২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:৫৯/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

     

আজাদ জয়
কৃষক, মজুর, শ্রমিক যাদের নিরলস পরিশ্রমে বাংলাদেশ উন্নয়ন মাপকাঠি ছুয়েছে, তাদের মধ্যে দেশের কৃষকরা সব থেকে অবহেলিত। দিন মিজুর নিজেদের শ্রমের মুল্য নির্ধারন করে। শ্রমিকেরা পারিশ্রমিক বাড়াতে আন্দলোন করতে পারে। কিন্তু কৃষক বছরের পর বছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, শীতের কষ্ট মাথায় নিয়ে যারা দেশ বাসির জন্য খাদ্য উৎপাদন করে, দেশকে খাদ্যপণ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করে যাচ্ছে আজ তারাই বাংলাদেশে সব থেকে অবহেলিত গোত্র, চাষার গোত্র।

চাষিদের বোর ধান উৎপাদন খরচ নিয়ে আলোচনার আগে কিছু কথা যে না বললেই নয়, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরে মুল অর্থকরি ফসল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল পাট, আঁখ, তুলা, তামাক এবং ধান। লাভের পরিমান উৎপাদন খরচ ও বাজার না থাকায় পাট চাষ প্রায় বন্ধ। ভাল দেশিও তুলার চেয়ে টেক্সটাইল মার্কেটে কম দামে নিম্নমানের বিদেশি তুলায় আগ্রহ অসিম। তাই তুলা চাষ বাজার হারাতে হারাতে বিলিন হয়ে গেছে। তামাক চাষের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে ভাবে সুশীলদের আন্দোলন চলছে তাতে তামাক চাষ বন্ধ হবার পথে। অন্যদিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি আমদানির কারনে আঁখ চাষে আর কোন লাভ আসে না। আমদানির কারনে দেশি চিনি শিল্প এখন লাভের তলানিতে। রইলো শুধু ধান, ধান চাষে কৃষকরা যে লোকসানে পড়ছে তা এখন পত্র পত্রিকা খুললে দেখা যায়।

বোর ধানের পেছনে কৃষকের শ্রম ও ব্যায় বছরে সব থেকে বেশি হয়। চাহিদা বেশি থাকার কারনে এই ফসলটার উপরে লক্ষ লক্ষ কৃষকের বছরের আয় নির্ভর করতো। ফলন ভাল কিন্তু সময় শ্রম ও ব্যয় বেশি বলে মহাজনরা এই ফসলে ভাগ কম নেয়। আর কোথায় কিরকম জানি না তবে আমাদের উত্তরাঞ্চলে প্রায় হালকা একপ্রকার চুক্তিতে কৃষকের কাছে জমি ছেড়ে দেন মহাজনেরা। অথচ বোর ঘরে তুলে মহাজনের ভাগ পরিশোধ করার পর খুব একটা টাকা থাকে না কৃষকের হাতে, যা পরবর্তি ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যায় করতে পারে। মোটা চাল আমদানির কারনে গত সাত আট বছর থেকে বোর ধানের পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছে না কৃষকরা।

ধান লাগালেই ধান হয় না। এর পেছনে প্রচুর পরিশ্রম ও খরচ আছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও দেশের সিংহভাগ মানুষের ধারনা নেই ধান উৎপাদনে মাঠ পর্যায় প্রকৃত খরচ কত। দেশের অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিকে কৃষক ও কৃষি বিষয়ে বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখেছি। তারা হয়তো মনে করেন, চাষারা কারন ছাড়াই অহেতুক হাঙ্গামা করছে। দেশে সব মাঠে পর্যাপ্ত ধানের উৎপাদন হয়, তারপরও কেন এরা অভাব অভাব করে, এরা আর কি চায়, এদের কারনেই হয়তো চালের দাম বাড়ছে।

সত্যি বলতে, দেশের তাদের ধারনা সম্পুর্ণ ভুল। তারা যে চাল খায় সেটা চিকন চাল। বাজারে যেটার দাম আগাগোড়াই বেশি। দাম বেশি হবার কারন হচ্ছে, দেশের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এসব ধানের আবাদ হয়, অন্য কোথাও হয় না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় চিকন ধানের দামটাও সব সময় বেশি থাকে। সামর্থ্যের কারনে চিকন চাল সবাই কিনতে পারেনা। যারা এই চাল কিনতে পারেনা তাদের সংখ্যা এইদেশে সবথেকে বেশি, বলা যায় দেশের নব্বই শতাংশ মানুষ। সে সব মানুষের খাদ্য হচ্ছে মোটা চাল। যা বোর ধান থেকে সংগ্রহ করা হয়। নিম্ন আয়ের মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটায় কম দামের মোটা চাল, বোর ধানের চাল।

বোর ধানের দাম কম কিন্তু তা উৎপাদন খরচ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় মাঠ পর্যায়ের চাষিদের। এবার একটু জেনে নেই এই ধান উৎপাদনে আসলে কত খরচ হয়। তাহলে পাঠক বুঝতে পারবে কেন কৃষকরা ধান চাষে প্রতিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বোর ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।

বাংলা বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ থেকে তিরিশ তারিখের মধ্যে বিজতলা তৈরি করে বিজ ছিটাতে হয়। বিঘা প্রতি বোর বীজ লাগে ৩০০টাকা থেকে ৩৮০ টাকার। সুস্থ চারা তৈরি করতে তিরিশ দিন সময় লাগে যার জন্য পানি ও বিষ প্রয়োগে খরচ হয় বিঘা প্রতি আরো ১০০০ টাকার।

বোর ধানের জন্য জমি তৈরি করতে এক বিঘা জমিতে দরকার পাচশ কেজি গোবর সার, মুল্য ১২০০ টাকা। সার জমিতে আনা এবং ছিটানো খরচ ৫০০ টাকা। সার পচানোর জন্য জমিতে চাষ ও পানি দিতে হয়, সেখানে পানি ২০০ টাকা এবং পাওয়ারটিলারে চাষ খরচ ৫০০ টাকা। মাটি পাকাতে সময় লাগে সাতদিন। সাতদিন পর আবার চাষ ৫০০ পানি ২০০ টাকার দিতে হয়। তার দুই থেকে তিন দিন পরে রাসায়নিক সার পটাশ পনেরো কেজি ১৮০ টাকা, টিএসপি পনেরে কেজি ৩৬০ টাকা, ইউরিয়া পাঁচ কেজি ৮০ টাকা। এর পর সাত দিন অপেক্ষা। সাতদিন পর আবার পানি ২০০ টাকা চাষ ৫০০ টাকা। বিজ তলা থেকে চারা এনে জমিতে রোপনে বিঘা প্রতি ১৬০০ টাকা শ্রমিক মজুরী দিতে হচ্ছে। পুরা ফসলে নুন্নতম ১২ বার পানি সেচ দিতে প্রতিবার ৩০০ টাকা হিসেবে মোট ৩৬০০ টাকা পুরো বোর মৌসুমে খরচ আসে। আবহাওয়া প্রতিকুল হলে বৃষ্টির পানি এখানে খরচ কিছুটা কমিয়ে দেয়।

বোর ধান রোপনের দশম দিনে দশ কেজি ইউরিয়া ১৬০ টাকার, সাথে ঘাস মারা বিষ দেড় পেক বা দেড় কেজি ১২০ টাকা। পচিশ দিন পরে নুন্যতম তিরিশ কেজি ইউরিয়া সার ৪৮০ টাকা তার সাথে এক কেজির এক প্যাক সালফার ৪৮০ টাকা। এর সাত দিনের মধ্যে আশি লিটার পানির সাথে মাজরা পোকা মারা বিষ- পনেরো গ্রাম, সাথে মেশাতে হবে পাতার পোকার বিষ- একশ মিলি, ছত্রাক নাশক- একশ গ্রাম মোট খরচ ৫৩০ টাকা। তার পনেরো দিনের মাথায় দানা বিষ প্রয়োগ করতে হবে খরচ বিঘা প্রতি দুই কেজি ৩০০ টাকা।

এর ঠিক পনেরো থেকে বিশ দিন পরে আবার মাজরা পোকা মারা বিষ- পনেরো গ্রাম তার সাথে মেশাতে হবে পাতার পোকার বিষ- একশ মিলি, ছত্রাক নাশক- একশ গ্রাম খরচ ৫৩০ টাকা। ধানের শীষ বের হবার পূর্বে আবারও মাজরা পোকার বিষ- পনেরো গ্রাম সাথে মেশাতে হবে পাতার পোকার বিষ- একশ মিলি, ছত্রাক নাশক- একশ গ্রাম মোট খরচ ৫৩০ টাকা। ( এই সময়টায় অনেক কৃষক খরচ কমাতে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে না। ) গাছের রং হলুদ বর্ণের হলে বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি ইউরিয়া পাঁচ কেজি ডেপ মোট ২৫ড় টাকার দেওয়া প্রয়োজন গাছকে সবুজ ও স্বতেজ রাখার জন্য অনেকে দেয় অনেকে দেয় না।

ধানের শীষ বের হয়ে, হেলে যাওয়ার আগে ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হয় ব্লাস্ট প্রতিষেধক জিল- একশ গ্রাম কার্বাডাজেম- একশ গ্রাম সঙ্গে যে কোন গন্ধ যুক্ত তরল বিষ- একশ মিলি খরচ ৪২০ টাকা। শীষ হেলে যাওয়া থেকে পাক ধরার আগে আবারও মাঠে ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হয় ব্লাস্ট প্রতিষেধক হিসেবে জিল- একশ গ্রাম কার্বাডাজেম- একশ গ্রাম যে কোন গন্ধ যুক্ত তরল বিষ- একশ মিলি খরচ ৪২০ টাকা।

এরপর আসে ধান কেটে ঘরে তোলার পর্ব। ধান কাটা মাড়াই ৬০০০ টাকা বিঘা, স্থান বিশেষে খরচ বেড়ে যায়। উপরক্ত পুরো ট্রিটমেন্টে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন ৪০ থেকে ৪৪ মন। প্রতি বস্তা ২ মনের, বিঘা প্রতি ফলন ২০ বা ২২ বস্তা দাঁড়ায়। বর্তমানে হাটে প্রতিবস্তা ধান ১০৫০ টাকা। সে হিসেবে কৃষক এখন বিঘা প্রতি ২১০০০ থেকে ২৩১০০ টাকা দাম পাচ্ছে। কিন্তু সম্পুর্ণ খরচ হিসেব করলে দেখা যায় বোর ধানের উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি ২১২২০ টাকা। তাহলে লাভ হলো কেমন করে। হ্যা কৃষকরা উপরের বিবরনের সমস্ত খরচ বহন করে বলে আমরা খাদ্যে সমৃদ্ধ।

তবে উল্লেখ করতে হয় পানি ও চাষ ছাড়া রাসায়নিক সার এবং বিষের একই ট্রিটমেন্ট কৃষকেরা দুই বিঘা জমিতে ব্যবহার করে। যাতে তাদের পর্তা পড়ে এবং ভাল ফসল লাভে খুব একটা পার্থক্য হয়না। চার থেকে পাঁচ মাস গাধার মত খেটে দুই বিঘা জমির ফলন বিক্রি করে একজন কৃষক সর্বচ্চ ৪৬০০০ টাকা পায়। তাতে তারা নিজেদের খরচ এবং মহাজনের পাওনা শোধ করে, আবারও মাঠে পরবর্তি ফসল ফলাতে প্রস্তুতি নেয়। তবে নিজেদের জন্য কোন অর্থ সঞ্চয় করতে পারে না। মাসের হিসেবে এই টাকা খুবই সামান্য। জমি খাটিয়ে যেমন মহাজনেরা লাভ করতে পারে না, তেমন শরীর খাটিয়ে কৃষকরাও লাভ করতে পারছে না। পর্যাপ্ত অর্থ হাতে না থাকার ফলে সারাজীবন তাদের টানাটানি ও ধার দেনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বেশির ভাগ কৃষক দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পড়ে সমস্ত লাভ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় প্রথম সপ্তহে।

তারপরও তারা আবার আশায় বুক বাঁধে। জমিতে হাল দেয় বাংলার সোনার কৃষক বাংলার মাটিতে সোনার ফসল ফলায়। ঝড় ঝঞ্ঝা শীলাবৃষ্টি জাতিয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলেও তাদের মনবল নষ্ট হয়না। তারা হচ্ছে সোনার বাংলার সত্যি কারের সোনার মানুষ, দেশের আসল নাগরিক। অথচ প্রতিবার লোকশানের বোঝা বইতে বইতে এখন ধান আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে কৃষক।

এদিকে আমলারা অনেকটা না বুঝেই কারনটা রাইসমিল মালিকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। চাপটা এমন লাভ করতে না পারলেও যেন কিডনি বিক্রী করে তাদের ব্যবসা করতে হবে। অথচ আসল ঘটনা হচ্ছে অসময়ে দেশে মোটা চালের আমদানির অনুমোদন। সেই সময়ে দেশে পর্যাপ্ত ধানের ফলন থাকার পরও চাল আমদানি হচ্ছে। আমদানি কৃত চালের সাথে প্রতিযোগিতায় দেশিয় রাইসমিল মালিকরা মার খাচ্ছে। বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ তারা ধান কিনছে না। কিনলে সে ধান ছাটাই করে বাজারে বিক্রী করতে পারছে না। লাভ না করতে পারলে কেন তারা বাজারে নামবে, এতে করে বাড়ছে তাদের ঋণের বোঝা যা মিল বিক্রী করেও পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এই সুযোগে কিছু মধ্যসত্ব ভোগী ব্যবসায়ী বা দালাল হাট থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদ করছে। পরে তারা বিভিন্ন রাইসমিলে ব্যবসায়ীক সুবিধা নিয়ে উচ্চ মুল্যে সরবরাহ করছে। দালালরা লাভবান হচ্ছে কিন্তু কৃষক ও মিলার দুপক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারি হিসেবে দেশের মানুষের মাথাপিচু আয় হিসেব করলে দেখা যাবে কৃষককরা বছরে সমপরিমান টাকা লোকসানে আছে।

বাংলাদেশে যে কটা সুগার মিল রয়েছে সেগুলোর জমি গুলো দখল মুক্ত করে আঁখ চাষ করলে, দেশের চিনির চাহিদা মিটবে, চিনি কম দামে পাওয়া যাবে, আবার বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। প্রয়োজন শুধু একটু আধুনিকায়নের। কিন্তু সেদিকে কি কারও নজর আছে? দেশের কিছু কিছু জায়গায় এখনও পাট চাষ হয়। তবে তা এনজিও সংস্থা গুলোর শোরুমের পণ্য তৌরির জন্য, এনজিও গুলোর নিজস্ব তত্বাবধানে। অতিরিক্ত প্রয়োজন মেটাতে তারা বিদেশ থেকে পাট আমদানি করছে। অথচ দেশের পাট গবেষনা চাষ বৃদ্ধির দিকে পাট কতৃপক্ষের কি কোন নজরদারি আছে? পৃথিবীর কোন দেশ তামাক ব্যবহার বন্ধ করতে পারেনি, দেশে তামক বন্ধে সুশীলরা আন্দলোনে নেমেছে, জানি না তামাক চাষিরা সুশীলদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিল। পুরো বিষয়টা দেশিয় রপ্তানি পণ্য তামাক উৎপাদন বন্ধ করে, বিদেশি তামাক আমদানি ও ব্যবহারে অগ্রাধিকার। বিনা পয়সায় এদেশে যখন কিছু হয় না, তখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব আন্দলোনের পেছনে কারা এবং কোন টাকা খরচ করছে?

নানা সমস্যার কারনে পাট, আঁখ, তামাকের মত ধান উৎপাদন এখন বহু সমস্যায় জরজরিত। সার পানির খরচের চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে অসময়ে চাল আমদানি। ধান চাষও হয়তো পাট, আঁখ, তুলা চাষের মত লোকসানের কারনে কয়েক বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে। যেভাবে কৃষকরা ধান চাষে লোকশান পোহাচ্ছে, তাতে এক সময় ধান চাষ ছেড়ে সবাই জমিতে আম লিচু কাঠাল গাছ লাগাতে শুরু করবে। উত্তরাঞ্চলের বহু জায়গায় স্থানিয়রা এখন তাই করছে। এই পরিস্থিতি থাকলে একটা সময় এমন আসবে, যখন অন্য দেশ ভিক্ষা দিলে বাংলাদেশের মানুষ খাবে, নয়তো না খেয়ে থাকবে। কারন রপ্তানি করে বৈদেশিক অর্থ উপার্যনের মত দেশে কোন কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply