবায়ন দেখছে না জনগণ। মাঠপর্যায় থেকে বাজেটের চাহিদা পূরণের কথা আছে। বাস্তবে সেভাবে আমাদের দেশে বাজেট তৈরী হয় না। বাজেটকে জনবান্ধব ও গণমুখী করার জন্য দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ব্যক্তি প্রতিষ্টানের সুপরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। সমাজের সুশীল ব্যাক্তি প্রতিষ্টানের সাথে পরামর্শ ও সুপারিশ না থাকার ফলে বাজেট ঘোষণার সাথে সাথে বাজেট নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। কৃষিবান্ধব দেশে কী ধরনের বাজেট পেশ ও বাস্তবায়ন হওয়া চায় সেটা রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। কৃষকের নিরাপত্তা বিধান বাজার অর্থনীতির শৃঙ্খলা আর উন্নয়ন অগ্রগতি সামনে রেখে বাজেট পেশ করা দরকার। গতানুগতিক বাজেট পেশ ও বাস্তবায়ন আমজনতার কোনো কল্যাণে আসছে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান উন্নয়ন আগ্রগতি সামনে রেখে বাজেটকে গণমুখী করতে হবে। বাজেট পেশের ফলে আমমানুষের যেনো ভোগান্তি বৃদ্ধি না পায় সেদিকে রাষ্ট্রকে খেয়াল রাখতে হবে। ধনী ও ব্যবসায়ীরা যাতে শোষণের মাত্রা বাড়াতে না পারে বাজেটে সে চিন্তার প্রতিফলন থাকা চায়। বাজেটকে লুটপাটের কেন্দ্রবিন্দু থেকে রক্ষা করতে হবে। বাজেট প্রস্তাব, অনুমোদন, বাস্তবায়ন সবই যেনো আমজনতার উদ্দেশ্যে হয়। দুর্নীতি আর লুটপাট যেনো বাজেটের কারণে বৃদ্ধি না পায়, সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট পেশ ও পাশ চায় দেশের জনগণ।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply