১৯ মার্চ ২০২৪ / ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:১০/ মঙ্গলবার
মার্চ ১৯, ২০২৪ ১২:১০ অপরাহ্ণ

নীতি নৈতিকতার পরাজয়

     

মাহমুদুল হক আনসারী
নীতি ও নৈতিকতা দু’টি শব্দ ব্যাপক অর্থ বহন করে। ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজে কিছু না কিছু নীতি ও নৈতিকতা থাকা আবশ্যক। ব্যাক্তি, পরিবার, প্রতিষ্টান ও সমাজে আদর্শিকভাবে নীতি আর নৈতিকতা বিলুপ্ত হলে সেসব প্রতিষ্টান রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। নৈতিক আদর্শ অথবা কতিপয় চরিত্র গুণাবলী না থাকলে প্রতিষ্টান সমাজ বা রাষ্ট্র টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। আমরা যে দেশে বসবাস করছি সে দেশের ব্যাক্তি পরিবার সমাজে কী পরিমাণ নীতি নৈতিকতা লালন পালন করছি সে বিষয়ে আলোকপাত করতে যাচ্ছি। ব্যাক্তি, পরিবার সবখানে একটা নীতি, আদর্শ ও নৈতিকতা থাকা চায়। আরো থাকা চায় সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। মানুষ গড়ার প্রতিষ্টান, কারিগর তাদেরও নৈতিকতা থাকা চায়। আমরা বই পুস্তকে মনিষীদের লেখাতে নৈতিক মূল্যবোধ, চরিত্র, আলোকিত আদর্শের কথা পড়েছি। সে নীতি নৈতিকতা এখন পুস্তকেই শোভা পাচ্ছে। যারা এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের রপ্ত করাবেন তাদের কাছেও ওইসব বিষয় অনুপস্থিত। একজন শিক্ষার্থী নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্টানে পদচারণা করলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী শিক্ষকের নিকট থেকে সে শিক্ষা পাচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে অনৈতিক কর্মকান্ড ও চরিত্র ধারণ করে পশুর আচরণ নিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করে ছাত্রত্ব শেষ করছে। ফলে তার জীবন ধ্বংস, সে সাথে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে করছে কলুষিত। এভাবে সমাজের প্রতিটি শাখা প্রশাখা এখন নৈতিকতার পরাজয়ের শেষ প্রান্তরে পৌঁছেছে। সমাজের কোনো সেক্টরে নীতি আদর্শ মূল্যবোধের অবস্থান নেই বলা যায়। দোকান থেকে বাজার, মার্কেট, ক্রেতা, বিক্রেতা নেই কোনো ভালোবাসা আর আদর্শিক নৈতিকতা। কে কাকে কী পরিমাণ ঠকিয়ে ধোঁকা দিয়ে মিথ্যা ছলচাতুরীর মাধ্যমে অর্থ কব্জ করা যায় সেটায় এখন আমাদের অন্যতম চরিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে। একটা পণ্যের কী পরিমাণ ন্যায্য মূল্য সেটা কম বেশী সব ক্রেতার ধারণা থাকে। দেখা যায়, বিক্রেতা ১০০ টাকার একটা পণ্যের মূল্য হাঁকালো এক হাজার টাকায়। তাহলে এটাকে পণ্যের ন্যায্য মূল্য হিসেবে আখ্যায়িত করবেন, না কি ডাকাতি বলবেন। এভাবে সব মানুষ কোনো না কোনো খানে অনৈতিকভাবে প্রতারণার শিকার। সমাজের কোথাও অথবা কোনো সেক্টরে নীতি নৈতিকতার আদর্শ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে কার চেয়ে বেশি টাকা আয় করবে সেটায় এখন আমাদের অন্যতম টার্গেট। বৈধ, অবৈধ, হালাল, হারাম কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। যেভাবেই হোক অর্থ চাই। সে অর্থের উৎস যেখান থেকেই হোক কোনো সমস্যা নেই। মাদক উৎপাদন, মাদক পাচার, বেঁচা বিক্রি সে তো সকলেরই জানা এসব অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড। এসব মাদকের উৎপাদন বেঁচা বিক্রি ও সেবন জঘন্যতম অপরাধ। একটি সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করতে মাদকেই যথেষ্ট। সেটা জানার পরও যারা এসব কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত তাদের কী পরিণতি আর কী ধরনের বিচার ও শাস্তি সেটা রাষ্ট্রীয় আইনেই বলা আছে। আমার কথা হচ্ছে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে যারা জড়িত তাদের পরিচয় দেখলে পাওয়া যায়, তারা একটি নির্দিষ্ট ধর্ম লেবাস ব্যবহার করে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এসব লোক ধর্ম কর্মে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। ধর্মের আবরণে অবৈধ অনৈতিক অপকর্ম সেটা যেন অভ্যাসে পরিণত। ধর্ম যেখানে নীতি নৈতিকতার প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল সেখানে উল্টোটা সমাজ দেখছে। যাদের থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ নীতি নৈতিকতা গ্রহণ করার কথা ছিল তাদের কারো কারো অনৈতিক কর্মকান্ডে স্বয়ং ধর্ম পর্যন্ত এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্ম রক্ষা করতে পারছেনা ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে। ধর্ম শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ। আর সমস্ত কাজকর্মে অনৈতিকতায় ডুবে আছে পুরোসমাজ। তাহলে এ সমাজের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সমস্ত শাখা প্রশাখায় অনৈতিকতায় নিমজ্জিত। তাহলে নৈতিকতা কোথায় গেল। নৈতিক মূল্যবোধ আর চরিত্র এভাবে যদি সমাজ থেকে হারিয়ে যায় তাহলে এসমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী ধারণ করে বাঁচবে সেটায় এখন স্বল্প সংখ্যক আলোকিত আদর্শিক মানুষের ভাবনা। সমাজের একেবারে নি¤œস্তর থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় এখন অনৈতিকতায় ভরপুর। পৃথিবীর কোনো দেশ বা জাতি এভাবে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে আমার জানা নেই। সমস্ত দেশ ও জাতির একটা চরিত্র নৈতিকতা ও মূল্যবোধ দেখতে পাওয়া যায়। দেশাত্মবোধ, মাতৃবোধ মূল্যবোধের প্রতি নুন্যতম একটা চরিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জন্মের অর্ধশত বছর অতিক্রান্ত হলেও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের কোন অগ্রগতি দেখছিনা। ব্যবসা থেকে রাজনীতি পর্যন্ত মূল্যবোধের অবক্ষয়। শিক্ষা ,সংস্কৃতি, ধর্ম সবকিছু আজ কলুষিত। আপন ও দলীয় স্বার্থে অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অপরের ক্ষতি ও ধ্বংস কোন ব্যাপার নয়। আধিপত্য বিস্তার ক্ষমতার লালসায় সবধরনের অনৈতিক উশৃংখল আচার আচরণ এ জাতির পক্ষে সম্ভব। তাই আমরা করছি ও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। দেখায় দেখায় একে অন্যের নিকট থেকে এসব অভ্যাসে গড়ে উঠছে পরিবার ও সমাজ। শিষ্টাচার ,ভদ্রতা,ন¤্রতা অন্যের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যশীল আচরণ বিলুপ্তির পথে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত এখন অনৈতিকতায় দিশেহারা সমাজ। দেশের প্রচলিত শিক্ষা আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় চরিত্রের কী ধরনের পরিবর্তন আনবে সেখানেও আস্থা রাখতে পারছেনা স্বল্প সংখ্যক আলোকিত গোষ্ঠী। এভাবে যদি নীতি নৈতিকতায় সমাজ রাষ্ট্র হারিয়ে যায় বেশিদিন দেশের শান্তি শৃংখলা অগ্রগতি থাকবেনা। সরকারী বেসরকারী ব্যক্তি থেকে পরিবার ও রাষ্ট্র পর্যন্ত সবখানে নীতি নৈতিকতার লালন পালন ও প্রতিষ্ঠা থাকতে হবে। এ কয়েকটি শব্দকে বাদ দিয়ে কোনো অবস্থায় সুশৃংখল ও আদর্শিক সমাজ আশা করা যায়না। সবচেয়ে বেশি মূল্যবোধের অবক্ষয় ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যেখান থেকে মূল্যবোধের চর্চা অনুসরণ আর প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা ছিলো সেখানে এখন চরমভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে নীতি নৈতিকতা বিরোধী পথ ও পন্থা পরিহার করতে হবে। তাহলে হয়তো পর্যায়ক্রমে পরিবার ও সমাজ আলোর পথ দেখতে পারে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply