২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:২০/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ৯:২০ অপরাহ্ণ

মা মানেই ভালোবাসা

     

আজহার মাহমুদ
মা’ অতি ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর গুরুত্ব এবং মযার্দা কতটুকু তা বলে শেষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন – তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারীনি। গর্ভধারণের ন্যায় জটিল এবং মায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থানে থেকে এ সংজ্ঞাটি বিশ্বজনীন গৃহীত হয়েছে। মা, কখনো তা গর্ভধারিণী, জন্মদাত্রী আবার কখনো জননী কখনোবা মাতা। মাকে নিয়ে যতই সমার্থক শব্দ থাকুক না কেন মা ডাকের একটিই অর্থ, আর তা হচ্ছে পৃথিবীর সকল শান্তি একটি জায়গায় বন্দি। আর সবশেষ, ভালোবাসার অপর নাম মা
কিন্তু এমন দয়ালু এবং মযার্দাবান মানুষটিকে আমরা কতটা সম্মান এবং ভালোবাসা দিচ্ছি? আমাদের যে মানুষটি দীঘর্ ১০ মাস ১০ দিন তার গবের্ ধারণ করে প্রসব যন্ত্র্রনা সহ্য করে এই সুন্দর পৃথিবীতে মুক্তভাবে শ্বাস নিতে দিচ্ছে, আমরা সেই মানুষটিকে বিনিময়ে কি দিচ্ছি? আমরা বিনিময়ে আসলে কিছুই দিতে পারব না। কারণ মায়ের ঋণ কেউ শোধ করতে পারে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু আমাদের যতটুকু মাকে দেওয়ার কথা ততটুকুই কেউ সঠিকভাবে মাকে দিই না। তার মানে এই নয় যে, টাকা কিংবা ভালো খাবার দিলেই মায়ের প্রতি দায়িত্ব শেষ। টাকা কিংবা ভালো খাবার কোনো মা কখনো চায় না। আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি মা আমাদের জন্য কি করে বা মূলত আমাদের কি দেয়। কয়জন মা তার সন্তানকে ভালো খাবার কিংবা প্রচুর টাকা দিচ্ছে। কয়জন মাতার সন্তানকে দামি গাড়িতে করে দামি শপিংমলে নিয়ে যাচ্ছে। না। এসব কিছুই সব মা দিতে পারেন না। কিন্তু এসব কিছু মায়ের ভালোবাসার কাছে মামুলি এবং তুচ্ছ। কারণ মা যা দিচ্ছে, তা পৃথিবীর কেউ কখনোই দিতে পারবে না আমাদের। আমরা শপিংমলের দামি কাপড়টি কিংবা রেস্টুরেন্টের দামি খাবারটি পরে আবার পাবো। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা একবার হারিয়ে ফেললে তা কখনোই ফিরে পাওয়া সম্ভব না। কারণ পৃথিবীতে একমাত্র সন্তান আর মায়ের সম্পকর্ হয় ভালোবাসার। যে সম্পকের্ রয়েছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা। যাই হোক, মূল কথায় আসি, প্রতিটি সন্তান জানে আমাদের মা আমাদের জন্য কতটা কষ্ট করে এবং কতটা ভালোবাসে। কিন্তু আমার প্রশ্ন আমরা আমাদের মাকে কতটা ভালোবেসেছি? উত্তরটা অনেক ধরনের হতে পারে। অনেকে বলবে, অন্তরে মায়ের জন্য প্রচুর ভালোবাসা রয়েছে কিন্তু কখনো প্রকাশ করিনি। এমনো অনেকে রয়েছে। কিন্তু মা তো তার ভালোবাসা অন্তরে রেখে দেয় নি, তিনি তার ভালোবাসা আমাদের দিয়ে দিচ্ছেন নিঃশ্বাথর্ ভাবে। আমরা কেনো মায়ের জন্য ভালোবাসা অন্তরে রেখে দিব। আমরা এমনো কিছু সন্তান রয়েছি যারা মাকে ভালোবাসতে পারি না আবার কষ্ট দিতে জানি। আমরা যখন বাইরে গিয়ে বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দেই তখন মা ডাকলে অনেকেই বিরক্ত বোধ করি। কিন্তু একবারও চিন্তা করি না মা কেমন আছে, সে কার সাথে কথা বলছে, তার কি কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না। আমরা এসব একটুও ভাবি না। আমরা এমনিতে সমাজের সামনে লোক দেখানো মায়ের প্রতি ভালোবাসা অধিক পরিমাণে দেখায়। ‘মা দিবস’ আসলে লাফিয়ে লাফিয়ে বলি মা আমি তোমাকে ভালোবাসি। ফেসবুকে মায়ের জন্য ভালোবাসার বাণী লিখে উড়িয়ে ফেলি। কিন্তু ভেতরে আমরা কি করি সেটা আমাদের চাইতে ভালো কেউ বলতে পারবে না। আমরা বন্ধুবান্ধবের সাথে বড় বড় রেস্টুরেন্টে গিয়ে নামিদামি খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি মা তখন কি খাচ্ছে, কার সঙ্গে খাচ্ছে, কিভাবে খাচ্ছে। না, সত্যি বলতে কখনোই এমনটা ভাবিনি আমরা কেউ। আমরা অসুস্থ হলে মা আমাদের জন্য পারে না জীবনটা দিয়ে দিতে। তখন মা আমাদের জন্য কি করে কিংবা কেমন করে সেটা আমরা ভালো ভাবেই জানি। কখনো খেলায় কিংবা অন্য কোথাও আহত হলে মায়ের অবস্থা কেমন হয় সেটাও আমরা নিজেরাই দেখেছি। কিন্তু আমরা মায়ের অসুস্থতার সময় কি করেছি? কখনো জানতে চেষ্টা করেছি ‘মা তুমি কেমন আছো?’। কখনো কি জানতে চেষ্টা করেছি ‘মা তোমার শরীর ভালো আছে?’ আমরা কিন্তু সামান্য মাথাব্যথা হলেও মাকে এসে বলি, ‘মা আমার ভালো লাগছে না।’ কিন্তু মায়ের গুরুতর অসুখের কথাও আমাদের কখনো বলে না কিংবা আমরা জানতে চেষ্টা করি না। শরীরে অসুস্থতা নিয়েও রান্না করে যায় আমাদের পছন্দের এবং প্রিয় খাবারটি। ঘরের সব কাজ নিশ্চুপভাবে করে যায়। বুঝতে দেয় না কষ্ট হচ্ছে। মা কখনোই বলে না আর পারছে না। আর আমরা কয়জনেই বা বুঝতে চেষ্টা করি। আসলে এটায় আমাদের নিয়ম। আমরা যখন বুঝতে শিখি কিংবা একটু বড় হয়ে যায় তখন আর মাকে মূল্যই দিই না। মায়ের সাথে পরামশর্ কিংবা কোনো ধরনের কথা শেয়ারও করি না। আমরা তখন নিজেরা একটু বেশিই বুঝি। আমরা এরপর মায়ের ভুল ধরতে শুরু করি। মাকে ধমক দিতে শুরু করি। আমরা বাবাকে যেমন তেমন মান্য করলেও মাকে কখনোই মান্য করি না। শুনতে খারাপ লাগলেও এগুলোই আমাদের চরম অপ্রিয় সত্য। মা আমাদের কিছু বারণ করলেও আমরা সেটা তেমন তোয়াক্কা করি না। আমরা নিজেদের মতো নিজেরাই চলি। আমরা একবারও চিন্তা করিনা আমাদের যে মানুষটি শূন্য থেকে এই পযাের্য় আসতে সাহায্য করেছে তার জন্য কিছুই করতে পারি না। এটায় আমাদের অদ্ভুত ভালোবাসা। এদিক থেকে চিন্তা করলে আমরা নিজেরাই বিবেকহীন এবং অসৎ। আমাদের সমাজে এমনও অনেক মানুষ রয়েছে যারা আজ মাকে ভালোবাসতে চাইলেও পারছে না। কারণ আজ তাদের মা নেই। যখন ছিল তখন হয়তো সেই সুযোগটি পাইনি। আজ সময় এসেছে কিন্তু মা নেই। এমনো হাজারো মা হারা সন্তান এই সমাজে রয়েছে। কিন্তু যাদের আছে তারা মাকে কতটুকু সম্মান কিংবা ভালোবাসা দিচ্ছি। সমাজে এমনও কিছু সন্তান রয়েছে যারা তার জন্মদাত্রী মায়ের শরীরে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। হয়তো ১০ মাস ১০ দিন গবের্ ধারণ করার বিনিময়ে এই সম্মানটুকু দিয়েছে তার গবর্ধারিণী মাকে। আমার কথা হচ্ছে সম্মান দিতে না পারলেও অসম্মান কেন করব মাকে। কোন অপরাধের বিনিময়ে মায়ের ওপর আঘাত করব। শারীরিক কিংবা মানসিকসবভাবেই মাকে আমরা অনেকেই এখন আঘাত করে থাকি। কিন্তু বুঝে আসে না সেই মা গুলোর অপরাধ কি ছিলো। ১০ মাস ১০ দিন গবের্ রাখাটা অপরাধ, প্রসব ব্যথা সহ্য করে সন্তানকে জন্ম দেওয়া অপরাধ, শিশু কালে আমাদের লালন পালন করা ছিলো অপরাধ, নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়ানোটা ছিলো অপরাধ। হ্যঁা, এসবকিছু যদি অপরাধ হয়ে থাকে তবে মা চরম অপরাধী। আর যদি মা অপরাধী না হয়, তবে আমরা চরম অপরাধী। তবে মায়ের কাছে আমরা অপরাধী হলেও কি আর না হলেও কি। মা কখনোই আমাদের শাস্তি দেয় না। কারণ সন্তানের জন্য মায়ের মনে ভালোবাসা ব্যতীত আর কিছুই থাকে না। আমরা অপরাধ করলে মা সবসময় আমাদের ক্ষমা করে দেয়। মা শুধু চায় আমরা যেনো ভালো থাকি এবং সুন্দর থাকি। মা যদি না ফেরার দেশেও চলে যায় সন্তানের মঙ্গল কামনা সেখান থেকেও করবে। কারণ সে তো ‘মা’। মা চায় আমরা শুধু তাকে মা বলে ডাকি আর একটু ভালোবাসি। কিন্তু আমরা মাকে ‘মা’ ডাকার মতো সময়ও আজকাল পাই না।
একবার চিন্তা করে দেখিতো আমরা দিনে কয়বার মাকে ‘মা’ বলে ডেকেছি। ফলাফল খুবই নিম্ন হবে। এটা অসম্ভব কিংবা অবাস্তব কিছু নয়। আমরা যতটাই বড় হচ্ছি ততটাই মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এমনও সন্তান রয়েছে যাদের মা আজ বৃদ্ধাশ্রমে রাত কাটায়। হায়রে মা! ক্ষমা করে দিও তাদের। যেদিন তুমি থাকবে না সেদিন হয়তো তোমাকে অনেক অনেক খুঁজবো আমরা, কিন্তু পাবো না। আজ পেয়ে হারিয়ে ফেলছি মাকে। তবু জানি সন্তান মাকে কষ্ট দিয়ে থাকলেও মা সেটা ভুলে যাবে এবং সন্তানকে ক্ষমা করে দিবে। এটাই মায়ের নিয়ম। তবুও আজ বলতে চাই, ‘ক্ষমা করে দিও মাগো’। মা তোমায় সত্যি ভীষণ ভালোবাসি। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply